Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

সবুজের নতুন উদ্ভাবন কিষানি ড্রোন

Icon

মো. রাসেল ইসলাম, দিনাজপুর

প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫:২৮

সবুজের নতুন উদ্ভাবন কিষানি ড্রোন

কৃষি জমিতে কীটনাশক স্প্রে করার কাজে ব্যবহারযোগ্য ড্রোন। ছবি: দিনাজপুর প্রতিনিধি

কৃষি জমিতে কীটনাশক স্প্রে করার কাজে ব্যবহারযোগ্য ড্রোন তৈরি করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন দিনাজপুরের সবুজ সরদার (১৮)। তিনি এর আগে একটি বিমান তৈরি করে আকাশে উড়িয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি করেছিলেন।

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার ৭ নম্বর শিবনগর ইউনিয়নের পলি শিবনগর গ্রামের ভ্যানচালক একরামুল সরদারের ছেলে সবুজ সরদারের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে অর্থের অভাবে। তার তৈরি ড্রোন দিয়ে সার ছিটানো, কীটনাশক স্প্রেসহ বিভিন্ন কাজ করা যায়। নতুন উদ্ভাবন দেখতে প্রতিদিন তার বাড়িতে ভিড় করছেন উৎসুক মানুষ।

চালকবিহীন ছোট প্লেনের পর এবার আবাদি জমিতে কীটনাশক স্প্রেসহ শুকনা রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা সম্ভব এমন ড্রোন বানিয়েছে সে। রিমোটের সাহায্যে এবং জিপিএসের মাধ্যমে দূর থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় এই ড্রোনটি। সে এটির নাম দিয়েছে কিষানি ড্রোন। এই ড্রোন তৈরিতে তার খরচ পড়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা।

সবুজ সরদার ফুলবাড়ী কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২১ সালে এসএসসি পাস করে দিনাজপুর উত্তরণ পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হন। কিন্তু অর্থের অভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি। গ্রামের একটি দোকানে মোবাইল মেকানিকের কাজ করে সে। এর আগে শখের বশে মাত্র ৪৫ দিনে একটি চালকবিহীন ছোট বিমান তৈরি করেছিল সে।

গত ইরি-বোরো মৌসুমে ক্ষেতে কীটনাশক ছিটাতে গিয়ে এক কৃষি শ্রমিকের অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়া দেখে তার মাথায় আসে ঝুঁকিবিহীন কীভাবে কীটনাশক স্প্রে করা যায়। সেই চিন্তা থেকেই শুরু হয় তার দ্বিতীয় প্রজেক্টের কাজ। তিন মাসের প্রচেষ্টায় সফল হয় সবুজ, তৈরি হয় ড্রোন। যে ড্রোন দিয়ে ধানক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করা সম্ভব। তার উদ্ভাবিত ড্রোনটি রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমের মাধ্যমে অনায়াসে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। একই সঙ্গে এটাতে সংযোগ করা হয়েছে জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম)। এতে যে কোনো জায়গায় বসেই এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। 

সরেজমিন উপজেলার পলি শিবনগর গিয়ে দেখা যায়, চালকহীন একটি ড্রোন ফসলের মাঠে স্প্রে করছে। তা দেখতে ভিড় জমিয়েছেন এলাকার মানুষ।

সবুজের বাবা একরামুল সরদার জানান, সরকারি সহায়তা পেলে ছেলেটা আরও ভালো কিছু করতে পারত। 

সবুজের এলাকার ইউপি সদস্য মো. শাহিন সরদার বলেন, সবুজের এই আবিষ্কার যদি সরকারিভাবে কাজে লাগানো যেত, তাহলে সারাদেশের কৃষকের উপকার হতো।

নিজের উদ্ভাবন সম্পর্কে সবুজ সরদার বলেন, আমার তৈরি ড্রোনটির ধারণক্ষমতা ২ লিটার। একবার চার্জ করলে ৩০ মিনিট উড়তে পারে। তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। আরও ৪০-৫০ হাজার টাকা যোগ করলে ২০-২৫ লিটার তরল পদার্থ নিয়ে উড়তে এবং স্প্রে করতে পারবে ড্রোনটি। চলবে কয়েক ঘণ্টা। একই সঙ্গে ঘণ্টায় ১০ একর জমিতে কীটনাশক স্প্রে করা সম্ভব। শুধু কৃষিকাজ নয়, এই ড্রোনের মাধ্যমে পুকুর বা জলাশয়ে মাছের খাবার, খোল ছড়ানো যাবে। স্প্রে করা যাবে আম, লিচুসহ যে কোনো ফলমূলের বাগান ও সবজি ক্ষেতে।

পড়ালেখার বিষয়ে জানতে চাইলে সবুজ সরদার জানায়, অর্থের অভাবে বেসরকারি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে পড়তে পারেনি। তার এক বছর নষ্ট হয়েছে। আগামীতে সে ফুলবাড়ী উপজেলার যে কোনো একটি কলেজে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা শুরু করবে। তার উদ্ভাবনী কিষানি ড্রোনের জন্য কোনো কোম্পানি বা সরকার এগিয়ে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা তার।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫