সময়ের আগেই শেষ হবে মাতারবাড়ি-মাদুনাঘাট প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:১০

দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলায় নির্মাণাধীন ১২০০ মেগাওয়াট মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। ৪০০ কিলো ভোল্ট ক্ষমতাসম্পন্ন ৯২ কিলোমিটার দীর্ঘ ডাবল সার্কিট বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন প্রকল্পটি মাতারবাড়ি-মাদুনাঘাট প্রকল্প হিসেবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এই সঞ্চালন লাইন দিয়ে ভবিষ্যতে যাতে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হতে পারে সে জন্য উচ্চতর প্রযুক্তির তার ও কন্ডাক্টর ব্যবহার হবে। বিদ্যুতের সুষম সঞ্চালনের লক্ষ্যে কক্সবাজার জেলার পেকুয়া, মহেশখালী ও চকরিয়া উপজেলা এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারা, বাঁশখালী, বোয়ালখালী, পটিয়া ও রাউজান উপজেলায় বসানো হচ্ছে ৩৫০টি টাওয়ার। এর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯৫ কোটি টাকা।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন অ্যাজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকার ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) সম্মিলিতভাবে এ কাজ করছে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনটির নির্মাণ বাস্তবায়িত হলে জাতীয় গ্রিডে সিস্টেম লস কমবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মাতারবাড়ি-মাদুনাঘাট ৪০০ কিলো ভোল্ট বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনটির চুক্তি স্বাক্ষর হয়। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) লিমিটেডের অধীনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কেইসি ইন্টারন্যাশনাল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। জাপানি উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোয়ের তত্ত্বাবধানে উন্নত মানসম্মত নির্মাণ প্রক্রিয়ায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠানটি দেশের বৃহৎ মেট্রোরেলের উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করছে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন কাজের সহযোগিতা করার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য এবং অন্য জনপ্রতিনিধিদের কাছে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়েছে।
প্রকল্পের তথ্য সূত্রে জানা যায়, মাতারবাড়ি আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার পাওয়ার প্রকল্প-২ নামে মাতারবাড়ি, পেকুয়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা, শিকলবাহা, মাদুনাঘাট পর্যন্ত গ্রিড সাব-স্টেশনে জাপানের হিটাচি কর্পোরেশনে ৫০০ থেকে ৭০০ এমভি ক্ষমতার তিনটি ট্রান্সফরমার স্থাপন করবে।
এ ছাড়া ৪০০ কিলো ভোল্ট ক্ষমতার ছয়টি বে, দুইটি বাস কাপলার, দুইটি সেকশন এবং দুইটি বাস বিটি স্থাপন করা হবে। ২৩০ কিলো ভোল্ট অংশেও একই সংখ্যক যন্ত্রাংশ থাকবে। পিজিসিবির গৃহিত “ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইন পাওয়ার স্ট্রেংথদেনিং প্রজেক্ট” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই সাব স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।
কেইসি ইন্টারন্যাশনালের প্রকল্প ব্যবস্থাপক বলেন, “এই ধরনের লাইন নির্মাণ কাজে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। প্রত্যন্ত অঞ্চল দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট ও কিছু এলাকায় লবণ ক্ষেত থাকায় বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময় কাজ করা সম্ভব হয় না। এরপরও আমাদের প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা, পর্যাপ্ত লোকবল, বিপুল পরিমাণ যান্ত্রিক অবকাঠামো থাকার কারণে প্রকল্পটি প্রাক্কলিত ৩০ মাস সময়ের ৬ মাস আগেই অর্থাৎ, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে শেষ করার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।”
প্রকল্পের প্রকৌশলী নন্দ দুলাল বলেন, “বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ সঠিক ব্যবস্থাপনা ও নিবিড় তদারকির মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে।আমাদের প্রতিষ্ঠানের এই ধরনের কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা ও সুনাম আছে, সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি।”
সঞ্চালন লাইনটি সম্পন্ন হলে ওই অঞ্চল তথা দেশের বিদ্যুৎ খাত আরো একধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।