
লালমনিরহাট রেলওয়ে কোয়ার্টার। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় লালমনিরহাট বিভাগের আওতাধীন রেলের প্রায় ৭০০ আবাসিক কোয়ার্টার এখন বেদখলে। কোয়ার্টার ভবনগুলোর ছাদ ও ওয়ালে ফাটল, জানালা-দরজা নেই। আগাছা ভরতি ঝুঁকিপূর্ণ এসব কোয়ার্টার এখন সাধারণ মানুষের দখলে।
সন্ধ্যার পর ভবনের পাশের রাস্তা দিয়ে চলতে গেলে গা শিউরে ওঠে। দেখে মনে হয় ভুতুড়ে বাড়ি। এসব ভুতুড়ে পরিত্যক্ত ও বিধ্বস্ত কোয়ার্টারগুলোতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন কিছু অসহায় পরিবার। শুধু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে রেলওয়ের অধিকাংশ আবাসিক কোয়ার্টারের এ অবস্থার সৃষ্টি বলে অভিযোগ উঠেছে।
রেলওয়ে বিভাগীয় শহর লালমনিরহাট। রেল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বসবাসের জন্য সরকার বাংলাদেশ রেলওয়ের মাধ্যমে রাজস্ব বাড়ানোর জন্য আবাসিক কোয়ার্টারগুলো তৈরি করে। এ বিভাগের আওতাধীন প্রায় ৯১০টি কোয়ার্টারের মধ্যে ৭০০ কোয়ার্টার রয়েছে রেলের বেদখলে। পুরনো ও জীর্ণ অধিকাংশ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হলেও তা ঘোষণা করা হয়নি পরিত্যক্ত হিসেবে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লালমনিরহাট জেলার সীমানা জুড়ে বিভিন্ন রেল স্টেশন রয়েছে। এসব স্টেশন সংলগ্ন আবাসিক কোয়ার্টারগুলোয় স্টেশন মাস্টারসহ অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীর বসবাসের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগ কোয়ার্টারগুলো তৈরি করেন। কিন্তু রেল কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও সঠিক তদারকির অভাবে কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রেল বিভাগ আর সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। বর্তমানে অধিকাংশ কোয়ার্টার রয়েছে বহিরাগতদের দখলে।
ব্রিটিশ আমলের তৈরি লাল রঙের ভবনগুলো অধিকাংশ জীর্ণ এবং বসবাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। দীর্ঘদিন ধরে ওই ভবনগুলোতে রেলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা না থাকায় সাধারণ মানুষ দখল করে নিয়েছে। ভবনগুলো ধসে পড়ার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে বসবাস করছেন বহিরাগতরা। সেই সঙ্গে চুরি হয়ে যাচ্ছে ভবনের ইটসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি। বহিরাগতদের দখলে থাকা ওইসব আবাসিক কোয়ার্টার এখন মাদক ব্যবসাসহ নানা অনৈতিক কাজে ব্যবহার হচ্ছে।
কয়েকটি কোয়ার্টারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বসবাসকারী এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, মুহুরী, মুদি-দোকানদার, বাস-ট্রাক চালক, হেলপার, হকার, এনজিও কর্মী, শ্রমিক ও দিনমজুররা বছরের পর বছর ধরে আছেন। এদের অনেকে আবার এক শ্রেণির রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে অলিখিতভাবে মাসিক ভাড়া হিসেবে বসবাস করছেন। এ ভাড়ার টাকা কোনো দিনও রেলের আর্র্নিক আয়ে বা সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হচ্ছে না।
আবাসিক কোয়ার্টারগুলো শুধু অবৈধ দখলে নয়, তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। বেশিরভাগ কোয়ার্টারে নেই বিদ্যুতের মিটার। পৌর শহরের আনাচে-কানাচে বেশিরভাগ রেল কোয়ার্টারে মিটারবিহীন বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী মাসোহারা হিসেবে বিদ্যুতের লাইন সংযোগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শহরের সাহেবপাড়া, বাবুপাড়াসহ বেশিরভাগ কোয়ার্টারে রয়েছে মিটারবিহীন অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ।
এ ব্যাপারে একাধিক স্থানীয় রেলওয়ে কর্মচারী বলেন, আবাসিক কোয়ার্টারগুলো অবৈধ দখলদারের হাত থেকে রক্ষা করে বিধ্বস্ত কোয়ার্টারগুলো মেরামতসহ নতুন ভবন নির্মাণ করে রেল কর্মচারীদের বরাদ্দ দিলে বাংলাদেশ রেলওয়ের আর্নিক ফান্ড বৃদ্ধি পাবে এবং সরকারের রাজস্ব বেড়ে যেত।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট রেল বিভাগীয় প্রকৌশলী আহসান হাবিবের সঙ্গে দেখা করলেও তিনি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, আমি সদ্য যোগদান করায় কোয়ার্টারের বিষয়ে খোঁজ-খবর তেমনভাবে নিতে পারিনি। খোঁজ নিয়ে অবৈধ দখলদারের হাত থেকে কোয়ার্টাগুলো উদ্ধারসহ মেরামত করা হবে।