
নিজ পেরিলা ক্ষেতে কৃষক।
দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে অপার সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে তেল ফসল পেরিলা। দেশে দিন দিন বাড়ছে ভোজ্যতেলের চাহিদা। প্রয়োজনের তুলনায় উৎপাদন কম হওয়াতে বাড়ছে আমদানি ব্যয়। পেরিলা চাষের মাধ্যমে কিছুটা হলেও ভোজ্যতেলের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব।
দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলায় প্রথম পেরিলা চাষ শুরু করেন সৈয়দ রোকনুজ্জামান। তিনি উপজেলার ১ নম্বর নাফানগর ইউনিয়নের বড় সুলতানপুরে ১২ একর জায়গায় লিজ নিয়ে তেল ফসল পেরিলা চাষ শুরু করেছেন। পেরিলা গবেষক মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম মজুমদারের কাছ ২০২১ সালে পেরিলা বীজ সংগ্রহ করে তার পরামর্শে তেল ফসল পেরিলা চাষ শুরু করেন। আশা করছেন এবার তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি করতে পারবেন।
ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত আনুমানিক ব্যয় পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা হবে। ধারণা করা হচ্ছে দশ লাখ টাকার মতো তেল ফসল পেরিলা বিক্রয় করতে পারবেন। খুব কম সময়ের ফসল পেরিলা। তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ফসল সংগ্রহ করা যায়।
জানা যায়, উচ্চ গুণসম্পন্ন ও উচ্চমূল্যের একটি ভোজ্যতেল ফসল পেরিলা। ইতোমধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে নতুন এই তেল ফসলটি নিবন্ধন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড। পেরিলা লেমিয়াসি (মিন্ট ক্রপ) পরিবারের একটি ফসল। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তথা দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, চীন, নেপাল, ভিয়েতনাম এবং ভারতের কিছু অঞ্চলে চাষ হয়ে থাকে। মূলত ২০২০ সালে দীর্ঘ সময় গবেষণার পর দেশের ১৪টি জেলায় সফলভাবে এর পরীক্ষামূলক চাষ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে দেশের ৫০টিরও বেশি জেলায় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় পেরিলা। চলতি বছরেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় পেরিলা চাষ হচ্ছে। উচ্চ গুণসম্পন্ন এই তেল আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে প্রতি লিটার ২১শ থেকে ২৫শ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়। তেল ভাঙা সরিষার মিলগুলোতে পেরিলা তেল বের করা যায়।
পেরিলা তেলের শতকরা ৬৫ ভাগই ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। যা হার্টের জন্য খুব উপকারী। মোট ফ্যাটের শতকরা ৯১ ভাগ অসম্পৃক্ত। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এই অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। বিশেষত হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক ও ত্বকসহ ডায়াবেটিস রোগ প্রতিরোধে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখে।
কৃষি উদ্যোক্তা সৈয়দ রোকনুজ্জামান বলেন, পেরিলা বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে চাষ হচ্ছে। এটি নিয়ে গবেষণা করছেন আবদুল কাইয়ুম মজুমদার। দেশে এটার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। আমি এটা নিয়ে ২০২১ সালে কাজ শুরু করি। ভোজ্যতেল হিসেবে এর গুণ খুব উচ্চমানের। আন্তর্জাতিক বাজারে খুব চাহিদা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করব অদূর ভবিষ্যতে এর চাষ যেন সারাদেশে সম্প্রসারণ করা যায়। পেরিলা চাষে সবাই যেন এগিয়ে আসে।