Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

ফোন করলেই সিলিন্ডার নিয়ে হাজির ‘চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংক’

Icon

এস.এস শোহান, বাগেরহাট

প্রকাশ: ১৯ জুন ২০২১, ১২:৫০

ফোন করলেই সিলিন্ডার নিয়ে হাজির ‘চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংক’

ফোন করলেই সিলিন্ডার নিয়ে হাজির হন চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংকের সদস্যরা। ছবি : বাগেরহাট প্রতিনিধি

যখন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট দেখা দিচ্ছে তখন বাগেরহাটে বিনামূল্যে বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছে ‘চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংক’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। গত ১ মে শুরু করা এই সংগঠনটি অন্তত ১১ জন মুমুর্ষ রোগীকে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। চরম অক্সিজেন সংকটের সময় কয়েকজন যুবকদের এই উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে।

‘বিনা অক্সিজেনে, ঝড়ে পড়বে না কোনো প্রাণ’- এই স্লোগান নিয়ে বাগেরহাট সদর উপজেলার চুলকাঠি এলাকার আট যুবক মিলে ১ মে ‘চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংক’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে তুলেন। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে তারা নিজেদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রচার প্রচারণা চালায়। এক পর্যায়ে তাদের এই মহতী উদ্যোগের বিষয়টি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। 

নির্ধারিত নম্বরে ফোন বা অক্সিজেন ব্যাংকের ফেসবুক পেজে সহযোগিতা চাইলে অক্সিজেন ব্যাংকের স্বেচ্ছাসেবকরা অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাজির হন রোগীর বাড়ি। শুধু বাগেরহাট জেলা নয়, পার্শ্ববর্তী খুলনার রুপসাতেও অক্সিজেন সরবরাহ করেছেন এই স্বেচ্ছাসেবকরা। অক্সিজেন সরবরাহ করতে গিয়ে সংগঠনটির সাকিব হাসান জনি, কাজী রেজোয়ান, চয়ন দেবনাথ করোনাভাইরাসে আক্রান্তও হয়েছেন। তবে তারা এখন সুস্থ রয়েছেন। 


এ পর্যন্ত মোরেলগঞ্জ, বাগেরহাট সদর, ফকিরহাট, খুলনার রুপসাসহ বিভিন্ন উপজেলায় ১১ জন মুমুর্ষ রোগীকে অক্সিজেন দিয়েছে সংগঠনটি। গভীর রাতেও অক্সিজেন নিয়ে রোগীর বাড়িতে যান স্বেচ্ছাসেবকরা। ফোন করার সাথে সাথে বিনামূল্যে অক্সিজেন পেয়ে খুশি রোগীরা।

চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংকের উদ্যোক্তা স্বেচ্ছাসেবক জনি আর রেজোয়ান বলেন, ১ মে আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে অক্সিজেন ব্যাংক চালু করি। এরপর থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি মুমুর্ষ রোগীর অক্সিজেনের অভাব মেটাতে। গভীর রাতেও মানুষের বাড়িতে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়েছি আমরা। এর মধ্যে একদিন রাত ১১টার সময় পার্শ্ববর্তী ভট্টবালিয়াঘাটা এলাকা থেকে ফোন করেন মহসীন মোড়ল নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, আমার স্ত্রী খুব অসুস্থ, অক্সিজেন লাগবে। ফোন পেয়ে অক্সিজেন নিয়ে ছুটে যাই আমরা। অক্সিজেন দেয়া শুরু করি। পরবর্তীতে আমাদের অক্সিজেন দেয়া অবস্থায় বাগেরহাট সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রদীপ বখশির পরামর্শে তাকে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংকের সেবা নিয়ে বেঁচে যান রামপাল এলজিইডিতে কর্মরত শাকিল মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ্ আল্লাহ্ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। অনেকটা সুস্থ অনুভব করছি। ওই দিন (১৬জুন) আল্লাহ ওসিলা হিসেবে চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংকের মাধ্যমে অক্সিজেন সাপোর্ট পেয়েছিলাম। আল্লাহ ভাল জানেন না পেলে কি হতো’।


মোড়লগঞ্জ উপজেলার ঢুলিগাতি গ্রামের রোগী সৈয়দ রিজভী আহমেদ শিপনের আত্মীয় লালীমা আহসান বলেন, চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংককে কৃতজ্ঞতা জানাই। শিপন খুব অসুস্থ ছিল, আমরা ফোন করার সাথে সাথে খুবই অল্প সময়ের মধ্যে তারা এসে শিপনকে অক্সিজেন দিয়েছেন।  আমার পরিবারের পক্ষ থেকে চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংককে ধন্যবাদ জানাই।

চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংক অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সমন্বয়ক জাকারিয়া হোসাইন শাওন বলেন, মুক্ত বাতাসের অক্সিজেনের অর্থমূল্য নির্ধারণের মাপকাঠি নেই। তবে সেই অক্সিজেন যখন সিলিন্ডারবন্দি হয় তখন তার আর্থিক মূল্য ধরা হয়। আমরা চেষ্টা করছি সমাজের হৃদয়বান মানুষের আর্থিক সহায়তায় বিনামূল্যে এই অক্সিজেন সেবা দিতে।

তিনি আরো বলেন, একজন মুমুর্ষ রোগীকে অক্সিজেন দেয়ার জন্য সিলিন্ডারের পাশাপাশি একটা ফুল সেটের প্রয়োজন হয়। একটি সেট তৈরি করতে আমাদের প্রায় ১৭ হাজার টাকার প্রয়োজন হয়। আমাদের দুটি সেট রয়েছে। একটি সেট রিফিল করা থাকলে সর্বনিম্ন পর্যায়ে ১ হাজার ৫০০ মিনিট অক্সিজেন দেয়া যায়। তবে যদি কারও অক্সিজেনের প্রয়োজন বেশি হয় সেক্ষেত্রে দুই থেকে তিন ঘন্টায়ই শেষ হয়ে যায়। এই সিলিন্ডারগুলো বাগেরহাটে রিফিল করা যায় না। খুলনা থেকে রিফিল করতে হয়। একবার রিফিল করতে ১৫০ টাকা ব্যয় হয়। রিফিলটা মূল নয়, মূল হচ্ছে সেট তৈরি করা। বর্তমানে আমাদের দুটি সেট রয়েছে। আমাদের যদি আরো কয়েকটি সেট থাকত তাহলে আরো বেশি মানুষকে সেবা দিতে পারতাম। এ ব্যাপারে বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেন জাকারিয়া।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নাসির উদ্দিন জানান, করোনা মহামারিতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি চুলকাঠি অক্সিজেন ব্যাংক যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রশংসার দাবিদার। আমি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। এর পাশাপাশি এই সংগঠনকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন তিনি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫