ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: খুলনায় ৪০৯ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত

খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২২, ১৭:২৮

খুলনায় দমকা বাতাসের সাথে মাঝারি বৃষ্টিপাত। ছবি: খুলনা প্রতিনিধি
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা খুলনায় দমকা বাতাসের সাথে মাঝারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। গতকাল রবিবার রাত ১২টা থেকে আজ সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ৯টা পর্যন্ত ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটসহ উপকূলের ১৯টি জেলায় আঘাত হানতে পারে বলে আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাঙ্গের প্রভাবে খুলনা অঞ্চলে রবিবার দুপুর থেকেই আকাশ মেঘলাসহ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। রাত ১২টার পর থেকে দমকা বাতাসের সাথে মাঝারি আকারে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।
তিনি জানান, রবিবার রাত ১২টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দুপুর ১২টার পর থেকে বৃষ্টিপাত আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে, খুলনা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানি এড়াতে খুলনা জেলার ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫০ জনের জন্য ৪০৯টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সাইক্লোন শেল্টারের মধ্যে সুন্দরবন সংলগ্ন দাকোপ উপজেলায় ১১৮টি, কয়রা উপজেলায় ১১৭টি, বটিয়াঘাটা উপজেলায় ২৭টি, ডুমুরিয়া উপজেলায় ২৫টি, পাইকগাছা উপজেলায় ৩২টি, তেরখাদা উপজেলায় ২২টি, রূপসা উপজেলায় ৩৯টি, ফুলতলা উপজেলায় ১৩টি ও দিঘলিয়া উপজেলায় ১৬টি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
অপরদিকে, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এর প্রভাবে খুলনার কয়রা উপজেলার হরিণখোলা ও গাতিরঘেরী নামক স্থানে বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সোমবার ( ২৪ অক্টোবর) ভোরে হঠাৎ করে কয়রার কপোতাক্ষ নদের তীরের হরিণখোলা বেড়িবাঁধ ও শিবসা নদীর তীরে গাতিরঘেরী বেড়িবাঁধে ধস শুরু হয়। এতে ফসল, ঘরবাড়ি সব নোনা পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ঘিরে আতঙ্ক বিরাজ করছে উপকূলীয় অঞ্চলে। ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধের তীরে বসবাসকারীদের মাঝে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ভর করেছে
বেড়িবাঁধের তীরে বসবাসকারীদের মাঝে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ভর করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বাঁধের যা অবস্থা, ঘূর্ণিঝড় হলে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়া ছাড়া আমাদের নিস্তার নেই।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, হরিণখোলা বেড়িবাঁধে মারাত্মক ভাঙন দেখা দিয়েছে।
খুলনার কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়রার হরিণখোলা ও গাতিরঘেরীর বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয়দের নিয়ে মেরামতের কাজের প্রস্তুতি চলছে। এছাড়া কয়রায় হোগলা, দোশহালিয়া, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট, ঘাটাখালী, গাববুনিয়ার, আংটিহারা, ৪ নং কয়রা সুতির গেট ও মঠবাড়ির পবনা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। প্রত্যেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের বলা হয়েছে স্ব স্ব এলাকার বাঁধের দিকে খেয়াল রাখার জন্য। সাইক্লোন শেল্টারগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
কয়রা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসানুল বান্না জানান, ঘূর্ণিঝড় মঙ্গলবার ভোরের দিকে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। সোমবার ভোর থেকে কয়রায় ৩০/৩৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। মধ্যরাত থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় রিপোর্ট প্রদানে সমস্যা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় বেড়িবাঁধ রয়েছে মোট ১ হাজার ৯১০ কিলোমিটার। ষাটের দশকে মাটি দিয়ে তৈরি এই বেড়িবাঁধ ছিল ১৪ ফুট উঁচু ও ১৪ ফুট চওড়া। এখন এই ২৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের উচ্চতা ও চওড়ার অর্ধেকও অবশিষ্ট নেই। তবে স্থানীয়দের ভাষ্য ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের পরিমাপ আরো বেশি।
খুলনার জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। জরুরি শুকনা খাবার প্রস্তুত রাখা, সাইক্লোন শেল্টারে যারা আসবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আগতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য কাজ চলছে।
তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিশেষ কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে তাদের যাতে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া যায় সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২০ মে সুপার সাইক্লোন আমফানের আঘাতে খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, সাতক্ষীরার, শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলায় খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলায় ৬৫ জন মৃত্যুবরণ করে। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে জেলার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।