প্রেমিকার সাথে একবার দেখা করতে চান তামিলনাড়ুর প্রেমকান্ত

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ আগস্ট ২০২২, ১৬:৩৩

তামিলনাড়ু থেকে বাংলাদেশের বরিশালে এসেছেন প্রেমিক প্রেমকান্ত। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি
প্রেমের টানে ভারতের তামিলনাড়ু থেকে বাংলাদেশের বরিশালে এসেছেন প্রেমিক প্রেমকান্ত। এসে একবার দেখা করে কথাও বলেছেন প্রেমিকার সাথে। দেখা করতে এসে মার খেয়েছেন প্রেমিকার প্রেমিকের হাতে। থানায়ও থাকতে হয় একরাত।
এতো কিছুর পরেও প্রেমিকাকে হারাতে চাচ্ছেন না তিনি। প্রেমকান্ত অন্তত আর একবার হঠাৎ আড়ালে চলে যাওয়া প্রেমিকার সাথে দেখা করতে চান। যাকে বোঝাতে চান তার ভালোবাসার সততার কথা।
আর এ জন্যই তিনি বরিশালের বিভিন্ন জায়গায় প্রেমিকাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। দ্বারস্থ হচ্ছেন পুলিশ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মানুষের। যাদের সাহায্যে তিনি কোনভাবে একবার প্রেমিকার সাথে দেখা করতে চান। দেখতে চান প্রেমিকার বরগুনার তালতলীর গ্রামের বাড়িটি।
প্রেমকান্ত বলেন, আমার ভালোবাসা শতভাগ খাটি। আমি কোন কিছুর জন্য তাকে ভালোবাসিনি। আমি কোন ধরনের কোন নেশার সাথে জড়িত নই, আর আমি খারাপ মানুষও নই। সত্যিকারের ভালোবাসি বলেই সেই তামিলনাড়ু থেকে বরিশালে এসেছি।
তিনি বলেন, দীর্ঘ তিন বছরের প্রেমের সম্পর্কে বহু বার ভিডিও কলে কথা হয়েছে তার সাথে। এরপর বাস্তবে একবার দেখা করার জন্যই বরিশালে আসতে চাই। আমার ভালোবাসার মানুষটির গাইড লাইন অনুসরণ করে অচেনা দেশ বাংলাদেশে আসি এবং অচেনা এই বরিশাল শহরে আসি।
তিনি বলেন, কলেজের পরীক্ষা শেষ করে এই বরিশাল শহরেই প্রথমবারের মতো আমার সাথে দেখা করে ভালোবাসার মানুষটি। তখন তিনি আমার বেশ প্রশংসাও করেছে, আমি দেখতে সুন্দর তাও বলেছে। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই মানুষটি আমার সাথে আর যোগাযোগ করছে না। কিন্তু কেন? যেখানে আমাদের দুই পরিবারের মানুষগুলোর মাঝে বিগত ভালো একটি সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো সেখানে লুকোচুরি কেন এমন প্রশ্ন তার।
তিনি বলেন, সেই গত ২৪ জুলাইয়ের পর থেকে হোটেল এরিনা, হান্ডি কড়াই, বঙ্গবন্ধু উদ্যানসহ বিভিন্ন জায়গায় দেখা হয়েছে। প্রথম দিকে তার বন্ধুরাও সাথে ছিলো। পরে দুইজন একটু একাকি সময় অতিবাহিত করতে কথোপকথনের জন্য ভালোবাসার মানুষটির কথায় অটোরিকশা করে নগরীর কাশিপুরের দিকে যাচ্ছিলাম।
কাশিপুর চৌমাথা এলাকা পৌঁছালে চয়ন হাওলাদার নামে একটি ছেলে হঠাৎ আমাকে মারধর করে। তখন আমার মনে হয়েছিলো হত্যার উদ্দেশ্যেই আমাকে মারধর করা হচ্ছে। ওই সময় আমাকে ভালোবাসার মানুষটি বুঝিয়েছে, চয়ন হাওলাদার খারাপ মানুষ তাও বলেছে। যদিও পরে বুঝতে পারি চয়নও আমার ভালোবাসার মানুষটিকে ভালোবাসে। তবে তা একপাক্ষিক।
তিনি জানান, এরপর হামলার বিষয়টি নিয়ে কোতোয়ালী মডেল থানায় গেলে তারা এয়ারপোর্ট থানায় পাঠায়। সেখানে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে আমার ওপর হামলার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরও পুলিশ হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনেনি। বরং তাকে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে বলেছে।
যদিও ওই সময় ভারতীয় হাই কমিশন থেকেও প্রেমকান্তকে চলে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছিলো কিন্তু তিনি মনকে কোনভাবে বোঝাতে পারেননি, তাই বরিশালে রয়ে গেছেন, আর একবার শুধু ভালোবাসার মানুষটির সাথে কথা বলার জন্য।
বাংলাদেশের আইন সম্পর্কে অবগত হয়ে তিনি বলেন, ভালোবাসার মানুষটির বয়স সাড়ে ১৭ বছরের মতো, এ মুহূর্তে আইন অমান্য করে আমি তাকে বিয়ে করতে চাই না। শুধু একবার তার সাথে কথা বলতে চাই। সে কি কারণে অভিমান করে হঠাৎ আমার সাথে যোগাযোগ করছে না তা জানতে চাই।
সেইসাথে আবেগী প্রেমকান্ত ধনী-গরীবের বিভেদ ভুলে ভালোবাসার মানুষের গ্রামের বাড়িও ঘুরে দেখতে চান। এজন্য তিনি বরগুনার তালতলীতে যেতে চান আর যাওয়ার জন্য সহযোগিতাও কামনা করেন।
এসময় তিনি তার প্রেমিকার নাম বললেও সেটি সংবাদে উপস্থাপন না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এতে ভালোবাসার মানুষটি আরো ক্ষিপ্ত হবে, তাকে কষ্ট দিতে চাই না বা সে সামাজিকভাবে হেয় হয় তাও চাই না। তবে দুঃখ একটাই আমার নাচ দেখে মুগ্ধ হয়েই তিনি আমার সাথে যোগাযোগ করে, আমাকে ভালোবাসতে শুরু করে।
তিনি দাবি করেন বরগুনার তালতলীর এক প্রভাবশালী লোকের কারণে ভালোবাসার সেই মানুষটির পরিবার তার সাথে দেখা করেনি, আবার পুলিশও তার ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। তবে তার কথাগুলো শুনেছে পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে এয়ারপোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কমলেশ চন্দ্র হালদার বলেন, ওই যুবক বৈধভাবে বাংলাদেশে আসে। তাকে নিরাপত্তার স্বার্থে থানায় আনা হলে তিনি পুরো ঘটনা খুলে বলেন। পরে ভারতীয় হাইকমিশনের সাথে যোগাযোগ করে ওই যুবককে গত পরশু দিন সকালে ঢাকার গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। সেখান থেকে নিজ দায়িত্বে বিমানযোগে ভারতে চলে যাওয়ার কথা তার।
তিনি বলেন, যার সাথে ওই যুবক তার সম্পর্কের কথা বলছে, তিনি অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় বিষয়টি হাইকমিশনের কর্মকর্তারা ওই ছেলেকে বাংলাদেশের আইন সম্পর্কে অবহিত করে বোঝান। এরপর তাকে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য বলেন, ছেলেটিও ভারতে চলে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করলে গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়।
আর এতসব কিছুর পরেও প্রেমকান্তের বিশ্বাস দেখা হলে হয়তো আবারো তার জীবনে ফিরে আসবেন তার প্রেমিকা। তাই নিজ দেশ ভারতের তামিলনাড়ুতে ফিরে যাওয়ার আগে প্রেমকান্ত আরেকবারের জন্য প্রেমিকার দেখা পেতে চান।