Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের টাকা নেই: মেয়র

Icon

বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২২:১৫

বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের টাকা নেই: মেয়র

সেরনিয়াবাত ভবনে মতবিনিময় সভা। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি

বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের এতোগুলো টাকা এই মুহূর্তে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কাছে নেই বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। 

তিনি বলেছেন, এই মুহূর্তে আমাদের সরকারি বরাদ্দ থাকলে বকেয়া বিল পরিশোধ করা যেত। লোকাল ফান্ডের যে টাকা আছে তা দিয়ে পাঁচ বছরের গ্যারান্টিতে রাস্তা করা হয়েছে। বরাদ্দ ছাড়াও আমি যেভাবে কাজ করছি তাতেই জনগণ আমার ওপর খুশি। জনগণকে আমার প্রতি অখুশি করতেই এই মুহূর্তে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কাজটি করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আমার কাছে এটা ষড়যন্ত্রের মতই মনে হচ্ছে। তাই এই মুহূর্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানানো ছাড়া আর কিছু করার নেই।

দুর্গা পূজার আগমুহূর্তে হঠাৎ করে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায় করতে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সড়ক বাতি এবং পানির পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভায় সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এই কথা বলেন। 

আজ বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাতে নগরীর কালিবাড়ি রোডে মেয়রের বাসভবন সেরনিয়াবাত ভবনে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

মতবিনিময়কালে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, আমি বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কিভাবে চালাচ্ছি সেটা আপনারাই ভালো জানেন। সিটি কর্পোরেশনে আমাদের কোন স্টাফের বেতন বকেয়া নেই। ঠিকাদারি বিল বকেয়া নেই। লোকাল ফান্ডের ৬৭ কোটির ওপরে টাকা দিয়ে আমি পাঁচ বছরের গ্যারান্টিতে রাস্তা করছি। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ইতিহাসে এটা কেউ করেছে কিনা আমার জানা নেই।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিল শুধু যে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের বকেয়া তা কিন্তু নয়। দেশের অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনে এর থেকেও বেশি বিদ্যুৎ বিল বকেয়া আছে। অথচ হঠাৎ করেই জনগণকে জিম্মি করে আমাদের সিটি কর্পোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের সড়ক বাতি এবং ১১টি পানির পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে।

এসময় মেয়র বলেন, বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কারণে বিদ্যুৎ বিভাগ আমাদের অফিসের লাইন কেটে দিক, দপ্তরের লাইন কেটে দিক, প্রয়োজনে আমার বাসার লাইন কেটে দিক সেটা সহ্য করা যায়। সেখানে জনগণকে জিম্মি করে এমন সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি। এর প্রভাব সরাসরি সরকারের ওপর পড়বে বলেও আমি মনে করছি।

মেয়র বলেন, গত ৫-৭ দিন পূর্বে সার্কিট হাউজে বিদ্যুৎ বিলের বিষয়টা নিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের সাথে কথা বলেছি। সেখানে পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজিও ছিলেন। বিভাগীয় কমিশনার আমাকে বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রীর সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। গত পরশু আমি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। ফোন ধরেই তিনি যেভাবে বলেছেন তাতে মনে হয়েছে তিনি আগে থেকেই বিষয়টি জানেন।

মেয়র বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয়ার বিষয় নিয়ে কথা বললে মন্ত্রী মহোদয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, আমাদের নির্দেশনা আছে এটা করতে হবে। এসময় তিনি আমাকে ২৫ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল জমা দিতে বলেন। আমি তাকে জানিয়েছে আমার সময়ে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হয়েছে মাত্র ১৫ কোটি ৮ লাখ টাকা। তার পরেও আমি বলেছি, আমার কাছে থাকলে আমি দেবো। সরকারি প্রজেক্টের টাকা আসলে বিল দেয়া আমার জন্য কোনো বিষয় ছিল না।

সিটি মেয়র বলেন, বিদ্যুৎ বিল দিবো এটা আমি বলেনি। আমরা বিল দেওয়ার চেষ্টা করছি। এই মুহূর্তে আমাদের কাছে বকেয়া পরিশোধের মতো এতো টাকা নেই। যা আছে তা দিলে স্টাফদের বেতন বন্ধ হয়ে যাবে। তার পরেও যেদিন বিদ্যুৎ সংযোগ কেটেছে সেদিনও ৭৮ লাখ টাকা বকেয়া পরিশোধ করেছি। টাকা জমা হওয়ার পরেই আমাদের লাইন কাটা হয়েছে।

মেয়র বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ কাটার বিষয়ে আমি বরিশাল বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। তারা বলে খুলনা থেকে লাইন কাটা হয়েছে। বরিশালের প্রকৌশলী আমাকে সংযোগ দিয়ে নিতে বলেন। কিন্তু তাদের সংযোগ আমি দিতে পারি না। এটা আমাদের বিষয় হলে সেটা আমরাই করে নিতে পারতাম। বিদ্যুৎ সংযোগ কাটায় এখন জনগণ সাফারার হচ্ছে। এখানে জনগণের তো কোনো দোষ নেই। আমি সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করে যাচ্ছি সড়ক বাতি এবং পানির পাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ যাতে দ্রুত আসে।

এদিকে, মতবিনিময় সভায় বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু বলেন, ‘২০২১ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি সভা হয়েছিল। সেই সভায় সিদ্ধান্ত হয় সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কারণে সড়ক বাতি ব্যতীত অফিস বা দপ্তরের বিদ্যুৎ সংযোগ কাটা যেতে পারে। তাছাড়া কিস্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো বকেয়া পরিশোধের সুবিধা প্রদান করবে বিদ্যুৎ বিভাগ। এমনকি আবেদনের প্রেক্ষিতে চার্জ মৌকুফের ব্যবস্থা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। ২০২১ সালের সিদ্ধান্তের পরে মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে আর কোনো সিদ্ধান্ত আমরা পাইনি।

বকেয়া বিলের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা কখনো বলে ৫৯ কোটি টাকা, আবার বলছে ৫৭ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া। অথচ আমারা ৪৯ কোটি টাকা হিসাব পাই। বিদ্যুৎ বিভাগের প্রকৌশলীরা বলছে বিদ্যুৎ বিলের এই ঝামেলা বিগত ১০ বছরের। তাহলে তারা চার বছরের মেয়রের ওপর কেন এই বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছেন, এর উদ্দেশ্যটা কি বলে প্রশ্ন তোলেন প্যানেল মেয়র।

বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের হিসাব পর্যালোচনা করে প্যানেল মেয়র বলেন, শওকত হোসেন হিরন মেয়র থাকাবস্থায় একটা টাকাও তিনি বিল পরিশোধ করেনি। তার সময়ে ২০০৮ থেকে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বকেয়া ছিল। পরবর্তীর মেয়র আহসান হাবিব কামাল পরিশোধ করেছেন মাত্র ১ কোটি ৩৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা। কিন্তু তাদের সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি।

অথচ বর্তমান মেয়র গত চার বছরে এক কোটি ৭৩ লাখ ৭০ হাজার ২০৭ টাকা বকেয়া পরিশোধ করেছে। তিনি প্রতি বছরই বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছেন। তার পরেও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা ষড়যন্ত্রের অংশ উল্লেখ করে প্যানেল মেয়র বলেন, বিদ্যুৎ বিল শুধু বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের বকেয়া নয়। সবথেকে ধনাঢ্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ১০৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ২৮ কোটি ২৪ লাখ, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ১০ কোটি ৩১ লাখ, খুলনা সিটির ২৮ কোটি ২৭ লাখ, রংপুর সিটির ২৪ কোটি ৯০ লাখ, নারায়ণগঞ্জ সিটির ২৭ কোটি ৮৪ লাখা এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের ৪০ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া। এই সিটি কর্পোরেশনগুলো আমাদের থেকে ধনাঢ্য কিনা সেটা বিবেচনার ব্যাপার।

এসময় প্যানেল মেয়র দাবি করে বলেন, আমরা মনে করি আগামী বছরে নির্বাচন। মনোনীত মেয়র মহোদয় নানান রকমের উদ্ভাবনী চিন্তা শক্তির মাধ্যমে তিনি নগর ব্যবস্থা এবং নগর প্রশাসনকে যেভাবে সাজিয়ে তুলেছেন, নাগরিক সেবাকে যেভাবে দ্রুত জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে তারই বিরুদ্ধে একটি মহল বোধহয় সক্রিয় আছে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার এইযে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে হঠকারিমুলক সিদ্ধান্ত জনগণকে জিম্মি করে জনগণকে দুর্ভোগে ফেলে, নেতৃত্বকে বিব্রত এবং ব্যর্থ প্রমাণের চেষ্টা।

মতবিনিময় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর এবং প্যানেল মেয়র অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম খোকনসহ সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫