
টাংগুয়ার হাওর। ছবি: সংগৃহীত
বিশাল হাওরের মধ্যে একখণ্ড উঁচু ভূমি, চারপাশে হাওরের পানি। নেই সড়কপথ, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন পাশের গ্রামের সাথেও। সেখানেই বসতবাড়ি তৈরি করে শত শত পরিবার বসবাস করছে বংশ পরম্পরায়। শুষ্ক মৌসুমে মাটির সড়ক দিয়ে হেঁটে কোনো রকমে চলাচল করতে পারলেও বর্ষায় একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম নৌকা।
তাই জেলা বা উপজেলার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও উন্নয়নবঞ্চিত। আর সরকার তাদের জন্য কী পরিমাণ বরাদ্দ দিয়েছে তা-ও তারা জানে না। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ওইসব গ্রামের বাসিন্দারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থান- মৌলিক তিনটি অধিকার থেকে যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত। হাওর নিয়ে কাজ করা সংগঠনের ভূমিকাও নামমাত্র। ফলে হাওরবাসীর কথা বলার কেউ নেই।
এমনি চিত্র দেখা যায় হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওরপাড়ের ৬৮টি গ্রামের। শুধু টাংগুয়ার হাওর নয়; মাটিয়ান, শনি হাওরসহ বিভিন্ন হাওরবেষ্টিত উত্তর শ্রীপুর, দক্ষিণ শ্রীপুর, দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের গ্রামগুলোতেও একেই চিত্র দেখা গেছে।
হাওরপাড়ের বাসিন্দারা জানান, হাওর নিয়ে কাজ করা কিছু সংগঠনের নেতা কোনো কাজই করছেন না। তারা শুধু বছরে দু- একবার হাওরে আসেন, তা-ও আবার বোরো আবাদের সময়। তখন বাঁধ নির্মাণ করার জন্য ব্যানার নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। আর দেখা যায় বন্যা বা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়। তবে মাঝে মধ্যে কিছু সভা- সেমিনারে কথা বললেও সারা বছরই নিস্ক্রিয় থাকেন। হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের জীবন- জীবিকা, যোগাযোগ ও শিক্ষা নিয়ে জোরালোভাবে কোনো পদক্ষেপ বা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে তাদের দেখা যায় না।
হাওরবেষ্টিত দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মোরাদ জানান, হাওরের বিশাল জনগোষ্ঠীর বছরের ৬ মাস বর্ষায় মাছ ধরে কোনো রকমে চলে কিছু পরিবার, বাকি সবাই বেকার আর শুষ্ক মৌসুমে বোরো ধান চাষাবাদ করেই জীবন- সংসার চালাচ্ছে। বিকল্প কাজের কর্মসংস্থান নেই ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় যুগ যুগ ধরে এই হাওরপাড়ের মানুষ অবহেলিত। তাদের জন্য আলাদাভাবে সরকারি বরাদ্দ ও সুযোগ- সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। আমার ইউনিয়নের অবহেলিত হাওরপাড়ের গ্রামের মানুষদের সর্বোচ্চ সহায়তা করছি।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, সারা দেশে সরকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। হাওরাঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সরকার। আশা করছি খুব শিগগিরই হাওরবাসীর জীবন-জীবিকার উন্নয়ন হবে। আমার উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা করা হচ্ছে হাওরপাড়ের মানুষদের।