
ফসলের নতুন গন্ধ মেখে চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে আমন ধান ঘরে তুলতে। ছবি: প্রতিনিধি
রোদে পুড়ে সবুজ শীষ হয়েছে সোনালি। পাকা ধানের শীষ বাতাসে দোল খেয়ে ক্ষেতে ঝনঝন শব্দে বেজে উঠছে। মুখরিত সেসব শব্দের মাঝেই সোনালি রঙের শীষে ডাক দিয়ে গেছে পাকা আমন ধান কাটার। ফসলের নতুন গন্ধ মেখে চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে আমন ধান ঘরে তুলতে।
পল্লী কবি জসীমউদ্দীন লিখেছেন- আশ্বিন গেল কার্তিক মাসে পাকিল ক্ষেতের ধান/ সারামাঠ ভরি গাহিছে কে যেন হলদি কোটার গান/ ধানে ধান লাগি বাজিছে বাজনা, গন্ধ উড়িছে বায়/কলমীলতায় দোলন লেগেছে, হেসে কূল নাহি পায়। এভাবেই কার্তিকের রূপের কথা বলেছেন তাঁর অমর সৃষ্টি কাব্যকাহিনি নক্সী-কাঁথার মাঠে। কবির সেই ধান পাকার গন্ধ নিয়েই বগুড়ায় কৃষিশ্রমিক আর আমন চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে।
বগুড়া জেলা শহরের শাখারিয়া, সাবগ্রাম, নন্দীগ্রাম সড়ক, কাহালু সড়ক, শিবগঞ্জ সড়ক বেশ কিছু এলাকায় ধান কাটা চলছে। শ্রমিকরা দলবেঁধে ধানকেটে মাড়াই করছে। বগুড়া শহরের চারমাথা, তিনমাথা, মাটিডালি, মহাস্থান এবং রেলওয়ে স্টেশনে ধান কাটার শ্রমিকদের দেখা যায়। তারা উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে বগুড়ায় আসছে ধান কাটতে।
ধানকাটার শ্রমিকরা পালা করে কাজ করে বগুড়া অঞ্চলের ধানকাটা মাড়াই শুরু করেছে। বগুড়ার মাঠে মাঠে এখন আমন ধান কাটার ব্যস্ততা বেড়েছে চাষিদের। বেশিরভাগ কৃষকের বাড়িতে এখন নতুন আমন ধান উঠতে শুরু করেছে। কোথাও চলছে ধান কাটার কাজ আবার কোথাও চলছে ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজ। সব মিলিয়ে আমন চাষিরা এখন কর্মব্যস্ত।
জানা যায়, বগুড়া জেলায় সারের সংকট না থাকায় চাষিরা পুরো দমে আমন চাষ করে। জেলায় সময়মতো সার পাওয়ায় আমন চাষিরা বাম্পার ফলন পাওয়ার আশায় মাঠে মাঠে শ্রম দিয়ে যায়। কৃষি অফিস বলছে, শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৫ লাখ ৫১ হাজার ৮১৩ টন চাল পাওয়া যাবে।
বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বগুড়ায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ২ লাখ ২৪ হাজার ৮৩০ হেক্টর। এরমধ্যে এবার জেলায় ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ দুলাল হোসেন জানান, সারের কোনো সংকট নেই। চাহিদা অনুযায়ী সার সরবরাহ রয়েছে। চাহিদার বিপরীতে নিয়মিতভাবে সার মাসের শুরুতেই বরাদ্দ প্রদান করা হয়। সারের সংকট না থাকায় সময়মতো চাষিরা আমন চাষ করেছে।
এখন আমন ধান বাটা শুরু হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ধান কাটছে চাষিরা। উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটার শ্রমিক আসতে শুরু করেছে। পুরোদমে ধানকাটা শুরু হলে শ্রমিকও আরও লাগবে। বগুড়ায় এবার আমন ধানের ফলন ভালো হয়েছে।
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার আমন চাষি মো. আমিনুর রহমান জানান, সারের কোনো সমস্যা ছিল না। সময়মতো আমন চাষের পর ধান পেকেছে। এখন ধান কাটা শুরু হয়েছে। গত বছর ধানের দাম কম ছিল। এ বছর ধানের দাম বাড়লে চাষিদের খরচও উঠবে।
বগুড়া সদর উপজেলার চাষি মো. মামুন জানান, জমিতে আমন ধানের পাক ধরায় শ্রমিক দিয়ে ধান কাটা শুরু হয়েছে। তবে এবার শ্রমিকের মূল্য বেশি। এক বিঘা ধান কাটতে শ্রমিকের পেছনে খরচ হচ্ছে প্রায় ৬ হাজার টাকা।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার চাষি নাহিদ হাসান জানান, বগুড়ার বিভিন্ন হাটে নতুন আমন ধান বিক্রি হচ্ছে ভালোমানের শুকনা ও চিকন ধান ১৪০০ থেকে ১৪৫০ টাকা মণ। আর কাঁচা ও মোটা হলে ধানের মণ ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে অল্প কিছু ধান উঠেছে। এই ধানই কেনাবেচা শুরু হয়েছে।