১৩ বছর যান না কর্মস্থলে
ডাক্তার না হয়েও বাড়িতেই চেম্বার খুলে রোগী দেখেন বিকাশ বাবু!

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২২, ১৫:৩৬

অভিযুক্ত বিকাশ বাবু বাড়িতে চেম্বারে খুলে নিয়মিত রোগী দেখে আসছেন।
গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফার্মাসিস্ট বিকাশ কুসুম বিশ্বাস দীর্ঘ ১৩ বছর কর্মস্থলে যান না। ডাক্তার না হয়েও নিজ বাড়িতেই চেম্বার খুলে নিয়মিত দেখেন রোগী, দেন ব্যবস্থাপত্রও। পদে ফার্মাসিস্ট হলেও উপজেলায় বেশ পরিচিতি অর্জন করেছেন ‘ডাক্তার বিকাশ বাবু’ হিসেবে। দফায় দফায় চেষ্ট করেও তাকে কর্মস্থলে ফেরানো সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
সরেজমিনে উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামের বসুন্ধরা পাড়ার পুরাতন ফুলছড়ি থানা সংলগ্ন বিকাশ কুসুম বিশ্বাসের বাড়িতে গিয়ে একটি চেম্বার দেখা যায়। চেম্বারে প্রবেশ করে দেখা যায় বেশ কয়েকজন রোগী। যাদের ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছেন ফার্মাসিস্ট বিকাশ কুসুম বিশ্বাস। দেখছেন রোগীর পরীক্ষার রিপোর্টও। এ সময় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে বাড়ির ভেতরে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ নিজেকে আড়ালে রাখেন তিনি।
কিন্তু একজন ফার্মাসিস্টকে সরাসরি চিকিৎসাসেবার আদেশ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানান স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। শুধু তাই নয়, এর আইনগত বৈধতাও নেই। এছাড়া তাকে গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের একটি রুমে বসে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলা হলেও দীর্ঘ তের বছরের এক দিনও তিনি ইউনিয়ন পরিষদে দায়িত্ব পালন করেননি বলে জানান ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ বাবু লাল।
বাবু লাল বলেন, আমি এই ইউনিয়ন পরিষদে ২০০৬ সাল থেকে চাকরি করি। বিকাশ বাবুকে একদিনও পরিষদে চিকিৎসা দিতে দেখিনি।
গজারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খোরশেদ আলী খান খুশু বলেন, আমি গত সাত মাস হলো দায়িত্ব নিয়েছি। এর মধ্যে বিকাশ বাবু একদিনও আমার পরিষদে কোনো রোগী দেখেননি।
গাইবান্ধার সিভিল সার্জন ডা. আ. ম. আখতারুজ্জামান বলেন, এমন বিষয় এর আগে আমাকে জানানো হয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুজ্জামান বলেন, ওই চিঠির আদেশেই আমরা তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। তবে এর মধ্যে কয়েক দফায় ফার্মসিস্ট বিকাশ কুসুমকে হাসপাতালে এসে দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি কোনো কর্ণপাত করেননি।
গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, ফার্মাসিস্টদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার সুযোগ নেই। ডাক্তার না হয়েও ব্যবস্থাপত্র দেওয়া এবং দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।