Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

পার্চিং পদ্ধতিতে বাড়ছে ফসল উৎপাদন

Icon

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২২, ১৫:২২

পার্চিং পদ্ধতিতে বাড়ছে ফসল উৎপাদন

পার্চিং পদ্ধতি। ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে পার্চিং পদ্ধতিতে ধান আবাদ। আবাদকৃত জমির ধান ক্ষেতে ক্ষতিকর পোকা দমনের ওই প্রাকৃতিক পদ্ধতির নাম ‘পার্চিং’। এ পদ্ধতি পরিবেশবান্ধব ও লাভজনক। স্থানীয় কৃষকরা এ পদ্ধতিতে ধান আবাদ করায় বাড়ছে তাদের ফসল উৎপাদন।

কৃষকরা কীটনাশক প্রয়োগ না করেও মাজরা পোকা ও পাতামোড়ানো পোকা দমন করছে। কীটনাশক ব্যবহার কমানোর ফলে তাদের  উৎপাদন খরচ কম আসছে। পাশাপাশি অন্য সময়ের তুলনায় জমিতে ফলন বৃদ্ধি পাওয়ায় এ পদ্ধতির দিকে স্থানীয় কৃষকরা ঝুঁকছেন।  

উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা জানান, পার্চিং মানে আবাদকৃত ধান জমিতে ডালপালা পুঁতে দেওয়া। ফসলের জমিতে ডাল, কঞ্চি, বাঁশের খুঁটি এগুলো পুঁতে পাখি বসার ব্যবস্থা করায় পাখি ক্ষতিকর পোকার মথ, বাচ্চা, ডিম খেয়ে পোকা দমন করে। মূলত ফিঙে, শালিক, বুলবুলি, শ্যামা, দোয়েল, সাত ভায়রা- এসব পাখি পার্চিংয়ে বসে পোকা ধরে খায়। ফসলের পোকা দমনের এ পদ্ধতি বলতে গেলে পরিবেশবান্ধব। ফসল রোপণের পরপরই পার্চিং স্থাপন করতে হয়। ফসলের সর্বোচ্চ উচ্চতা থেকে কমপক্ষে এক ফুট উচ্চতায় পার্চিং করা উচিত বলে তারা জানান। 

পৌর শহরসহ উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান  আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ উপজেলা শতভাগ পার্চিংয়ের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। বর্তমানে প্রায় ৬৫ শতাংশ জমিতে পার্চিং হয়েছে। দিন দিন পার্চিং পদ্ধতি উপজেলার কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে। আগে স্থানীয় কৃষকরা ধান লাগানোর পর জমিতে পার্চিং করতে চাইত না। ফলে তাদের জমিতে ফলনও কম হতো। বর্তমানে এ পদ্ধতি কৃষকদের খুবই উপকারে আসছে, আগের চেয়ে ফলনও বাড়ছে। তবে পার্চিং পদ্ধতির আরেকটি সুবিধা হলো পাখির বিষ্ঠা জমিতে জৈব পদার্থ যোগ করে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এই পদ্ধতিতে ফসলি জমিতে পোতা ডালগুলোর ওপর পাখি বসে ফসলি জমির ক্ষতিকারক পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলায় কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। যার ফলে অধিক ফলন পাওয়া যায়। 

সরেজমিন পৌর শহরের তারাগন, দেবগ্রাম, উপজেলার মোগড়াসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে আমন জমিতে স্থানীয় কৃষকরা বাঁশের আগা, কঞ্চি, গাছের ডাল প্রভৃতি পুঁতে দিয়েছেন। অনেকে এখনো ডাল পুঁতছেন। অনেক জমির আলের পাশে এবং জমির মাঝখানে সারিবদ্ধভাবে ধঞ্চে লাগানো হয়েছে। এসব পার্চিংয়ে ফিঙে, শালিক প্রভৃতি পাখি বসে থাকতেও দেখা যায়।

মোগড়া এলাকার কৃষক মো. সুরুজ মিয়া জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ৬ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন। গত কয়েক বছর ধরে তিনি এ পদ্ধতিতে ধান চাষ করছেন। এ পদ্ধতিতে ধান চাষের পর থেকে প্রয়োজনে কম কীটনাশক ব্যবহার করে ধান উৎপাদন করছেন। এ পদ্ধতিতে চাষ করায় তার ফলনও ভালো হচ্ছে বলে জানান। 

কৃষক মো. আব্দুল আলিম মিয়া বলেন, জমিতে ধান আবাদ করে প্রতিবছরই লোকসান গুণতে হয়েছে। পোকামাকরসহ নানা কারণে ফলন ভালো হতো না। এ অবস্থায় আমি ধান চাষ থেকে অনেকটাই মুখ ফিরিয়ে নেই। এক পর্যায়ে কৃষি অফিসের পরামর্শে পার্চিং পদ্ধতি চাষ করে ভালো সুফল পাই। কৃষক মো. জমির খান জানান, পোকামাকড়ের কবল থেকে ধানের গাছ রক্ষা করতে চারা লাগানোর পর থেকেই তিনি গাছের ডাল ও কঞ্চি পুঁতে রাখেন। পাখিগুলো ক্ষতিকর পোকামাকড় ধরে খাচ্ছে। 

তিনি আরও জানান, গত ২ বছর ধরে তিনি পার্চিং পদ্ধতিতে ধান আবাদ করছেন। এ পদ্ধতিতে ধান চাষ করে তার উৎপাদনের খরচ কমার পাশাপাশি ফলনও ভালো হচ্ছে। অন্য বছর যেখানে তাকে তিন- চার দফা কীটনাশক ব্যবহার করতে হতো, এ বছর মাত্র একবার তিনি কীটনাশক ব্যবহার করেছেন। গত ২ বছর ধরে তিনি পার্চিং পদ্ধতিতে ধান আবাদ করছেন বলে জানান। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, ক্ষতিকর পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি খুব কার্যকর। এই পদ্ধতি কাজে লাগালে কীটনাশকের ব্যবহার কমে যায়। সেই সাথে কৃষকের উৎপাদনখরচও কম হয়। বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা যায়। প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে পার্চিং পদ্ধতির চাষ। আশা করছি স্বল্প সময়ের মধ্যে পার্চিং পদ্ধতিতে চাষ শতভাগ হয়ে যাবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫