সরকার কর্তৃক ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম নির্ধারণের দাবি

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২২, ১৫:০৫

ব্রয়লার মুরগী ও ডিম। ছবি: সংগৃহীত।
সরকার কর্তৃক ভোক্তা পর্যায়ে ডিম ও ব্রয়লার মুরগির মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি খামার রক্ষা জাতীয় পরিষদ বরিশাল বিভাগীয় শাখা। আজ রবিবার (২৮ আগস্ট) সকাল ১১টায় বরিশাল প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানায় সংগঠনটির নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি মো. আব্দুর রহিম গাজী বলেন, পোল্ট্রি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্মসংস্থান খাত। বরিশাল বিভাগে চার লাখ মানুষ এই খাতের সাথে জড়িত। বর্তমানে এই খাতের প্রতিটি মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক করোনা মহামারির দুই বছরে পোল্ট্রি খাতের প্রতিটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছ এবং অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। পরবর্তিতে আবারো যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল তখন হঠাৎ ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হয়।
ফলে এই সেক্টরের প্রতিটি খাদ্যপণ্যের মূল্য হু হু করে বাড়তে থাকে। আর ফিডমিলগুলো এই সুযোগে পশুখাদ্যের দাম বাড়াতে শুরু করে।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, গত দুই মাসের মধ্যে পশুখাদ্যের দাম চারবার বৃদ্ধি করা হয়েছে। ১ হাজার ৬০০ টাকার ফিডের বস্তা দাম বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৭০০ টাকা। এছাড়া ব্রয়লারের দাম ৩ হাজার থেকে বেড়ে ৩২০০ টাকা করা হয়েছে।
এর সাথে ভ্যাকসিনসহ সকল প্রকার ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েচে। ফলে বর্তমানে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ পরে প্রায় ৯ দশমিক ৭৯ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগির মাংস প্রতি কেজিতে খরচ হয় ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজধানীর বাজারের ওপর ভিত্তি করে স্থানীয় আড়ৎদাররা চাহিদার ভিত্তিতে বাজার মূল্য নির্ধারণ করে থাকেন। এর সাথে খামারিদের কোনো সর্ম্পরক নেই। বাজারমূল্য নির্ধারণের সময় ডিম ও ব্রয়লারের উৎপাদন খরচের প্রতি কোনো লক্ষ্য রাখা হয় না।
এতে আরো অভিযোগ করা হয়, বাজার মূল্য নির্ধারণের ব্যাপারে কিছু করপোরেট ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান কর্মাশিয়াল ফার্মিংয়ে আসায় পোল্ট্রির বাজার তাদের হাতে চলে গেছে। কারণ মোট উৎপাদনের প্রায় ২৫ শতাংশ তাদের হাতে।
তারা চাচ্ছে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারিা ঝরে যাক। এতে তারা পুরো বাজারটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
ভোক্তাপর্যায়ে যে ডিমের মূল্য ১২-১৩ টাকা, সেখানে সেই ডিম খামারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫০ টাকা। মাঝখানে আড়ৎদার, ফরিয়া, মুদি দোকানদার ২.৫০-৩ টাকা পর্যন্ত লাভ করে।
জানা যায়, করপোরেট কোম্পানিগুলোর ডিমের উৎপাদন খরচ অনেক কম। কারণ বাচ্চা তাদের নিজস্ব হ্যাচারীতে উৎপাদন করে, খাদ্যের সমস্ত কাঁচামাল তারা বৃহৎ আকারে আমদানি করে এবং নিজস্ব ফিড মিলে খাদ্য উৎপাদন করে কর্মাশিয়াল ফার্মে ব্যবহার করে।
তাই তাদের উৎপাদিত পণ্যের মূল্যের সাথে প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদিত পণ্যের মূল্যের অনেক পার্থক্য থাকে। তাই প্রান্তিক খামারিরা তাদের কাছে অসহায়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা বলেন, পোল্ট্রি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি খাত। প্রান্তিক খামারিরা বছরের পর বছর লোকসানে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে ৪০ শতাংশ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। এইভাবে লোকসান দিতে থাকলে অচিরেই সকল প্রান্তিক খামার বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পরবে।
সংবাদ সম্মলেনের মাধ্যমে সরকারের কাছে চার দফা দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হল- ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম সরকারের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্নভাবে খামারি, আড়ৎদার, ভোক্তা পর্যায়ে নির্ধারণ করা, সংশ্লিষ্ট প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার, খামার প্রতিনিধি, ফিডমিল প্রতিনিধি, হ্যাচারি মালিক প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠন কর। যা ১৫ দিন বা ১ মাস অন্তর পোল্ট্রি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করবে, কৃষি খাতে যেভাবে সরকার সার, ওষুধ, বিদ্যুৎ ইত্যাদিতে ভর্তুকিসহ প্রণোদনা প্রদান করে, তেমন করে পোল্ট্রি খামারিদেরও বাচ্চার মূল্য ও খাদ্যের মূল্যে ভর্তুকি প্রদান করলে ডিমের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন মো. সেলিম সরদার, সাবেক কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন, এনায়েত হোসেন প্রমুখ।