
অনেক মাল্টা চাষি মূলধন খোয়ানোর আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। ছবি: প্রতিনিধি
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া অন্যান্য এলাকার চেয়ে অনেকটাই অনুকূলে। যার ফলে প্রায় সব ধরনের ফসল উৎপাদন হয় এ উপজেলায়। এ অঞ্চলে কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনা এনেছে লেবুজাতীয় ফল মাল্টা।
এ এলাকার মাটি ও আবহাওয়া ভালো থাকার কারণে মাল্টা চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। যার ফলে প্রান্তিক কৃষকেরা অনেকটাই ঝুঁকছেন মাল্টা চাষে। তবে মাল্টার দাম কম থাকায় অনেকটা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ছেন কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর জানান, এ বছর ঘাটাইলে ১৩৫ হেক্টর জমিতে সবুজ মাল্টার বাণিজ্যিক চাষ হয়েছে। পাহাড়ি এলাকার উর্বর মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাল্টার বাম্পার ফলন হয়েছে। সঠিক সময়ে মাল্টা বাজারজাত করলে কৃষক অবশ্যই লাভবান হবে। এই মাল্টা হার্ভেস্টিয়ের উপযুক্ত সময় সেপ্টেম্বরের ১৫ থেকে অক্টোবরের ১৫ পর্যন্ত।
কৃষকের দাবি, অনিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থাই মাল্টার চাহিদা কমার মূল কারণ। অনেক মাল্টা চাষি বেশি লাভের আশায় সময়ের আগেই অপরিপক্ব মাল্টা বাজারে বিক্রি করেন। ফলে স্বাদহীন এসব মাল্টা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন ক্রেতারা।
উপজেলার শোলাকুড়া গ্রামের মাল্টা চাষি আশরাফ মিয়া বলেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সবুজ মাল্টার বাগান করেছি, এখন এই টাকা পরিশোধ করব কীভাবে?’ তিনি প্রায় ৩ একর জমিতে সবুজ মাল্টা চাষ করেছেন। ফলনও বেশ ভালো হয়েছিল।
তবে বাজারে এর চাহিদা ও দাম কম থাকায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ তার কপালে। শুধু আশরাফ মিয়া নয়, ঘাটাইলে এমন অনেক মাল্টা চাষি মূলধন খোয়ানোর আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। মাল্টা বাগান নিয়ে এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন, সানবান্ধা এলাকার মাল্টা চাষি হোসেন মিয়া, বেইলা গ্রামের হিমেল, আ. হালিম।
সাগরদীঘি এলাকার মাল্টা চাষি সোহেল মিয়া বলেন, আমি ৪ একর জমিতে মাল্টা চাষ করেছি। আমার খরচ হয়েছে ১৬ লাখ টাকার মতো। গত সিজনে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছ। প্রথমদিকে মাল্টার ভালো দাম থাকলেও শেষ পর্যন্ত মাল্টার দাম একদম কম ছিল। আগামীতে ফলন আশা করি আরও ভালো হবে।
কিন্তু দাম কম থাকলে নিঃসন্দেহে বাগান কেটে ফেলতে হবে। বাগান মালিক পরান বলেন, আমাদের পাহাড়ি এলাকার লাল মাটি হওয়ায় মাল্টা চাষের জন্যে বেশ উপযোগী। মাল্টার ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজার ব্যবস্থা এলোমেলো এবং দাম কম থাকায় আগামীতে বাগান টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।
ঘাটাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান জানান, এখানে মাল্টা চাষে কৃষকরা বেশ আগ্রহী। ফলনও ভালো হয়েছে। পুষ্টি, স্বাদ ও গুণেমানে যথেষ্ট সমৃদ্ধ এই মাল্টা। তবে হার্ভেস্টিং সময়ের আগে অপরিপক্ব মাল্টায় বাজার নষ্ট হয়েছে। তাই অপরিপক্ব মাল্টা বাজারজাতকরণ বন্ধ করতে হবে।