
মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি জুলফিকার আলীর বাসায় লাশ রেখে ঘুষের টাকা উদ্ধার করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী
পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের প্রধানপাড়ার দারুল ফালাহ দাখিল মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি জুলফিকার আলীর বাড়িতে লাশ রেখে অনশন করে ঘুষের টাকা উদ্ধার করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। চাকরির জন্য দেওয়া ঘুষের ১২ লাখ টাকার মধ্যে ছয় লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে অনশন প্রত্যাহার করেন স্বজন ও এলাকাবাসী।
ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসী জানায়, দুই বছর আগে জুলফিকার আলী একই এলাকার জাকিরুল ইসলামকে মাদ্রাসার লাইব্রেরিয়ান পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে তার বাবা দবিরুল ইসলামের (৫৫) কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নেন। দুই মাস আগে তার সভাপতির মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু বিভিন্নভাবে হয়রানি ও টালবাহানা করে সময়ক্ষেপণ করছিলেন জুলফিকার।
২০ দিন আগে জাকিরুলের বাবা জুলফিকারের কাছে টাকা ফেরত চাইতে বাড়িতে যান। তখন টাকা না দিয়ে লাঞ্ছিত ও মারধর করতে উদ্ধত হন জুলফিকার। সেইসাথে বাড়ি থেকে বের করে দেন। অপমান সইতে না পেরে বাড়ি এসে স্ট্রোক করেন দবিরুল। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন থাকার ৭ আগস্ট আবারো স্ট্রোক করেন। এরপর তাকে রংপুর প্রাইম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর খবর গ্রামে পৌঁছালে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযুক্ত মাদ্রাসা সভাপতির বাড়ি ঘেরাও করেন এবং মরদেহ অভিযুক্তের বাড়ির উঠোনে রেখে অনশন শুরু করেন।
জাকিরুলের অভিযোগ, ‘জমি, গরু-ছাগলসহ প্রয়োজনীয় মালামাল বিক্রি করে ১২ লাখ টাকা দিয়েছেন বাবা। কিন্তু চাকরি দেননি এমনকি টাকাও ফেরত দেননি। উল্টো বাবাকে লাঞ্ছিত ও হয়রানি করেছেন। আমার বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী জুলফিকার।’
দবিরুল ইসলামের বড় ছেলে আব্দুস সবুর বলেন, ‘জুলফিকার আলীকে ছয় লাখ টাকা মাফ করে দিতে বলেছেন সালিশদাররা। তাই মাফ করে দিয়েছি। বাকি ছয় লাখ টাকার মধ্যে এক লাখ পেয়েছি। বাকি টাকা দুই মাসের মধ্যে দেবেন বলেছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো কথা বলতে রাজি হননি অভিযুক্ত জুলফিকার আলী। সবশেষে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো কথা নেই।’
সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল লতিফ মিয়া বলেন, ‘লাশ নিয়ে অনশনের খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। রাতে উভয়পক্ষকে সাথে নিয়ে বৈঠকে বসা হয়। ছয় লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে। এক লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা দুই মাসের মধ্যে ফেরত দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জুলফিকার।’