Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

গারো পাহাড়ে গোলাপ ফুলের রঙিন হাসি

Icon

রফিক মজিদ, শেরপুর

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২২, ১৪:০৭

গারো পাহাড়ে গোলাপ ফুলের রঙিন হাসি

সন্ধ্যাকূড়া গ্রামে নিজের বাগানে গোলাপ ফুল হাতে মোহাম্মদ আলী। ছবি: শেরপুর প্রতিনিধি।

শেরপুরের গারো পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়ছে নানা রঙের গোলাপ ফুলের হাসি। এবারই প্রথমবারের মতো সীমান্তবর্তী এই এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে এই ফুল চাষ করা হচ্ছে।

ব্যতিক্রমী এ ফুলের চাষে যেমন অনাবাদি জমি চাষ যোগ্য হচ্ছে, তেমনি এলাকার মানুষের বাড়তি আয়ের সম্ভাবনাও উজ্জল হয়ে উঠেছে। সেইসাথে স্থানীয় বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে।

জানা গেছে, শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী, ঝিনাইগাতি ও নালিতাবাড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় শত শত একর জমিতে সেচ সংকট ও হাতির উপদ্রোপের কারণে অনাবাদি থাকে। সম্প্রতি ওইসব জমিতে হাতির উপদ্রোপ থেকে বাঁচতে কেউ কেউ কাটাযুক্ত লেবু বাগান এবং কেউ কেউ দেশি-বিদেশি নানা ফুল-ফলের বাগান করেছে।

তবে জেলার ঝিনাইগাতি উপজেলার ভারত সীমান্তঘেষা সন্ধ্যাকূড়া গ্রামের মোহাম্মদ আলী নামে এক ফুল ব্যবসায়ী এবার বাণিজ্যিকভাবে ব্যতিক্রমী নানা রঙ ও প্রজাতির গোলাপ চাষ শুরু করেছে।

ফুল চাষি মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি দীর্ঘদিন থেকে ঢাকার শাহবাগ মোড়ে পাইকারি ফুলের ব্যবসা করে আসছেন। ফুল নিয়ে আসতেন ভারত ও যশোর থেকে। এক পর্যায়ে মোহাম্মদ আলী চিন্তা করেন তার গ্রামের বাড়ি পাহাড়ি এলাকায় অনেক অনাবাদি জমি রয়েছে।

সন্ধ্যাকূড়া গ্রামে নানা রঙের গোলাপ ফুলের বাগান। ছবি: শেরপুর প্রতিনিধি। 

সেখানে বন্য হাতির অত্যাচারে খুব একটা চাষাবাদ কর যায় না। সামান্য কিছু সবজি ও হাতির অপ্রিয় কাঁটা যুক্ত বিভিন্ন প্রজাতির লেবু চাষা করা হয়। সেই চিন্তা থেকে গত ৬ মাস আগে চলে যান গ্রামে। স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১ একর ২৫ শতক পতিত জমি সাড়ে ৩ লাখ টাকায় দশ বছরের জন্য লিজ নেন।

এরপর ভারতের চেন্নাই ও যশোর থেকে ৫ রঙের প্রায় ১৭ হাজার ফুলের চারা কিনে এনে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ শুরু করেন। মূলত এক বছরের মাথায় ফুলের গাছে পরিপূর্ণ বা শীত মৌসুমে এ ফুলের পরিপূর্ণতা পাওয়ার কথা থাকলেও, মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় গাছগুলোতে ফুল ফুঁটতে শুরু করেছে।

ফলে গত একমাস যাবৎ বাণিজ্যিকভাবে ঢাকার পাইকারি বাজারে একদিন পরপর ফুল বিক্রি শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পেয়েছেন।

মোহাম্মদ আলী আরো জানান, তার এ বাগান করতে সবকিছু মিলিয়ে প্রায় ১৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। বাগান দেখাশোনা করার জন্য নিয়মিত ৩ জন কর্মচারি বা শ্রমিক রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের বেতন ধরা হয়েছে ১৫ হাজার টাকা করে। বাগানের নিড়ানী, আগাছা পরিস্কার, পানি দেয়াসহ নানা পরিচর্যা করে থাকেন তারা। 

মোহাম্মদ আলীর আশা, আগামী শীতের মধ্যে ফুলের পরিমাণ আরো বাড়বে এবং তার আয়ও বাড়তে শুরু করবে। তার মতে, যদি আরো উদ্যোক্তা পাহাড়ি এলাকায় এভাবে ফুল চাষ শুরু করে তাহলে শেরপুরে যে ফুল যশোর ও সাভার থেকে আসে তা আর আনতে হবে না।

নিজের জেলার ফুল দিয়েই তাদের চাহিদা মেটাতে পারবে। এতে এলাকায় নতুন কর্মসংস্থান তৈরির পাশপাশি হাতির উপদ্রবও কমে আসবে। কারণ, হাতি বরাবরই কাঁটাযুক্ত গাছ পরিহার করে চলাচল করে। 

এছাড়া তার এ ফুল চাষের কথা আশাপাশের অনেকেই জেনে বাগান দেখতে আসছে এবং তারাও তাদের পতিত জমিতে এধরনের লাভজনক ফুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। স্থানীয় বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখতে আসা পর্যটকরাও এ বাগান পরির্দশনে আসছেন।

বাগানের জমির মালিক মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, জমিটি আমার দীর্ঘদিন থেকে পতিত পড়ে ছিল। তাই আমি ভাড়া দিয়েছি। পাশেই আমি এবার হাতির অপছন্দের কাঁটাযুক্ত লেবুর বাগান করেছি। গোলাপ বাগানও কাঁটাযুক্ত। তাই ভাবছি আমার আরো জমি রয়েছে, সেখানে এধরনের গোলাপ বাগান করবো।

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার জানান, গোলাপ ফুল চাষ বেশ লাভজনক। এবারই প্রথম আমাদের পাহাড়ি পতিত জমিতে এধরনের আবাদ শুরু করা হয়েছে।

সন্ধ্যাকূড়া গ্রামে মোহাম্মদ আলী যেভাবে গোলাপ ফুল চাষ শুরু করেছে তা প্রাথমিকভাবে সফল হয়েছে। আমরা তাকে সবসময় নানা সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছি। আশা করছি তাকে দেখে স্থানীয় উদ্যোক্তারা ফুল চাষ করলে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হবে। সেইসাথে পরিবেশ ও ফসলের বৈচিত্রও সমৃদ্ধ হবে।

সন্ধ্যাকূড়া গ্রামে নানা রঙের গোলাপ ফুলের বাগান। ছবি: শেরপুর প্রতিনিধি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫