Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: বরিশাল জেলায় ৩১৪১ ঘর বিধ্বস্ত

Icon

বরিশাল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৭ অক্টোবর ২০২২, ১৫:৩১

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং: বরিশাল জেলায় ৩১৪১ ঘর বিধ্বস্ত

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সৃষ্ট জড়ো-বৃষ্টিতে সর্বত্র কৃষি ফসল ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ছবি: স্টার মেইল

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এর প্রভাবে বরিশাল জেলার ৮৭টি ইউনিয়ন দুর্যোগে কবলিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩১৪১টি ঘর-বাড়ি। যার মধ্যে আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ২৫০৮টি ও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ৬৩৩টি ঘর। তাছাড়া ইউনিয়নগুলোতে দুর্গত মানুষের সংখ্যা ৯০ হাজার ৬২১ জন।

অপরদিকে, সিত্রাং বড় ধরনের প্রভা ফেলেছে বরিশালের মৎস্য খামার এবং ফসলের মাঠে। ঘড়ের সাথে স্মরণকালের সর্বোচ্চ জলোচ্ছ্বাসে জেলার মৎস্যখাতে ক্ষতি হয়েছে ২৬ কোটি টাকার বেশি। আর ফসলের মাঠে আমন ধান, পান, পেঁপে ও সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বরিশাল জেলার ১০টি উপজেলায় প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করেছে জেলা প্রশাসন। তাদের হিসাব অনুযায়ী বরিশাল মহানগরসহ সদর উপজেলায় দুর্যোগ কবলিত ইউনিয়নের সংখ্যা ৫টি। দুর্গত মানুষ ১ হাজার ৫০০, বিধ্বস্ত ঘর বাড়ির মধ্যে আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৫০টি ও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ১০টি ঘর।

আগৈলঝাড়া উপজেলায় দুর্যোগ কবলিত ইউনিয়নের সংখ্যা ৫টি। দুর্গত মানুষ ১ হাজার, বিধ্বস্ত ঘর বাড়ির মধ্যে আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৩০টি ও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ৫টি ঘর।

গৌরনদী উপজেলায় দুর্যোগ কবলিত ইউনিয়নের সংখ্যা ৮টি। দুর্গত মানুষের আনুমানিক সংখ্যা ১ হাজার ৫০০, বিধ্বস্ত ঘর বাড়ির মধ্যে আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১০০টি ও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ১৫টি ঘর।

উজিরপুর উপজেলায় দুর্যোগ কবলিত ইউনিয়নের সংখ্যা ১০টি। দুর্গত মানুষের আনুমানিক সংখ্যা ১ হাজার ২০০, বিধ্বস্ত ঘর বাড়ির মধ্যে আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১৫০টি ঘর।

বানারীপাড়ায় দুর্যোগ কবলিত ইউনিয়নের সংখ্যা ৯টি। দুর্গত মানুষের আনুমানিক সংখ্যা ৭০০, বিধ্বস্ত ঘর বাড়ির মধ্যে আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১০০টি ঘর।

বাবুগঞ্জে দুর্যোগ কবলিত ইউনিয়নের সংখ্যা ৬টি। দুর্গত মানুষের আনুমানিক সংখ্যা ১ হাজার ৩০০, বিধ্বস্ত ঘর বাড়ির মধ্যে আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৯৫টি ও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ১৩টি ঘর।

মুলাদীতে দুর্যোগ কবলিত ইউনিয়নের সংখ্যা ৭টি। দুর্গত মানুষের আনুমানিক সংখ্যা ১ হাজার ২০০, বিধ্বস্ত ঘর বাড়ির মধ্যে আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ৫০টি ও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ১০টি ঘর।

হিজলায় দুর্যোগ কবলিত ইউনিয়নের সংখ্যা ৬টি। দুর্গত মানুষের আনুমানিক সংখ্যা ১ হাজার ৪০০, বিধ্বস্ত ঘর বাড়ির মধ্যে আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১৭০০টি ও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ৫০০টি ঘর।


মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় দুর্যোগ কবলিত ইউনিয়নের সংখ্যা ১৬টি। দুর্গত মানুষের আনুমানিক সংখ্যা ১৯ হাজার ৮২১, বিধ্বস্ত ঘর বাড়ির মধ্যে আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১০৯টি ও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ২৩টি ঘর।


এছাড়া বাকেরগঞ্জ উপজেলায় দুর্যোগ কবলিত ইউনিয়নের সংখ্যা ১৫টি। দুর্গত মানুষ আনুমানিক ৬১ হাজার, বিধ্বস্ত ঘর বাড়ির মধ্যে আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ১২৪টি ও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ৫৭টি ঘর।


সর্বমোট বরিশাল জেলায় দুর্যোগ কবলিত ইউনিয়নের সংখ্যা ৮৭টি। দুর্গত মানুষের আনুমানিক সংখ্যা ৯ হাজার ৬২১, বিধ্বস্ত ঘর বাড়ির মধ্যে আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে ২৫০৮টি ও পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ৬৩৩টি ঘর।


অপরদিকে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে মৌসুমের রেকর্ড বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে প্লাবিত হয়েছে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের নিম্নাঞ্চল। অনেক স্থানেই প্লাবনের পানিতে পুকুর, ঘের, দিঘি তলিয়ে চাষের মাছ বের হয়ে গেছে। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন খামারিরা।


বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, গোটা বিভাগের ৬ জেলায় ১ হাজার ৫৭৩ হেক্টরের ১২ হাজার ১২টি পুকুর, দিঘি, খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরফলে ১১ হাজার ১৮৯ জন মৎস্যচাষি ও খামার মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।


তথ্য অনুযায়ী ক্ষতির ধরন ও পরিমাণের মধ্যে ১ হাজার ৭৩০ মেট্রিক টন মাছ ও ৭১ লাখ পোনা রয়েছে। এছাড়া ডুবে যাওয়া ট্রলার বা নৌকার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ২৬ কোটি ৬২ লাখ ২১ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে চূড়ান্ত তথ্য নিরূপণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় মৎস্য অফিসের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন।


এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’ এর প্রভাবে রেকর্ড বৃষ্টিপাতের কারণে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে বলে ধারনা করছেন বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। বরিশাল খামার বাড়ির তথ্য অনুযায়ী বরিশালের মাঠে রোপণ করা আমন ধানের ১২ হাজার ৫০৫৭ হেক্টর জমির মধ্যে ৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমির ফসল দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে।


এছাড়াও ১০১০ হেক্টর রোপিত সবজির মধ্যে ৪০৪ হেক্টর, পান ২৯৫২ হেক্টরের মধ্যে ২৯৫ হেক্টর, কলা ৭০০ হেক্টরের মধ্যে ৭০ হেক্টর এবং পেঁপে ৮০০ হেক্টর জমির মধ্যে ১২০ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফজলুল হক।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫