ধ্বংসস্তূপ ছাতক-সিলেট রেলপথ, অরক্ষিত কোটি টাকার সম্পদ

জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া, সুনামগঞ্জ
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫:১৭

দীর্ঘদিন ধরে ছাতক-সিলেট রেলপথে ট্রেন চলাচল করে না। ছবি: সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
২০২০ সালের ২৩ মার্চ থেকে করোনার দোহাই দিয়ে ছাতক-সিলেট ৩৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। এর মধ্যে চলতি বছরের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে বন্ধ এ রেলপথটির আরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে এ রুটে পুনরায় রেল চলাচল নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। বন্যার পানি কমে গেলেও সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে ছাতক-সিলেট রেলপথে ট্রেন চলাচল না করায় সম্পূর্ণ রেল পথটি ও রেলের জায়গাসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ এখন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পানির তীব্র স্রোতে রেললাইনের অধিকাংশ স্থানে সরে গেছে স্লিপারের নিচের মাটি, পাথর। বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। রেলের স্লিপারের নিচের কোটি টাকার পাথরগুলো রাস্তার পাশে বিশাল স্তূপ হয়ে পড়ে আছে। এতে বাঁকা হয়ে ঝুলে আছে রেললাইন। আফজলাবাদ রেলস্টেশন থেকে ছাতকবাজার পর্যন্ত রেললাইনের অবস্থা খুবই নাজুক। চুরি হচ্ছে স্লিপার ও কাঠ। এছাড়াও অরক্ষিত রেললাইনের পাশে সরকারি জায়গায় দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দেওয়া, বালুর স্তূপ ও গাছ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
গোবিন্দগঞ্জ রেল গেটের পাশে রেলের সরকারি জায়গা দখল করে অনেকগুলো দোকান নির্মিত হয়েছে। ৩টি দোকান ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে সাড়ে ৯ হাজার টাকা পকেটস্থ করছেন গেটম্যান।
গত ২ সেপ্টেম্বর রেল গেট সংলগ্ন ৩৯৮/৩ থেকে ৪-এর সীমানায় রেলের সরকারি জায়গায় দুই লাখ টাকা মূল্যের ৫টি অর্জুন গাছ কর্তন করা হয়েছে। ছাতক বাজার রেল কলোনিতে ২৩টির অধিক পরিবার অবৈধভাবে বসবাস করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৪ সালে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন থেকে পশ্চিম-উত্তরে সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার ছাতক বাজার রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ৩৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাথর, বালি, চুনাপাথর ও কমলাসহ মালামাল আনা-নেওয়ার জন্যই রেলপথটি নির্মাণ করা হয়। এর আগে এটি ছিল আখাউড়া-কুলাউড়া-সিলেট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। সে সময় ট্রেনই ছিল একমাত্র ভরসা। শুরু থেকেই রেল বিভাগের রাজস্ব আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ও ১৯৭৯ সালে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের রাজস্ব আয়ে ছাতক বাজার স্টেশন শ্রেষ্ঠত্বের স্থান দখলে করে নেয়।
এলাকাবাসী জানায়, করোনা মহামারির আগ পর্যন্ত সচল ছিল এ রেলপথ। সিলেট থেকে ছাতকে ট্রেনের ভাড়া ১০ টাকার বিপরীতে বাসের ভাড়া বর্তমানে ৬০ টাকা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া ৮০-১০০ টাকা। সুনামগঞ্জ জেলার সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প ও সহায়তার চাল-গমসহ বিভিন্ন পণ্য এ রেলপথে পরিবহন করা হতো। এখন রেল চলাচল তো দূরের কথা রেললাইনই ঠিক নেই। মেরামত কবে হবে তার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। গুরুত্বপূর্ণ এ রেলপথ দ্রুত সংস্কার করা না হলে স্লিপার ও বিভিন্ন সরঞ্জাম চুরি হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
রেল বিভাগের সিলেটের আইডব্লিউর সুপারভাইজার শহিদুল ইসলাম বলেন, কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়া সরকারি গাছ কাটার কোনো বৈধতা নেই। গেটম্যানের দোকান তৈরি করে ভাড়া তোলাসহ অন্যান্য বিষয় খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ছাতক-সিলেট রেলপথটি সংস্কার ও চালুর ব্যাপারে শিগগিরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।