Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

জায়গা সংকটে প্যাকেটবন্দি ১০ ডায়ালাইসিস মেশিন

Icon

খান রুবেল, বরিশাল

প্রকাশ: ০২ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:৩৭

জায়গা সংকটে প্যাকেটবন্দি ১০ ডায়ালাইসিস মেশিন

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল

দক্ষিণাঞ্চলে কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীদের আধুনিক এবং স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবার একমাত্র নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতাল। দীর্ঘ বছর বন্ধ থাকার পর হাসপাতালের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে চালু হয়েছিল কিডনি ডায়ালাইসিস কার্যক্রম। প্রতি শয্যায় দিনে দুইজনের ডায়ালাইসিস প্রদানের সক্ষমতা রয়েছে ইউনিটটিতে। অথচ আবেদন থাকছে দশজনের অধিক।

চাহিদার প্রেক্ষিতে ইউনিটটিতে আরও ১০টি নতুন ডায়ালাইসিস মেশিন প্রদান করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু জায়গা স্বল্পতার কারণে গত এক মাসেও সেগুলো চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। প্যাকেটবন্দি অবস্থাতেই মালখানায় পড়ে আছে মেশিনগুলো। ফলে চালু থাকা ১০টি মেশিনে রোগীর সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমানে যেখানে ডায়ালাইসিস কার্যক্রম চলছে সেখানে জায়গার সংকট। তাই নতুন ১০টি মেশিন চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। আলাদা স্থানে একসঙ্গে ২০টি ডায়ালাইসিস মেশিনের কার্যক্রম চালু করা হবে। এজন্য প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম।

শেবাচিম হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, একসময় বৃহত্তর এই হাসপাতালটিতে ছিল না কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিসের কোন ব্যবস্থা। এমনকি কিডনি রোগীদের জন্য নামমাত্র ইউরোলোজি ও নেফ্রোলজি বিভাগ থাকলেও নেই স্বতন্ত্র ওয়ার্ড।

২০০৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এই হাসপাতালে কিডনি রোগীদের চিকিৎসার জন্য দুটি হিমো ডায়ালাইসিস মেশিন, একটি ডিজিটাল রেডিওলজি (ডিআর) মেশিন, একটি পানি শোধন মেশিনসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়। কিন্তু মেশিন চালুর পরে হস্তান্তর না করায় ডায়ালাইসিস কার্যক্রম চালু করতে পারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরবর্তী ২০১৬ সালে হিমো ডায়ালাইসিস মেশিন চালুর উদ্যোগ নিলেও মেশিনগুলো পড়ে থেকে অকেজো হয়ে যাওয়ায় সেটা আর সম্ভব হয়নি।

তবে আশার আলোফোটে করোনার ক্লান্তিকালে। ২০২০ সালের ১২ মে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় মেডিসিন ব্লকে নতুন করে যাত্রা শুরু করে কিডনি রোগীদের জন্য নেফ্রোলজি বিভাগ। বিভাগটিতে স্থাপন করা হয় ১০টি জাপানি ডায়লাইসিস মেশিন। যার তখনকার মূল্য এক কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর সাথে পৃথক খরচে পাঁচটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, অটোমেটিক ডাইলাইজার রিফ্রেসর মেশিন ও ১০টি ডায়ালাইসিস শয্যা স্থাপন করা হয়। সেই থেকে ১০টি শয্যায় প্রতিদিন ২০জন করে রোগীকে কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা প্রদান করা হচ্ছে।

জানা গেছে, শুরু থেকে নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী রুমি। তার সাথে সহযোগী হিসেবে রয়েছেন নেফ্রোলজি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. মানবেন্দ্র দাস। এছাড়া প্রশিক্ষিত নার্সিং কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন নিয়মিত।

নেফ্রোলজি বিভাগের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স বিউটি বেগম বলেন, ‘একজন রোগী প্রতি সপ্তাহে দুটি ডায়ালাইসিস পাচ্ছে এই বিভাগে। সে হিসেবে প্রতিদিন ২০জন রোগীকে ডায়ালাইসিস দেয়া সম্ভব হচ্ছে। আর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দশ হাজার মানুষকে মাত্র ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিনের মাধ্যমে সেবা দেয়া সম্ভব হয়েছে। এখানে সরকারি খরচ দিতে হচ্ছে মাত্র ৪০০ টাকা। আর ছয় মাসের প্যাকেজে ডায়ালাইসিস সেবা পেতে সরকারিভাবে জমা দিতে হয় ২০ হাজার টাকা। খরচ কম হওয়ায় কিডনি ডায়ালাইসিসের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে বলেন তিনি।

হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চাহিদার অনুকূলে এক মাসের বেশি সময় আগে এ হাসপাতালে আরও ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিনসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি প্রদান করে ঢাকা সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর (সিএমআইচডি)। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্যাকেটবন্দি অবস্থাতেই রয়ে গেছে মেশিনগুলো। নেফ্রোলজি বিভাগে জায়গা স্বল্পতার কারণে মেশিনগুলো চালু করতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরফলে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিভাগের চিকিৎসক এবং সেবিকাদের।

নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী রুমি বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলে এতো স্বল্প খরচে কিডনি ডায়লাইসিস শুধু শেবাচিম হাসপাতালেই হয়ে থাকে। এর বাইরে এই সেবা পেতে রোগীদের ছুটতে হয় ঢাকায়। সেখানে খরচ যেমন বেশি, ভোগান্তিও অনেক।

তিনি বলেন, আমার পরিকল্পনা রয়েছে এখানে অন্তত একশ শয্যার একটি ডায়ালাইসিস ইউনিট চালু হোক। তবে প্রাথমিকভাবে ৫০ শয্যার ডায়ালাইসিস ইউনিট চালুর জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে চাহিদাপত্র প্রেরণ করেছি। এর অনুকূলে নতুন করে ১০টি মেশিন আমরা পেয়েছি। পুরানো ১০টি মিলিয়ে এখন এই হাসপাতালে ডায়ালাইসিস মেশিনের সংখ্যা ১০টি।

তিনি বলেন, ১০টি নতুন মেশিন আমরা পেলেও এখন পর্যন্ত সেগুলো চালু করতে পারিনি। কেননা ইউনিটের কার্যক্রম যেখানে চলছে সেখানে পর্যাপ্ত জায়গা নেই। জায়গার ব্যবস্থা করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করছেন। হাসপাতালের পুরানো ভবনের পূর্ব পাশে যে নতুন মেডিসিন বিভাগটি চালু করা হয়েছে সেখানে নিচতলায় ডায়ালাইসিস ইউনিট স্থানান্তর হতে পারে বলে শুনেছি।

তিনি বলেন, শেবাচিম হাসপাতালে নেফ্রোলজি বিভাগের চিকিৎসা কার্যক্রম চলমান আছে। তবে এখানে কোন স্বতন্ত্র ওয়ার্ড নেই। মেডিসিন বিভাগের বিভিন্ন ওয়ার্ডেই কিডনি রোগীদের ভর্তি করা হচ্ছে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। তবে ওয়ার্ড স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গার প্রয়োজন। এটা নতুন মেডিসিন বিভাগে চালুর কথা রয়েছে। তবে সেজন্য ভবনটির অবকাঠামোগত পরিবর্তন এবং বর্ধিতকরণ প্রয়োজন।

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম জায়গা স্বল্পতার কথা স্বীকার করে বলেন, যেখানে বর্তমানে ডায়ালাইসিস কার্যক্রম চলমান সেখানে আর কোন মেশিন স্থাপন সম্ভব নয়। তাই নতুন ভবনে মেডিসিন বিভাগে এই কার্যক্রম স্থানান্তরের পরিকল্পনা চলছে। কেননা ভবিষ্যতে ডায়ালাইসিস মেশিন আরও যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি স্বতন্ত্র কিডনি ওয়ার্ড আমরা চালু করতে যাচ্ছি। খুব শীঘ্রই বরিশাল অঞ্চলের মানুষ এর সুফল ভোগ করতে পারবে বলে আশাবাদী তিনি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫