Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

২৬ বছরেও সম্পন্ন হয়নি মুক্তিযুদ্ধের শপথস্তম্ভ

Icon

টাঙ্গাইল

প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১৩:৫১

২৬ বছরেও সম্পন্ন হয়নি মুক্তিযুদ্ধের শপথস্তম্ভ

বহেড়াতৈল শপথস্তম্ভ। ছবি: সংগৃহীত

উঁচুনিচু টিলা আকৃতির জায়গার উপর বিস্তৃত সবুজ ঘাসের গালিচায় আবৃত বহেড়াতৈল শপথস্তম্ভ। টাঙ্গাইল থেকে ৪২ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি অঞ্চলে স্থাপিত। ১৯৭১ সালের ১০ জুন কাদেরিয়া বাহিনী শপথ গ্রহণ করার অন্যতম সাক্ষী এই শপথস্তম্ভ।

সেখানে কাদেরিয়া বাহিনীর অগণিত মুক্তিযোদ্ধা দেশ স্বাধীনের লক্ষ্যে পবিত্র কোরআন, বাইবেল ও গীতা ছুঁয়ে শপথ গ্রহণ করেছিলেন। এ ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে ১৯৯৬ সালে জেলা পরিষদের অর্থায়নে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সংসদ সদস্য বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম শপথস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। 

শপথস্তম্ভটির চত্বরের পাশেই রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের গণকবর। এ ছাড়াও এখানে বিশ্রামাগার, কবরস্থান, মুক্তিযুদ্ধের জাদুঘরসহ পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। শপথস্তম্ভটির নকশায় নানা বৈচিত্র্য ও স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য, উদীয়মান সূর্যের প্রতীকসহ শহীদের স্মৃতিকে স্মরণ করে রাখতে বহুমুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

বিশাল এই স্তম্ভটি ভ্রমণকারীদেরও নজর কাড়ে। সবুজ ঘাসে আবৃত টিলার উপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা স্তম্ভটি নিয়ে শিশু ও তরুণদের মাঝেও আগ্রহের শেষ নেই। কেউ কেউ স্তম্ভের দেয়াল ঘেঁষে অথবা পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছেন। কেউ কেউ কৌতূহলী হয়ে স্থানীয়দের কাছে জানতে চাচ্ছেন এই রঙহীন বিবর্ণ স্থাপত্যের ইতিহাস। এভাবেই গত ২৬ বছর ধরে প্রজন্মের কাছে প্রকাশ পাচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনাটির করুণ কাহিনি।

বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয়রা স্থাপনাটিকে স্মৃতিসৌধ বা স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে জানলেও প্রকৃতপক্ষে নাম ‘মুক্তিযুদ্ধের শপথস্তম্ভ’। দেশে এটিই মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র শপথস্তম্ভ বলে নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণকারী কাদেরিয়া বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ওই স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি গণকবরও রয়েছে।

বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ স্তম্ভটি উদ্বোধন করার কথা থাকলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীর মতবিরোধ দেখা দেওয়ায় তা আর সম্ভব হয়নি। এরপর থেকেই স্তম্ভটির নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। পরে দীর্ঘ ২৬ বছর পেরিয়ে গেলেও হাত দেওয়া হয়নি স্তম্ভটির নির্মাণ কাজে। অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত এ শপথস্তম্ভ।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ডিপুটি কমান্ডার মো. শফিকুর রহমান বলেন, বহেড়াতৈলে মুক্তিযুদ্ধের বিশাল ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল। ১৯৭১ সালের ১০ জুন কাদেরিয়া বাহিনীর ছয়টি কোম্পানির অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা বহেড়াতৈলে সমবেত হয়ে নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে দেশ স্বাধীনের শপথ নেন। সেদিন হিন্দু মুসলিম খ্রিষ্টান একসঙ্গে অঙ্গীকার করেছিলেন- দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না।

শপথের এ ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতেই কাদের সিদ্দিকী ওই জায়গায় শপথস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন ও স্মারক চিহ্নসমূহ সংগ্রহ, মুক্তিযুদ্ধের তথ্য, প্রমাণাদি, রেকর্ডপত্র ইত্যাদি সংগ্রহ করে এই স্থানে নির্মিত জাদুঘরে রাখার পরিকল্পনাও ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার ক্ষমতায় থাকলেও শপথস্তম্ভটি অযত্ন অবহেলায় পড়ে রয়েছে।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা এমও গণি বলেন, অনেক জায়গায় মুক্তিযোদ্ধারা শুধু হেঁটে গেছেন সেখানেও স্মৃতিস্তম্ভ হয়েছে। অথচ বহেড়াতৈলে মুক্তিযুদ্ধের এক গৌরবময় ইতিহাস চাপা পড়ে আছে, কেউ তা উদ্ধারের উদ্যোগ নিচ্ছে না।

এ বিষয়ে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, ইতোমধ্যেই জেলা পরিষদের অর্থায়নে শপথস্তম্ভের পাশে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন করে স্তম্ভের চারপাশে ইটের দেয়াল করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ওই স্থানটির পরিকল্পনাসহ বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হবে। যাতে মন্ত্রণালয় থেকে মাস্টারপ্ল্যান করে পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়ন করা হয়।

টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খান ফারুক সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, যুদ্ধের সময় বহেড়াতৈলের ওই জায়গায় কাদেরিয়া বাহিনী গোপন ঘাঁটি তৈরি করেছিলেন। জায়গাটাকে সংরক্ষিত রাখার জন্য জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল করে চারিদিকে বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে ওই শপথস্তম্ভটি নিয়ে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫