Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

সেতুর অভাবে ‘খেয়া’ ভরসা, বিপাকে ১৩ গ্রাম

Icon

সাভার প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২২, ২১:৫৪

সেতুর অভাবে ‘খেয়া’ ভরসা, বিপাকে ১৩ গ্রাম

১৩টি গ্রামের মানুষকে শহরে আসতে হলে পার হতে হয় নৌকা

কাছেই ব্যস্ততম পৌর শহর সাভার। ধামরাইও বেশি দূরে নয়। কিন্তু শহুরে হাওয়া গায়ে লাগানো বেশ কষ্টসাধ্য ১৩টি গ্রামের মানুষের।

শহরে যেতে তাদের চেপে বসতে হয় খেয়া নৌকায়। নদী পার হলে মেলে শহরের দেখা। একটি সেতুর অভাব যেন গ্রামগুলোকে পর করে রেখেছে শহর থেকে।

ঢাকার ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের ফোর্ডনগর এলাকায় গেলে দেখা যায় এমন চিত্র। স্থানীয়রা জানান একটি সেতুর অভাবে তাদের ভোগান্তির কথা।

তারা জানান, কুল্লা ইউনিয়নের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ধলেশ্বরীর শাখা বংশী নদীর কারণে ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের ফোর্ডনগর গ্রামের একটি অংশসহ তিনটি গ্রাম ও এ উপজেলা ঘেঁষা সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এসব গ্রামের অন্তত লক্ষাধিক বাসিন্দারা সাভার ও ধামরাইয়ে যেতে খেয়া ব্যবহার করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুল্লা ইউনিয়নের ফোর্ডনগর গ্রামটি ধলেশ্বরী নদীর দু’পাশে অবস্থিত। ফোর্ডনগর উত্তরপাড়ার সাথে একটি সেতু থাকায় সেটি দিয়ে খুব সহজেই ওই এলাকার বাসিন্দারা সাভার মূল শহরের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন।

কিন্তু ফোর্ডনগর দক্ষিণপাড়া, কান্দাপাড়া, চর বরদাইল এবং সিংগাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের খান পাড়া, ভূতা পাড়া, মোল্লা পাড়া, ভাটির চর, খালাসি পাড়া, গেলে পাড়া, উলাইল চর, খাসের চর, লাঙ্গুলি, কামুরা- এই ১৩ গ্রামের লক্ষাধিক বাসিন্দারা শহরে যেতে ব্যবহার করেন খেয়া।

এদিকে, এই দুর্ভোগ থেকে বাঁচতে অবিলম্বে এই এলাকায় সেতুর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এলাকাবাসী জানায়, সেতু না থাকায় ধলেশ্বরীর উভয় পাড়ের কৃষি জমিতে চাষাবাদ ও উৎপাদিত ফসল বাজারে নিতে নৌকা ব্যবহার করতে বাধ্য হওয়ায় প্রতিনিয়তই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা।

এ ছাড়া ১৩টি গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৭টি, কিন্ডারগার্টেন ৫টি, মাদ্রাসা ৩টি। এসকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা ওই সকল গ্রামের হলেও ফোর্ডনগর উত্তর পাড়া থেকে প্রতিদিন প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী ও এসকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অধিকাংশ সাভারে বসবাস করায় তাদের পার হতে হয় নদী। গ্রামের উচ্চ মাধ্যমিক ও কলেজ পড়ুয়া প্রায় ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী সাভারের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করায় প্রতিদিন তাদের খেয়া পার হতে হয়।

সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় চিকিৎসাপ্রার্থীদের। এলাকাগুলোতে কোনও হাসপাতাল না থাকায় এ ১৩টি গ্রামের বাসিন্দাদের চিকিৎসা সেবা নিতে সাভারের বিভিন্ন হাসপাতালই একমাত্র ভরসা। নৌকা ছাড়া পারাপারের সুযোগ না থাকায় এসময় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় তাদের।

ফোর্ডনগর উত্তর পাড়ার বাসিন্দা কৃষক লাল চাঁন বলেন, এই গ্রামের অনেকেরই ওপারে জমি আছে। জমি দেখতে প্রতিদিন একাধিকবার যেতে হয়। আবার ফসল আনা-নেওয়াতেও দুর্ভোগ। নদী পার করে বাড়ি আনা, আবার নদী পার করে বাজারে নেওয়া। সেতু থাকলে এত কষ্ট হতো না।

সাভার অধর চন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আলতাফুর রহমান বলেন, নৌকা অন্য পারে থাকলে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। এ ছাড়া মাঝি না থাকলেও দেরি হয়। আবার অনেকেই সাঁতার জানে না। তারা ভয়ে নদী পার হয়।

ফোর্ডনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদা ইয়াসমিন বলেন, প্রায় ২০/২৫ জন শিক্ষার্থী ও ৮ জন শিক্ষক প্রতিদিন নদীর অপর প্রান্ত থেকে খেয়া পার হয়ে প্রতিদিন স্কুলে আসেন। শিক্ষার্থীদের অনেকে সাঁতার না জানায় আতঙ্কে থাকতে হয় আমাদের। একটি সেতু হলেই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।

ফোর্ডনগরের বাসিন্দা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, রাত ১২টার পর ঘাটে নৌকা না থাকায় এসময় কেউ অসুস্থ হলে বিপদে পড়তে হয়। বেশ কয়েক মাস আগে একটি মারামারির ঘটনায় মারাত্মক আহত ৩ জনকে হাসপাতালে নিতে গেলে ঘাটে কোনও নৌকা না থাকায় দ্রুত তাদের হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয়নি। পরে অন্য জায়গা থেকে নৌকা এনে তাদের নদী পার করা হয়।

কুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. লুৎফর রহমান বলেন, এবারই প্রথমবার আমি নির্বাচিত হয়েছি। নির্বাচিত হওয়ার পর বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা ফোর্ডনগরে ধলেশ্বরী নদীর উপর একটি সেতুর অভাবে নানা সমস্যায় পড়ছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন। আমি অবশ্যই সংশ্লিষ্ট মহলে এ সেতুর প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি তুলে ধরবো। 

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, ফোর্ডনগরের ওই এলাকাটিতে ধলেশ্বরী নদীর উপর সেতু নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। ইতোমধ্যে এটি এলজিইডির তালিকাভুক্ত হয়েছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫