মওলানাপাড়া ছালাফিয়া সিনিয়র মাদরাসা
৪৮ বছর ধরে ঝুঁকিপূর্ণ মাটির ঘরে পাঠদান

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৩০

সখীপুরে মওলানাপাড়া ছালাফিয়া সিনিয়র মাদরাসা। ছবি: টাঙ্গাইল প্রতিনিধি।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে মওলানাপাড়া ছালাফিয়া সিনিয়র মাদরাসায় এখনো আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। দীর্ঘ ৪৮ বছর ধরে মাটির ঘরে ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান। চাহিদা অনুযায়ী অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ায় প্রযুক্তিগত আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রায় ৪’শ শিক্ষার্থী।
জানা যায়, ১৯৭৪ সালে মরহুম আবদুল হাই ছালাফি মওলানাপাড়া ছালাফিয়া সিনিয়র মাদরাসাটি স্থাপন করেন। প্রতিষ্ঠার ১১ বছর পর ১৯৮৫ সালে এমপিওভুক্ত হয়। ওই বছরই এলাকার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পাঠদানের জন্য একটি মাটির ঘর নির্মাণ করা হয়।
বর্তমানে এই মাদরাসার কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। এতে একইসঙ্গে বিজ্ঞান, মানবিক, মোজাব্বিদ ও হিফজুল কোরআন অর্থাৎ দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত চারটি শাখায় শিক্ষার্থীদের পড়ানো হচ্ছে। বর্তমানে এই মাদরাসায় ১৮ জন শিক্ষক ও ২ জন কর্মচারিসহ প্রায় চারশ শিক্ষার্থী রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সীমান্তবর্তী মাদরাসাটিতে ৩৫ গজের লম্বা জরাজীর্ণ একটি মাটির ঘর রয়েছে। ঝুঁকি নিয়ে সে ঘরে ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা। ঝড়-বৃষ্টিতে যেকোনো সময় ভেঙে যেতে পারে এই মাটির ঘর। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই পাঠদান করছেন শিক্ষকেরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিনিয়র শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী নেই, তবুও চারতলা ভবন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর আমাদের পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী থাকার পরেও পাকা ভবন নেই। বসার জায়গা দিতে পারি না। উপজেলার অনেক স্কুল, কলেজে পাকা ভবন আছে, আরো হচ্ছে। ডিজিটাল যুগে এখনো কী শিক্ষার্থীরা মাটির ঘরে পাঠদান নিতে চায়? শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনা করে তিনি প্রতিষ্ঠানে ভবন বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
শিক্ষকরা বলেন, এর আগে জেলা পরিষদ থেকে টিনশেড ভবন পেয়েছি, তার একটিতে শিক্ষকদের বসার রুম, অন্যটি মেয়েদের কমন রুম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নতুন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা এই মাদরাসার অবকাঠামোগত অবস্থা দেখে যোগদান করতে চান না। একাডেমিক ভবনের সমস্যার কারণেই মূলত শিক্ষক স্বল্পতা রয়েছে।

একাদশ শ্রেণির সাধারণ বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান বলেন, শিশু শ্রেণি থেকে মাটির ঘরের এই মাদরাসায় আমরা লেখাপড়া করছি। একটু বৃষ্টি হলেই চাল বেয়ে পানি পরে আমাদের বই খাতা নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও শ্রেণিক্ষকে পানি জমে কাদার সৃষ্টি হওয়ায় অনেক কষ্ট হয় আমাদের।
তিনি আরো বলেন, আমাদের মাদরাসা ছাড়া বর্তমান সময়ে এই উপজেলায় কোনো স্কুল বা মাদরাসায় মাটির ঘর নেই। ভর্তি হওয়ার পর থেকে শিক্ষকদের মুখে শুধু শুনেই আসলাম আমাদের চারতলা ভবন হবে। কিন্তু কবে হবে সেটির অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না।
মাদরাসার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ মো. তালিবুর রহমান বলেন, ২০১৪-১৫ ও ২০২০ সালে পাকা ভবনের জন্য আবেদন করেছি। তবে এখনও ভবন বরাদ্দ পাইনি। বর্তমানে মাদরাসায় ৩৯০ জন শিক্ষার্থী থাকলেও আধুনিক অবকাঠামো না থাকায় নতুন ছেলে-মেয়ে ভর্তি হতে চায় না।
তিনি আরো বলেন, বাধ্য হয়েই দীর্ঘদিনের পুরনো মাটির ঘরেই ক্লাস নিচ্ছি। টিনের চালে মরচে ধরেছে, মাটির দেয়ালও ফেটে যাচ্ছে। মাটির শ্রেণী কক্ষ নিয়ে দুর্ঘটনার শঙ্কায় আছি। আমাদের একটি পাকা একাডেমিক ভবন প্রয়োজন। এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
মাদরাসাটির গভর্নিং বডির সভাপতি মো. আতিকুর রহমান বলেন, ২০২০ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য এই মাদরাসার একটি অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। তিনি একটি ভবন করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে তা এখনো বাস্তবায়ননি।
এ বিষয়ে সখীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মফিজুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় একটি মাত্র মাদরাসাই মাটির ঘরে পরিচালিত হচ্ছে। যা প্রতিষ্ঠার শুরুতে নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে মাদরাসাটি উপজেলার দুর্গম ওই এলাকায় শিক্ষা বিস্তারে ভালো ভূমিকা রাখছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যাও অনেক, ফলাফল সন্তোষজনক। শিক্ষার গুণগতমান আরো উন্নত করতে এই প্রতিষ্ঠানে একটি একাডেমিক পাকা ভবন প্রয়োজন।
তিনি আরো বলেন, সীমাবদ্ধতার কারণে মাদরাসায় পাকা ভবন বরাদ্দ হয়নি। আগামীতে ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য পাকা ভবনের চাহিদা দেয়া হবে।