এসএসসি পরীক্ষায় অ্যাসিডদগ্ধ সোনালীর সফলতা

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬:০৬

অ্যাসিডদগ্ধ সোনালী। ছবি: সংগৃহীত
অ্যাসিডদগ্ধ সোনালী এবার এসএসসি পরীক্ষায় ৪.৯৬ পয়েন্ট পেয়ে এ গ্রেডে উত্তীর্ণ হয়েছে। সে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় পাটকেলঘাটার কুমিরা পাইলট বহুমুখী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
১৯ বছর বয়সী সোনালী খাতুন মাত্র ১৮ দিন বয়সে মা-বাবার সঙ্গে অ্যাসিড আক্রান্ত হয়েছিল। ২০০২ সালের ১৯ নভেম্বর রাতে জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে সোনালী ও তার বাবা-মা অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়।
সে দিনের সেই ছোট্ট সোনালী পাটকেলঘাটা থানার কুমিরা পাইলট গার্লস হাইস্কুল থেকে এবার (২০২২ সাল) উচ্চ মাধ্যমিক (এসএসসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
সোনালীর এই পর্যন্ত টিকে থাকা ও পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া খুব সহজ ছিল না। স্কুলে যাওয়ার বয়স হওয়ার পর সোনালীকে স্কুলে ভর্তি করার পর স্কুলের অন্যান্য শিক্ষার্থী তাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেনি। প্রথম দিকে তাকে স্কুলে যেতে নানারকম সামাজিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে একশনএইড বাংলাদেশর-এর সহযোগিতায় স্বদেশ স্থানীয় পর্যায়ে সামাজিক ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষক, ধর্মীয় নেতা, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সমাজের সাধারণ মানুষেকে কাউন্সেলিং, সামাজিক সম্পৃক্ততা করে সোনালীর স্কুলে পড়ালেখা অব্যাহত রাখার প্রয়াস চালানোর ফলে সোনালীর শিক্ষা জীবনের মাধ্যমিক স্তর সফলতার সঙ্গে সমাপ্তের পথ সুগম হয়েছে। সোনালী স্বপ্ন দেখছে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের। তার দরকার আর্থিক ও সামাজিক সহযোগিতা।
সোনালীর বাবা নুর ইসলাম ও মা খোদেজা খাতুন জানান, ১৮ দিন বয়সের আমাদের ছোট্ট সোনালী আজ একশনএইড বাংলাদেশ, স্বদেশ ও সেতুবন্ধন গড়ি নেটওয়ার্কের (এসবিজিএন) সহযোগিতায় তার পড়ালেখা চালাতে পেরেছে। তারা বলেন, ‘এ জন্য আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে তার শিক্ষক ও সকল সংগঠনকে, বিশেষ করে স্বদেশের নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, একশনএইড বাংলাদেশ নুরুন নাহার এবং তার সকল শিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’
কুমিরা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌতম কুমার দাশ জানান, সোনালীর এই সাফল্যে তিনি এবং তার শিক্ষকমণ্ডলী খুশি সোনালী সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে আজ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে যাওয়ার পর্যায় এসেছে। ওর অদম্য মানসিক সাহস ও সকলের সহযোগিতা ওকে এত দূর আসতে সাহায্য করেছে।
আমাদের পক্ষ থেকে সোনালীকে অভিনন্দন। সোনালীকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ তৈরিতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে সহযোগিতা করা জরুরি। আমাদের স্কুলের সোনালী এ পর্যন্ত সুনামের সঙ্গে লেখাপড়া করে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করছে।
আমরা স্কুলের পক্ষ থেকে ওকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করেছি। আগামীতে সোনালীর জন্য আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। একশনএইড বাংলাদেশের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার নুরুন নাহার বেগম বলেন, সোনালীর এই সাফল্যে আমরা অভিভূত। তিনি সোনালীর উচ্চশিক্ষায় সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
মানবাধিকার কর্মী ও স্বদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত বলেন, একশনএইড বাংলাদেশ, স্বদেশ ও সেতুবন্ধন গড়ি নেটওয়ার্কের (এসবিজিএন) এবং দেশ-বিদেশের যেসব ব্যক্তি ও সংগঠন অ্যাসিড সারভাইভার সোনালীকে এই পর্যন্ত আসতে সহযোগিতা করেছে তাদের প্রতি স্বদেশ-এর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা। সোনালীর এই সাফল্যে তিনি ও তার সংগঠন সোনালীর উচ্চ শিক্ষালাভে স্বদেশ সবসময় পাশে থাকবে।