Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

সেবা প্রত্যাশী নারীকে অশ্লীল গালাগাল: এসআই প্রত্যাহার

Icon

নোয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২২, ১৪:১২

সেবা প্রত্যাশী নারীকে অশ্লীল গালাগাল: এসআই প্রত্যাহার

কোম্পানীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মো. রতন মিয়া। ছবি: নোয়াখালী প্রতিনিধি

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে রেস্তোরাঁয় বৈঠক বসতে অসম্মতি জানালে সেবা প্রত্যাশী এক নারীকে (৫৭) পুলিশের উপ-পরিদর্শকের অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করার ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। 

এ ঘটনায় রবিবার (১৬ অক্টোবর) রাতে কোম্পানীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রতন মিয়াকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত (প্রত্যাহার) করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী সেতারা বেগম কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের আকবর হাজী বাড়ির মৃত আবুবক্কর ছিদ্দিকের স্ত্রী।

গত শনিবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে কোম্পানীগঞ্জ থানার প্রধান ফটকে ও মুঠোফোনে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর দিন সকালে ভুক্তভোগী ওই নারীকে বাড়ি গিয়েও হুমকি ধমকি দিয়ে শাসিয়ে এ ঘটনা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে বারণ করেন এসআই রতন। 

এমন আচরণে প্রত্যক্ষদর্শী এবং সাধারণ মানুষের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। 

ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করে বলেন, ৭ মাস আগে তার ছেলে নুরনবীকে (২৭) প্রতারণা করে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সৌদি নিয়ে ৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডের মেহের আলী কামলা বাড়ির সৌদি প্রবাসী সাইফুল ইসলাম। কথা ছিল সাইফুল সৌদি নিয়ে আমার ছেলেকে আবাসিক হোটেলে চাকরি দেবে। বেতন হবে ১ হাজার ৮০০ রিয়াল। কিন্তু তিন মাস একটা রুমে রাখে চাকরি না দিয়ে। গত ৭ মাসেও তিনি আমার ছেলেকে কোনো চাকরি দিতে পারেনি। একপর্যায়ে আকামা করার জন্য পুনরায় ১ হাজার রিয়াল নেয়। এখানেও সাইফুল প্রতারণা করে আমার ছেলেকে খুরুজ লাগানো আকামা দেয়। এ কারণে কেউ তাকে আকামা দেখে কাজ দেয় না।  

তিনি আরো জানান, এসব প্রতারণার অভিযোগ তুলে গত ১৫-২০ দিন আগে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। বিবাদী করা হয় সৌদি প্রবাসী সাইফুল ইসলামের মা-বাবা ও স্ত্রীকে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি এ অভিযোগের তদন্ত করার দায়িত্ব দেন এসআই রতনকে। সমস্যার সমাধান করতে রতন আমাদের কাছে ৫ হাজার টাকা দাবি করে। পরে তাকে ২ হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা পরে দেওয়ার কথা ছিল। 

ওই নারী বলেন, গত শুক্রবার প্রথম বৈঠকে থানায় বিবাদী পক্ষের কেউ আসেনি। দ্বিতীয় বৈঠক বসার জন্য এসআই রতন বিবাদীদের বাড়িতে গিয়ে বৈঠকে বসার বিষয়ে অবহিত করে আসেন। তারপর গত শনিবার সন্ধ্যার দিকে এসআই রতন বাদীকে ফোন দিয়ে জানায় থানায় কোনো বৈঠক হবে না। বৈঠক হবে বসুরহাট বাজারের হক হোটেলে। এ নিয়ে অভিযোগকারী নারী রেস্তোরাঁয় গিয়ে বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জানালে এসআই রতন ওই নারীকে মুঠোফোনে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। তখন মুঠোফোনে ওই নারী এসআই রতনকে জানায় থানায় অভিযোগ করেছি বৈঠকও থানায় হবে। এরপর এসআই তাকে থানার গেইটে আসতে বলে। সেবা প্রত্যাশী নারী থানার গেইটের ভিতরে প্রবেশ করলে পুনরায় তিনি ওই নারীকে বিশ্রী ভাষায় প্রকাশ্যে সাধারণ মানুষের সামনে গালমন্দ করে। যা লেখার অযোগ্য। পরে ওই নারী কাঁদতে কাঁদতে থানা থেকে চলে যায়। 

ভুক্তভোগী অভিযোগ করে আরো বলেন, একজন মাকে তার ছেলের সামনে প্রকাশ্যে এভাবে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা গালাগাল করতে পারে। যা সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। ওই নারী আরো জানান তিনি আতঙ্কে গত দুইদিন যাবত কিছুই খাননি। এ ঘটনায় তিনি এসআই রতনের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেন বাংলাদেশ পুলিশ প্রধানের কাছে। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রতন মিয়া বলেন, ওই নারী থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। তার মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি বিষয়টি সমাধান করতে চেয়েছিলেন। তবে হোটেলে বৈঠকে না যাওয়া তিনি রাগের মাথায় একটু উত্তেজিত হয়ে ওই নারীর সাথে ব্যবহার করেছিলেন বলে দাবি করেন। তবে ওই নারীর বাড়িতে গিয়ে তাকে শাসানো হয়নি এবং টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন।    

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাদেকুর রহমান উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রতন মিয়াকে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত (প্রত্যাহার) করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

তিনি বলেন, ভুক্তভোগী নারী কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও সম্পর্কের কারণে বিষয়টি সমাধানে এসআই রতন তৎপর ছিল। কিন্তু গালাগালের যে ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়েছে তা দুঃখজনক। গতকাল রাতেই তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫