
এসিড নিক্ষেপের শিকার হয়ে আহত দুই যুবক। ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি
সন্ত্রাসীদের হাতে এসিড নিক্ষেপের শিকার হলেন কক্সবাজারের রামুর দুই যুবক। তারা হলেন- টিপু বড়ুয়া (৩৪) ও দীপক বড়ুয়া (৩৩) ।
এক মাস আগেই রাতে বাড়ি ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের ধারালো ছুরি-ক্ষুরের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হন তারা। সেই আঘাতের গা এখনো শুকায়নি। তার মধ্যে সন্ত্রাসীদের এসিডে ঝলসে গেল পুরো শরীর।
গতকাল মঙ্গলবার ( ২৫ অক্টোবর) রাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ঘরে ফেরার পথে রামুর চৌমুহনী স্টেশনের ভিক্টর প্লাজার সামনে প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটে।
তবে তাৎক্ষণিকভাবে হামলাকারীদের শনাক্ত করা না গেলেও পাড়া প্রতিবেশীরা বলছেন, পারিবারিক কলহের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আহতদের ভগ্নীপতি নিকেল বড়ুয়া নামে এক পুলিশ সদস্য পারিবারিক কলহের জের ধরে হত্যার উদ্দেশ্যে একের পর এক এমন ঘটনা ঘটাচ্ছেন।
টিপু রামুর ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের দ্বীপ শ্রীকুল গ্রামের নিরধন বড়ুয়ার ছেলে, আর দীপক একই গ্রামের শুভধন বড়ুয়ার ছেলে।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে বাড়ি ফেরার পথে রামুর শ্রীকুল মৈত্রী বিহারের সামনে এই দুই যুবককে ছুরি ও ক্ষুর দিয়ে গুরুতর আঘাত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় শতভাগ সফল না হওয়ায় ভগ্নীপতি নিকেল বড়ুয়া এবার এসিড সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটিয়েছেন এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের।
দিপক বড়ুয়া জানান, রাতে রামু উপজেলা পরিষদের গেটের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলাম। এসময় রামু বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন ভিক্টরপ্লাজার সামনে পৌঁছালে চলমান একটি সিএনজি অটোরিকশা থেকে কি যেন ছুঁড়ে মারে। এতে মুহূর্তেই আমাদের শরীর ঝলসে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা ধারনা করেছি, দুর্বৃত্তরা এসিড ছুঁড়ে মেরেছে। বর্তমানে গুরুতর আহত অবস্থায় আমরা দুইজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৬ নম্বর বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছি।
চমেক হাসপাতাল বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, টিটু বড়ুয়া ও দিপক বড়ুয়া নামে দুইজন ক্যামিক্যাল বার্ন নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে টিটু বড়ুয়ার ২০ শতাংশ ও দিপক বড়ুয়া ১৫ শতাংশ বার্ন রয়েছে। তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
যেহেতু পোড়া রোগী ৪৮ ঘণ্টার আগে শঙ্কা মুক্ত বলার সুযোগ নেই। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।
আহত টিপু জানান, তার ছোট বোন ইমু বড়ুয়াকে ২০১৬ সালে হাজারীকুল গ্রামের মৃত প্রদীপ বড়ুয়ার ছেলে পুলিশ কনস্টেবল নিকেল বড়ুয়ার সাথে বিয়ে দেন। বিয়ের পর থেকে তার বোনের সাথে পারিবারিক কলহ লেগে আছে। এক পর্যায়ে নিকেল বড়ুয়া ২০১৯ সালে আরেক মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়ায় এবং বিয়ে করে। পরে আমরা তার নামে মামলা করলে ওই মেয়েকে আপোষ মীমাংসা করে ছেড়ে দেয়। বর্তমানে আমার বোন তার সাথে আছে, কিন্তু আমাদের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ নেই।
টিপু আরো বলেন, এরপর থেকে প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে নিকেল বড়ুয়া আমাকে হত্যার জন্য একের পর এক হামলা করছে। ছুরিকাঘাতের মাসখানেক আগে তার গ্রামের রিপন ও কলঘর বাজারের বেলাল নামের দুই বখাটে আমার ঘরে এসে আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে যায়। এর একমাস পর ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। সেই ক্ষত এখনো পুরোপুরি শুকায়নি। এর মাত্র ৩৮ দিনের মাথায় আবার আমদের দুইজনকে এসিড নিক্ষেপ করা হলো। আমার সাথে কারো কোনো ধরনের শত্রুতা নেই, নিকেলই আমাকে হত্যার টার্গেট করে হামলা চালাচ্ছে।
তবে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য নিকেল বড়ুয়া এ ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আমি কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে যাব? আমার মা মারা গেছেন, আজ সাপ্তাহিক সংঘদান ছিল। আমি এসব নিয়ে ব্যস্ত আছি।
এদিকে সেদিনের ঘটনায় রামু থানায় মামলা হলেও এখনো পর্যন্ত ঘটনায় অভিযুক্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
রামু থানার ওসি মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। থানা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছে। তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।