সমির মল্লিক, খাগড়াছড়ি
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২০, ১০:৩২ এএম
আব্দুল কাদেরর পরিবারের ছয় সদস্যই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। ছবি: খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
খাগড়াছড়ির দীঘিনালার বির্স্তৃণ জনপদ মেরুং। এই অঞ্চলটি জেলার অন্যতম কৃষিনির্ভর অঞ্চল। মেরুং বাজার থেকে উঁচু নিচু পাহাড়ি পথ পেরোলে ভুইয়াছড়া এলাকা। গ্রামটিতে তেমন কোনো উন্নয়নই নেই, বিদ্যুৎ বা সুপেয় পানি ব্যবস্থা নেই। নেই গ্রামীণ কাঁচা সড়কও। মেঠো পথে দীঘিনালা-লংগদু সড়ক থেকে পাঁচ মিনিট হাঁটলে ভূইয়াছড়া গ্রাম।
গ্রামজুড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চোখ পড়লেও এখানকার বাসিন্দারা আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এই গ্রামে আব্দুল কাদেরর পরিবারের ছয় সদস্য দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। জন্ম থেকে চোখের সমস্য নিয়ে বড় হয়েছে। এদের মধ্যে সবাই হারিয়েছে দৃষ্টিশক্তি। দিনের বেলায় মাঝারি বা ঝাপসা দেখলে রাতে একেবারেই দেখতে পায় না। জন্মের পর থেকে বিভিন্ন বয়সে তাহারা তাদের দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছেন।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সাহারা খাতুন (৬০) জানান, আমিসহ পরিবারের ছয়জন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। আমার মেয়ে ও ছেলে মাঝারি দেখতে পায়। রাতের বেলায় দেখতেই পায় না। মেয়ের ঘরে দুই নাতিও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। কোনো ভারী ও সুক্ষ্ণ কাজ করতে পারে না। রাতের বেলায় কোনো কাজ করতে পারি না। দিনের বেলায় ঘরের ঠুকঠুাক করতে পারে।
সাহারা খাতুনের মেয়ে খালেদার বয়স ২৭ বছর। এর মধ্যে চট্টগ্রামে একবার অপারেশন করিয়ে চোখের কিছুটা দৃষ্টি ফিরে পেয়েছে। খালেদার স্বামী গাড়ি চালক। হতদরিদ্র এই পরিবারের ছোট্ট বেড়ার ঘরে থাকে। অভাব ও দরিদ্রের সাথে সংগ্রাম করতে দিন পার করা এই পরিবারের পক্ষে দুই সন্তানের চোখের অপারেশন করা সম্ভব হয়নি। তার দুই সন্তান শারমিন (৯) ও খোরশেদ (৭) উভয়ই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। খালেদা জানান, স্থানীয় ইউপি সদস্য প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেয়ার কথা বলেছে। কিন্ত সেই কার্ড আমরা কখনো পাইনি। অথচ আমাদের পরিবারে ছয়জন প্রতিবন্ধী। কারো কার্ড নেই। ঘর করার অর্থও নেই, তাই ছোট্ট বেড়ার ঘরে জীবন বাঁচে। ঝড়-বৃষ্টির দিনে এই ঘরে থাকাও যায় না।
এসময় খালেদা দাবি জানান, একটা প্রতিবন্ধী কার্ড আমাদের দরকার। গ্রামের লোকজনের কাছে শুনেছি প্রতিবন্ধীতে জন্য কার্ডের ব্যবস্থা রয়েছে অথচ আমরা কেউ পেলাম না।
সাহারার ছেলে মনির হোসেন মাঝারি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তিনি বলেন, ঝাপসা দেখতে পাই। আমার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী স্মার্ট কার্ড আছে। অথচ কোনো ভাতা পাইনা। চোখে না দেখলে কীভাবে কাজ করব। সরকারি কোনো সহায়তাও পাইনা।
সাহারার ভাইয়ের মেয়ে ছাবিনা ইয়ামিনও আংশিক দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। সাহারা জানান, মনির, খালেদা ও ছাবিনার চোখে অপারেশন করা হয়েছে। তারা দিনের বেলায় আংশিক দেখতে পায়। কিন্তু তাদের স্বাভাবিক দৃষ্টি ফিরেনি।
মেরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রহমান কবির রতন জানান, ইউনিয়ন পরিষদের কাছে প্রতিবন্ধী স্মার্টকার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধন জমা দিতে হবে। আমরা রেজ্যুলেশন করে জমা দেবো। পরে সমাজ সেবা অফিসের মাধ্যমে ভাতার ব্যবস্থা করবো।
জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, বিষয়টি আমার আগে জানা ছিল না। চক্ষু বিষয়ক চিকিৎসক সরেজমিনে পরিদর্শন করে জেলা প্রতিবন্ধী অফিস থেকে তাদেরকে সাদাছড়ি বিতরণ সব ধরনের সহায়তা করবো।
খাগড়াছড়ি জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম জানান, তাদেরকে আমরা প্রতিবন্ধী স্মার্টকার্ডের আওতায় নিয়ে আসবো। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা যাতে ভাতা পায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদের ভাতা না পাওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। তাদের ভাতা প্রদানের পাশাপাশি এককালীন সহায়তা করার উদ্যোগ নেয়া হবে।
ABOUT CONTACT ARCHIVE TERMS POLICY ADVERTISEMENT
প্রধান সম্পাদক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ | প্রকাশক: নাহিদা আকতার জাহেদী
প্রধান সম্পাদক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ
প্রকাশক: নাহিদা আকতার জাহেদী
অনলাইন সম্পাদক: আরশাদ সিদ্দিকী
অনলাইন সম্পাদক: আরশাদ সিদ্দিকী | ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
© 2021 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh