Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

ভাঙ্গা-পায়রা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে মন্থরগতি

Icon

খান রুবেল, বরিশাল

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২২, ২২:২৪

ভাঙ্গা-পায়রা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে মন্থরগতি

প্রতীকী ছবি

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়েছে গত ২৫ জুন। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর পিরোজপুরের কচা নদীর ওপর নির্মিত অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু উদ্বোধনের দিনক্ষণও ঠিক হয়েছে। তবে থমকে আছে দক্ষিণাঞ্চলবাসির আরেকটি স্বপ্ন রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প।

মন্থরগতিতে এগিয়ে চলা প্রকল্পটির বিগত ছয় বছরে অগ্রগতি শুধুমাত্র সম্ভাব্যতা সমীক্ষা। এখন চলছে ডিপিপি তৈরির কাজ। এরপর প্রস্তাবিত প্রকল্প যাবে পরিকল্পনা কমিশনে। তবে প্রকল্পটির সামনে বড় বাধা হয়ে আছে তহবিল সংকট। তাই শেষ পর্যন্ত কবে হবে দক্ষিণাঞ্চলবাসির রেললাইনের স্বপ্ন পুরণ তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষের। তবে রেললাইন নির্মিত হলে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাইলফলক স্থাপন হবে বলে মনে করছেন তারা।

যদিও রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ূন কবির জানিয়েছেন, ‘ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে পায়রা রেল পথের ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ হয়েছে। এখন তহবিল সংগ্রহের কাজ চলছে। তহবিল সংগ্রহ শেষে জমি অধিগ্রহণ শেষ করে শুরু হবে রেললাইন নির্মাণ কাজ।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কলাপাড়া পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। বিশদ নকশা প্রণয়ন ও দরপত্র দলিল প্রস্তুতসহ ফরিদপুরের ভাঙ্গা জংশন থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা সমীক্ষা (প্রথম সংশোধ) নামের প্রকল্পটি রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাস্তবায়ন করছে রেলওয়ে। ২০১৬ বছরের ৯ অক্টোবর পরিকল্পনামন্ত্রীর অনুমোদন পায় সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রস্তাবটি। এর আগে ১৯ জুন পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৬ সালের জুলাইতে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু নির্ধারিত সময়ে রেললাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রকল্পটি শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। তাই পরবর্তীতে ছয় মাস সময় বাড়িয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। এরপর সংশোধনীতে এর মেয়াদ আরো দেড় বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত নেয়া হয়। এরপর আবার আরেক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত নেয়া হয়। মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ানো হয় প্রকল্পের অর্থের বরাদ্দ। প্রথম দফায় সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের এই প্রকল্পটির মূল্য ধরা হয়েছিল ৪২ কোটি ৯৯ লাখ ৭১ হাজার টাকা। পরে প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় বাড়িয়ে ৪৯ কোটি ৯৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা করা হয়।

এদিকে দীর্ঘসূত্রতা পরে চলতি বছরের জুনে সমীক্ষা প্রতিবেদনটি রেলওয়ে বিভাগের জমা দিয়েছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রস্তাবিত এই রেলপথ নির্মাণে একশ মিটার প্রশস্ত ধরে ২১১ কিলোমিটার দীর্ঘ ভূমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে রেলপথের দৈর্ঘ্য হবে ২০৫ কিলোমিটার।

তাছাড়া ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত প্রস্তাবিত সিঙ্গেল লেন ব্রডগেজ রেলপথে মোট ১১টি স্টেশনের প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবিত ফরিদপুর-কুয়াকাটা রেলপথে ভাঙ্গায় মূল জংশন থেকে টেকেরহাট, মাদারীপুর, গৌরনদী, বরিশাল বিমানবন্দর, বরিশাল মহানগর, বাকেরগঞ্জ, পটুয়াখালী, আমতলী, পয়রা বিমানবন্দর ও পায়রা বন্দর হয়ে কুয়াকাটা স্টেশনে গিয়ে শেষ হবে।

রেলওয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের প্রথম প্রতিবেদনে ভাঙ্গা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত ১০টি স্টেশন স্থাপনের প্রস্তাব দেয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। পরে অবশ্য পায়রা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার পথ বৃদ্ধি পেয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত লাইন যাওয়ার বিষয়টি যোগ করা হয়। এর ফলে স্টেশনের সংখ্যা একটি বেড়ে মোট ১১টি হয়। নতুন করে ২৪ কিলোমিটার যুক্ত করা এবং প্রথম পর্যায়ে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান যে প্রস্তাবনা দাখিল করে তাতে অনেক ত্রুটি ধরা পড়ে। তারা যেভাবে প্রস্তাবনা দিয়েছিলেন তাতে পুরো পথে অনেক বাঁক এবং এতে অযাচিতভাবে রেললাইনের দৈর্ঘ্য বৃষ্টির পরিস্থিতি তৈরি হয়। এসব কারণেই নতুন করে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করতে গিয়ে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয়।

গণমাধ্যমকে দেয়া এক বক্তব্যে রেলওয়ের এডিজি (ইনফ্রাস্ট্রাকচার) কামরুল আহসান জানিয়েছেন, ভাঙ্গা-কুয়াকাটা রেললাইন নির্মাণে ডিপিপি তৈরির কাজ চলছে। পরবর্তীতে প্রকল্প প্রস্তাবটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। পরিকল্পনা কমিশন অনুমোদন দিলে এটি অন্তর্ভুক্ত হবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে। সেক্ষেত্রে কাজ শুরু হতে আর বাধা থাকবে না। প্রথম পর্যায়ে ২০২৩ সালের মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করা হবে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।

এ প্রসঙ্গে রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ূন কবির বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চেয়েছেন দেশের ৬৪টি জেলায় যাতে রেলপথ সংযুক্ত হয়। সেই মহাপরিকল্পনা নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ভাঙ্গা থেকে পায়রা রেল পথের ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের যে কার্যক্রম সেটা শুরু হয়ে গেছে, তবে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াটি শুরু হয়নি। যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন এটা অবশ্যই হবে। তবে একটু হয়তো সময় লাগছে। এখন ফান্ড হান্ডিং বা তহবিল সংগ্রহের কাজ চলছে। তহবিল সংগ্রহ শেষে হলে আমরা জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করবো।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে যত কম সম্ভব কৃষি জমি এবং মানুষের ঘর-বাড়িকে বাঁচিয়ে করা যায়, সেইভাবেই পরিকল্পনা করা হবে। এজন্য হয়তো সময় একটু বেশি লাগবে। তাছাড়া রোড যেভাবে করা যায়, ঠিক সেইভাবে রেল করা যায় না। বরিশাল ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। তাই মানুষের মনে কষ্ট দিয়ে কোন কিছু করা যাবে না। 

তিনি বলেন, সিঙ্গেল লাইন অনুযায়ী রেল পথ এগিয়ে যাবে। এছাড়া জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে অন্য যে সব সমস্যা বা আইনি জটিলতা রয়েছে সেগুলো অধিগ্রহণের পূর্বেই সমাধান করা হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫