
বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বরিশাল নগরী। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি
দিনভর টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বরিশাল নগরীর নিম্নাঞ্চল। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বৃষ্টির কারণে অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ায় অনেকটাই ফাঁকা রাস্তাঘাট। নৌ ও সড়কপথের যানবাহনে ছিলো না যাত্রীদের চাপ।
আবহাওয়া অফিস বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে সর্বোচ্চ ৭৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, টানা পঞ্চম দিনের ন্যায় আজ রবিবারও (১৪ আগস্ট) বরিশাল বিভাগের প্রায় সবগুলো নদীর পানিই বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিশেষ করে বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ৮টি নদীর পানি আগের দিনের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম জানিয়েছেন, গত পাঁচদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ৮টি নদীর ১০টি পয়েন্টসহ প্রায় সব নদীর পানিই বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে আজকে সর্বোচ্চ পরিমাণে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি জানান, এদিন কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তেঁতুলিয়া নদীর ভোলা খেয়াঘাট পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সুরমা-মেঘনা নদীর ভোলা জেলার দৌলতখান পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার, একই নদীর তজুমদ্দিন উপজেলা পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ১ দশমিক ২৭ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এছাড়া বিষখালী নদীর ঝালকাঠি পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুড়িশ্বর বা পায়রা নদীর পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
অন্যদিকে বিষখালী নদীর বরগুনা জেলা পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার এবং পাথরঘাটা পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ১ দশমিক ২৫ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তাছাড়া বলেশ্বর নদীর পিরোজপুর পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার এবং কচা নদীর উমেদপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে, বরিশাল আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাব ঘনিভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। ফলে আজ রবিবার (১৪ আগস্ট) সকাল থেকেই বরিশালে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনো মুষলধারে আবার কখনো মাঝারি ও হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। সেই সাথে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় বজ্রসহ আরো বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরো জানান, আজ রবিবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বরিশালে ৭৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এসময়কালে বাতাদের গতিবেগ ছিলো সর্বনিম্ন ৮ থেকে সর্বোচ্চ ১২ নটিক্যাল মাইল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বরিশাল অঞ্চলের নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত এবং পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, জোয়ার এবং বৃষ্টির কারণে বরিশাল নগরীর সদর রোডসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। নদীর তীরবর্তী রসুলপুর, পলাশপুর এবং মোহাম্মদপুর কলোনীসহ নিম্নাঞ্চলের বসতঘরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়েছে। শহরের মধ্যে পানি ঢুকে পড়ায় রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল।
আবহাওয়া অফিস বলছে, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি জেলার নিম্নাঞ্চল এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুই থেকে চার ফুটের অধিক উচ্চতায় বায়ুতারিত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
