Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

খাগড়াছড়িতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

Icon

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২১, ১৮:০৩

খাগড়াছড়িতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

খাগড়াছড়ির পানছড়িতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। ছবি: খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

সরকার অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করার পরও খাগড়াছড়ির পানছড়িতে প্রকাশ্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি সিন্ডিকেট। পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ ছাড়াই বালু উত্তোলন করায় নদীর পাড় ভাঙনের শঙ্কা রয়েছে। 

চেঙ্গী নদীর রাবার ড্যাম এলাকা থেকে গত ৮ মাস ধরে স্থানীয় ঠিকাদার উত্তম কুমার দেব ও এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী অরুণ কান্তি দাসের যোগসাজশে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলছে। এতে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারিয়েছে। 

বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ অনুযায়ী কোন ড্যাম এলাকার ১ কিলোমিটারের মধ্যে  বিপণনের উদ্দেশ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ ড্যাম সংলগ্ন এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের পক্ষে সাফাই করেছেন উপজেলা প্রকৌশলী।

জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) ২০২০-২১ অর্থবছরে টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ সেক্টও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় চেঙ্গী নদীর উপর ৮০মি ড্যাম প্রকল্পে মেরামতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৬২ লাখ ৬০ হাজার ৯৮৮ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মেসার্স রীপ এন্টারপ্রাইজ মনোনীত হলেও উপ-ঠিকাদার হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় ঠিকাদার উত্তম কুমার দেব। প্রকল্পের কার্যাদেশে চেঙ্গী নদী থেকে পলি উত্তোলনের কথা বললেও তা না করে রাবার ড্যাম সংলগ্ন এলাকা থেকে মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করেছে। সেসব বালু বিক্রি করা হচ্ছে। এলজিইডির প্রকল্পের দোহায় দিয়ে  বালু উত্তোলনের পিছনে উপজেলা প্রকৌশলী অরুণ কুমার দাসের যোগসাজশ রয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি বালু উত্তোলন করে বিক্রি করেছে ঠিকাদার।  

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা যায়, পানছড়ি উপজেলায় কোন বালুমহাল নেই। সে হিসেবে বালু উত্তোলন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অথচ চেঙ্গীর বুক থেকে প্রতিদিন মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।  সরেজমিন পরিদর্শনে এমন চিত্র দেখা গেছে। পানছড়ি উপজেলায় রাবার ড্যাম এলাকায় মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উত্তোলনকৃত বালু রাবার ড্যামের পাশে স্তূপ করা হয়েছে। গত আট মাস ধরে এভাবে বালু উত্তোলন করলেও উপজেলা প্রশাসন কেবল একবারই অভিযান পরিচালনা করেছে। এছাড়া বিনা বাধায় বালু উত্তোলন করায় সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। 

স্থানীয় ঠিকাদার উত্তম কুমার দেব পানছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটি যুগ্ম সম্পাদক। তার ভাই বিজয় কুমার দেব আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক। প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলছে না। 

রাবার ড্যাম সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা প্রতি রঞ্জন চাকমা জানান, নদী থেকে ঠিকাদার উত্তম মেশিন বসিয়ে বালু তুলেছে। উপজেলা  ইঞ্জিনিয়ার বলছে বালু উত্তোলন করলে পানির প্রবাহ বাড়বে। এসব বালু বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে। তা বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, প্রকল্পটি শুরু হওয়ার পর থেকে রাবার ড্যামের নীচের অংশে মেশিন বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। এখনো তা চলমান রয়েছে। এসব বালু গাড়িতে করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রতি গাড়িতে অন্তত ১০০ ফুট বালু পরিবহন করা হয়। দৈনিক ৩০ থেকে ৩৫ গাড়ি বালু উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয়। 

গত ৮ মাসে যে পরিমাণ বালু উত্তোলন করা হয়েছে তার বাজার মূল্য প্রায় ৫০ লাখ টাকা। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কথা স্বীকার করেন উত্তম কুমার দেব। তিনি জানান, কেবল আমি না এখানে অনেকেই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে। আমরা নিজের অনেকগুলো প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ চলমান রয়েছে। সেসব কাজের জন্য অনেক বালু প্রয়োজন হয়। উপজেলায় কোন ঘাট (বালু মহাল)  নেই। জেলা সদর থেকে বালু পরিবহন করে কাজ করা সম্ভব নয়। 

তিনি আরো বলেন, টানা কয়েকদিনে ১০ থেকে ১২ হাজার ফুট বালু উত্তোলন করার পর তা পরিবহন করা হয়। বালু রাখার জায়গা না থাকায় একসাথে বালু উত্তোলন করা সম্ভব হয় না।পরবর্তীতে পুনরায় আবার উত্তোলন করা হয়।

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে পিছনে এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী অরুণ কান্তি দাসের যোগসাজশ রয়েছে। ঠিকাদার উত্তম নদী থেকে বালু উত্তোলনের কথা স্বীকার করলেও প্রকৌশলী জানান বালুর সাথে পলিও রয়েছে। বিভিন্ন জায়গা বালু বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকৌশলী কোন সদুত্তর দিতে পারিনি। 

এই বিষয়ে জানতে চাইলে অরুণ কান্তি দাস বলেন, পানছড়িতে উত্তম বাবুসহ বেশ কয়েকজন ঠিকাদারের কাজের (প্রকল্প) প্রতি আগ্রহ রয়েছে। তারা বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছে। অন্য ঠিকাদাররা তাদের কাজে ঈর্ষান্বিত।

খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, পানছড়িতে আমাদের কোনো বালু মহাল নেই। কেউ যদি চেঙ্গী নদীর পানছড়ি অংশ থেকে বালু উত্তোলন করে আমাদেরকে জানান। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেয়া নিব। অবৈধ বালু উত্তোলনকারী যতই প্রভাবশালী হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।                           

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫