-63a6c88908384.jpg)
অধিকাংশ ডাকঘরে নেই কোনো ডাক বাক্স। ছবি: সংগৃহীত
তথ্য প্রযুক্তির দাপটে লক্ষ্মীপুরের অধিকাংশ ডাকঘরের লেটারবক্সগুলো দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তথ্য প্রযুক্তির দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছে ডাকঘরের চিঠি আদান-প্রদানের কার্যক্রম
আগের মতো এখন আর ডাক অফিসে লোকজনের আনা-গোনা দেখা যায় না। সঠিক পরিকল্পনার অভাবে ডাক বিভাগ কিছুতেই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে পেরে উঠছেন না, দাবি সংশ্লিষ্টদের।
জেলা ডাকঘর সূত্রে জানা যায়, জেলার ৫টি উপজেলার মধ্যে লক্ষ্মীপুর প্রধান ডাকঘরের তত্ত্বাবধানে রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার ও রায়পুর উপজেলা ডাকঘর রয়েছে। সাব ডাকঘর অফিস রয়েছে ৮টি, অবিভাগীয় বা শাখা ডাকঘর রয়েছে ৫২টি। জেলার প্রধান ও উপজেলা ডাকঘরসহ ১০টি সরকারি এবং বাকি ৫২টি অবিভাগীয় ডাকঘর হিসেবে কার্যক্রম চলছে।
জেলায় প্রধান ডাকঘরে একজন পোস্ট মাস্টার রয়েছেন। উপজেলা পোস্ট মাস্টার ২টির পদ শূন্য। ডাকপিয়ন আছেন ১৬ জন, পদ শূন্য তিনজন। পোস্টাল অপারেটর ১৫ জনের মধ্যে রয়েছেন ১৩ জন।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে ডাক বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। নানা প্রতিবন্ধকতা আর ইন্টারনেটের সহজলভ্যতায় কয়েক বছর আগেই বন্ধ হয়ে গেছে টেলিগ্রাফ সার্ভিস। নীল, হলুদসহ রঙিন খামের চিঠি আর পোস্ট অফিসের প্রতীক লাল রঙের সেই ডাকবাক্সও বিলীন হওয়ার পথে। পথে ঘাটে ভাঙাচোরা-জরাজীর্ণ অবস্থায় কোনোরকমে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ডাকবাক্সগুলো।
আশির দশক পর্যন্ত মনের ভাব আদান প্রদানের ক্ষেত্রে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম চিঠির জন্য পরিবার কিংবা প্রিয়জন অপেক্ষা করতেন। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে অচল হয়ে গেছে ডাকে চিঠি প্রেরণ ও টেলিগ্রাফের যুগ।
আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে কুরিয়ার সার্ভিসের দাপটে ডাক বিভাগের আগের ব্যস্ততা এখন আর নেই। এক সময় দেশ-বিদেশ থেকে চিঠিপত্রের আদান-প্রদান এবং টাকা প্রেরণের সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যম ছিল ডাক বিভাগ। সে সময়ে ডাক বিভাগের কদর ছিল অন্যরকম। এখন কালের আবর্তনে তথ্য প্রযুক্তির ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে ডাকঘরের কর্মচাঞ্চল্যতা।
লক্ষ্নীপুর সদর উপজেলার সর্বত্র আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও ডাকঘরের বাক্সগুলো এক কোনায় পড়ে রয়েছে। পরিত্যক্ত ঘোষণা করা না হলেও চিঠিবিহীন বাক্স ঠায় দাঁড়িয়ে আছে অতীত সাক্ষী হিসেবে।
এছাড়া জেলার অধিকাংশ ডাকঘরের ডাকবাক্স ও তালা সংস্কার না করায় মরিচা ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। অধিকাংশ ডাকঘরে নেই কোনো ডাক বাক্স। দু-একটি থাকলেও তার মধ্যে চিঠির পরিবর্তে থাকছে ময়লা-আবর্জনা। জেলা এবং উপজেলা ডাকঘর ব্যতীত সব কটিতেই নাজুক অবস্থা।
অধিকাংশ ডাকঘরের পাকা বিল্ডিং ও আসবাবপত্র নতুন করে তৈরি করা হলেও এসব ডাকঘরের দাপ্তরিক কোনো কাজকর্মে গতিশীলতা নেই। তবে জেলা ও উপজেলা ডাকঘরগুলো চালিয়ে যাচ্ছে তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম। এখানে কিছুটা আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে।
এছাড়া বর্তমান সরকার ডাকঘরগুলোতে ২০১০ সালের আগস্ট মাসে ইএমটিএম নামের একটি শাখা চালু করেছে। কিন্তু প্রচার প্রচারণা কম হওয়ায় এবং মোবাইলে বিকাশ চালু হওয়ার ফলে এই প্রকল্পটিও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
ডাক বিভাগে বর্তমানে যেসব সেবা রয়েছে সেগুলো যদি সাধারণ মানুষের কাছে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা যায় তাহলে অনেকটাই কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে ডাক বিভাগ। আধুনিকতার ছোঁয়া না লাগায় হারিয়ে যাচ্ছে পোস্ট অফিসগুলোর কর্মচাঞ্চল্য।
জেলা ডাকঘর পরিদর্শক জানালেন, বর্তমানে ডাক বিভাগের কাছে অত্যাধুনিক পোস্টাল ক্যাশ কার্ড, ইলেক্ট্রনিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিসের মতো সেবা আছে। ডাক বিভাগের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকা সত্তে¡ও এ জেলায় ডাকঘরের মাধ্যমে প্রতিদিন কোটি টাকার উপরে লেনদেন হয়। ডাক বিভাগের পুরাতন ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে।