
যশোরের শার্শা উপজেলার লক্ষণপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের সেই কাঁচা সড়ক। ছবি: বেনাপোল প্রতিনিধি
যশোরের শার্শা উপজেলার লক্ষণপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামের প্রায় দুই কিলোমিটারের কাঁচা সড়কটি দেশ স্বাধীনের পর থেকে আজও কাঁচাই রয়েছে। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ যাতায়াত করেন। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কটি কর্দমাক্ত হয়ে যায়। তখন এ সড়কে কোনো ভ্যান, সাইকেল, মোটরসাইকেল তো দূরের কথা, মানুষ পায়ে হেঁটেও যাতায়াত করতে পারেন না। বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় গ্রামবাসী বাধ্য হয়েই কাঁদা-পানি মাড়িয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছেন। স্থানীয়দের জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
জানা গেছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এ সড়কটি কাঁচা। সামান্য বৃষ্টি হলেই চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়ে। প্রতিনিয়তই মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কাঁচা সড়ক পাকা হবে এ আশায় এলাকাবাসী বছরের পর বছর অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু কাঁচা সড়ক আর পাকা হয় না। জনপ্রতিনিধিরা বারবার শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু আজ অবধি ওই সড়কটিতে কোনো কাজ হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দীর্ঘদিনেও সংস্কার না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই অসংখ্য বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। আর তাতে জমে যায় বৃষ্টির পানি। সড়কটি পাকা হলে একদিকে যেমন বিভিন্ন গ্রামের ছাত্রছাত্রী ও লোকজনের যাতায়াতে ভোগান্তি কমবে, অন্যদিকে মুমূর্ষু রোগী বহনে বেগ পেতে হবে না। শ্রমজীবী মানুষেরা ভ্যান, অটোরিকশা চালিয়ে সহজে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন। এলাকার কৃষকরা ধান, পাট, কাঁচা ফসল কম খরচে বাজারে নিয়ে বিক্রি করতে পারবেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই সড়কটি তাদের গ্রামের একমাত্র প্রধান সড়ক। সেই সড়ক দেশ স্বাধীনের ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও পাকা হলো না। এ গ্রামের অন্যান্য সড়কগুলোও কাঁচা। এই গ্রাম থেকে দেশের বৃহত্তম বেনাপোল স্থল বন্দরে কাজ করতে যাওয়ার জন্যও একমাত্র সড়ক এটি।
দুর্গাপুর গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একটি মাত্র সড়ক এটি। বর্ষার দিনে এই সড়ক দিয়ে একেবারেই চলাচল করা যায় না। অনেক সময় মাটি পিছলে বয়স্ক মানুষ পড়ে গুরুতর আহত হয়। মোটরসাইকেল, ভ্যান গাড়ি, সাইকেল কাদার মধ্যে দেবে গিয়ে উল্টে যায়। প্রসূতি মা কিংবা জরুরি রোগী হাসপাতালে নেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স কিংবা গাড়ি গ্রামের মধ্যে ঢোকানো যায় না। আমাদের এই দুর্ভোগ দেখার কেউই বুঝি নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, দিনের বেলায় কোনো রকম করে জুতা হাতে নিয়ে কাঁদা পার হওয়া যায়। কিন্তু রাতের বেলায় আর যাওয়া যায় না। আমরা এলাকাবাসী এই সড়কটি দ্রুত পাকা হওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে ওই গ্রামের ইউপি সদস্য রাসেদ আলী বলেন, সড়কটির জন্য অনেক দপ্তরে যোগাযোগ করেছি কিন্তু কারো কাছ থেকে কোনো প্রকার আশ্বাস পায়নি।
স্থানীয় সমাজকর্মী জহুরুল ইসলাম জানান, বর্তমান চেয়ারম্যানের ব্যর্থতার কারণে এ সড়কটি পাকা হচ্ছে না। শুধু এ সড়ক নয় এলাকার উন্নয়নে তিনি কোনো কাজ করেননি। তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে বাদ দিয়ে মেয়রের রাজনীতি করার কারণে স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে কোনো উন্নয়নমূলক কাজের জন্য যান না। অন্যান্য চেয়ারম্যানরা কাজ পেলেও তিনি এলাকার উন্নয়নে কাজ পান না।
তিনি আরো জানান, এই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আনোয়ারা খাতুন ২০১৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত সাড়ে ৪ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। এর আগে তার স্বামী মরহুম সালাহউদ্দিন আহমেদ শান্তি এই ইউনিয়নে দুই বছর চেয়ারম্যান ছিলেন। তার মৃত্যুতে উপ-নির্বাচনে তার স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বরের ইউপি নির্বাচনে আবারও চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আনোয়ারা খাতুন।
এ ব্যাপারে লক্ষণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ারা খাতুন বলেন, আমার ইউনিয়নের দূর্গাপুর গ্রামে একটি রাস্তাও পাকা নেই। খুবই কষ্টে আছে ওই গ্রামের বাসিন্দারা। গত বছরও ওই রাস্তাটি মাপ হয়েছিলো। তারপরও কি কারণে রাস্তাটির কাজ বন্ধ যায় আমার জানা নেই। তবে রাস্তাটির ব্যাপারে আবারও কর্তৃপক্ষের অনুরোধ করবো।