Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

দুবাইয়ে উটের গায়ে পাহাড়ে তৈরি বেল্ট

Icon

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি

প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪:১১

দুবাইয়ে উটের গায়ে পাহাড়ে তৈরি বেল্ট

রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের জুনুমাছড়া গ্রামের বাসিন্দা মিকা দেওয়ান। ২০০৬ সালে এক দুবাই প্রবাসীর অনুরোধে উটের গায়ে ব্যবহৃত বিশেষ বেল্ট তৈরির কাজ শুরু করেন। রাঙামাটির স্থানীয় এক মহাজনের মাধ্যমে তারা বেল্টগুলো প্রবাসীর কাছে পৌঁছে দেন।

শুরু থেকেই বেল্ট তৈরির সুতা ও সেটপ্রতি ১ হাজার টাকা মজুরি দেওয়া হচ্ছে মিকা দেওয়ানকে। পরে তার দেখাদেখি জুমুনাছড়া গ্রামের অন্যান্য পাহাড়ি নারীও এ কাজে যোগ দেন। পরিবারের কাজের পাশাপাশি অবসর সময়ে তারা বেল্ট তৈরির কাজ করে থাকেন। বর্তমানে ওই গ্রামের ৪৫-৫০ জন পাহাড়ি নারী এ কাজে জড়িত রয়েছেন।

মিকা দেওয়ান জানান, ২০০৬ সালে এক দুবাই প্রবাসী রাঙামাটির বিভিন্ন দোকানে এসে এ ধরনের বেল্ট খুঁজতে থাকেন। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন পাহাড়ি নারীরা ঘরে কোমর তাঁত বুনে থাকেন। পরে তিনি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং কাজ দেখে জানাই আমরাও বুনতে পারব। এরপর থেকে আমরা উটের গায়ে ব্যবহারের জন্য এই বিশেষ বেল্ট তৈরি করছি। এখন আমার দেখাদেখি গ্রামের অনেক নারী এ কাজ করছেন। দুজন আছেন যারা আমাদের তৈরিকৃত এই বেল্ট সেলাইয়ের কাজ করেন।

মিকা দেওয়ান বলেন, শুরুতে যখন এ কাজ হাতে নিই তখন থেকে আমাদের প্রতিসেট ১ হাজার টাকা মজুরি দেওয়া হতো। এর মধ্যে সুতার খরচ মহাজনের। প্রতিটি সেটে ৮ পিস লম্বা বেল্ট ও ৭ পিস মোটা বেল্টসহ মোট ১৫টি বেল্ট থাকে। আবার প্রতিটি সেট দিয়ে ৭টি পূর্ণাঙ্গ বেল্ট তৈরি হয়। পূর্ণাঙ্গ বেল্ট তৈরির কাজ করেন যিনি সেলাই করেন। আমাদের প্রতি সেটে মোট ১৫টি ছোট-বড় বেল্ট বুনতে হয়। এক সেট বেল্ট বুনলে পাওয়া যায় এক হাজার টাকা। মাসব্যাপী পুরোদমে কাজ করলে সর্বোচ্চ তিন সেট বেল্ট বোনা যায়। সে হিসাবে সর্বোচ্চ মজুরি তোলা যায় তিন হাজার টাকা। ২০০৬ সালে শুরুর দিকে মাসে তিন সেট বুনে ৩ হাজার টাকা আয় করলেও এখন আর পোষায় না। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে একই কাজ করে গেলেও মজুরি বাড়েনি। সংসার খরচের সঙ্গে তাল মেলাতে গেলে এই কাজ করে এখন সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। ভাবছি সরকারি সহায়তা কিংবা কারো সহযোগিতা পেলে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করব, নয়তো এই পেশা বদল করতে হবে।

মিকা দেওয়ানের কাছে বেল্ট বোনার কাজ শিখেছেন জুমুনাছড়ার গ্রামের পাহাড়ি নারী এলি চাকমা, সুমা চাকমা, সোনামিকা চাকমাসহ আরো অনেকে। সেলাইয়ের কাজ করা মনিপ্রভা দেওয়ান বলেন, সেলাইয়ের কাজ খুব কষ্ট। প্রতিটি সেটে মোট সাতটি বেল্ট সেলাই করতে হয় আর এ কাজের জন্য পাই মাত্র প্রতি পিস ১০ টাকা হারে ৭০ টাকা। এর মধ্যে সুতার খরচও নিজস্ব। আমরা গরিব মানুষ, তাই না পোষালেও সেলাইয়ের কাজ করতে হচ্ছে। এত দিন ধরে এই কাজের সঙ্গে জড়িত থাকলেও কখনো কেউ এগিয়ে আসেননি। কোনো ধরনের সহযোগিতাও পাইনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মিকা দেওয়ানদের মহাজন ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ঝর্না খীসা বলেন, সুতা খরচ ও অন্যান্য খরচ মিলে আমাদেরও এখন বেল্ট তৈরির কাজে খুব বেশি লাভ নেই। যেহেতু গ্রামের নারীরা অবসরে এই কাজ করতে পারেন, তাই আমরা এখনো জড়িত আছি। গ্রামের এসব নারীর জন্য আমি বিভিন্ন সময়ে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫