
মনিরা খাতুন
ফরিদপুর শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পার মনিরা খাতুনের (১৮) পেটে পাওয়া গেল সার্জিক্যাল কাঁচি। দীর্ঘ দুই বছর পর এক্সরে করে পেটের ভেতর দেখা যায় ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি লম্বা সার্জিক্যাল যন্ত্রটি। যা নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে মনিরা খাতুন। ডাক্তারের ভুলে সে আজ জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) তিন ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে বের করা হয়েছে যন্ত্রটি। এতে তার নাড়িতেও পচন ধরছে। কৃত্রিম পাইপের মাধ্যমে যা এখন সচল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এমন অদ্ভুত ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার বাশঁবাড়ীয়া ইউনিয়নের ঝুটিগ্রামের খাইরুল মিয়ার মেয়ে মনিরা খাতুনের সাথে। পেটের ব্যথা নিয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয় সে। তার এক সপ্তাহ পরে ডা. আবু সালেহ আহমেদ (সৌরভ) ও ডা. মোল্লা শরফুদ্দীন আহমদের একটি টিম মনিরার অপারেশন করে। এর পরে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি চলে যায় তারা।
পেটের ব্যথা কিছুটা কমার পরে পাশের উপজেলার পৈলানপট্টি গ্রামে বিয়ে হয় আঠারো বছর বয়সী তরুণীর। কিন্তু পেটের ব্যথাসহ নানা অসুস্থতা ও অন্তঃসত্ত্বার পরে বাচ্চা নষ্ট হওয়ার কারণে স্বামী তাকে ছেড়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে।
মনিরার মা রাহেলা বেগম জানান, আমরা গরিব মানুষ। আমার মেয়ের জীবন তো শেষ। তাকে বিয়ে দিয়েছিলাম এই সমস্যার কারণে তার সংসারও ভেঙ্গে গেছে।
গরিব অসহায় পরিবারটি অসুস্থ মনিরাকে সম্প্রতি মুকসুদপুর উপজেলার একটি ক্লিনিকে ডাক্তার দেখালে এক্সরে রিপোর্ট দেখে চমকে উঠে পরিবার। এক্সরেতে দেখা যায় পেটের মধ্যে সার্জিক্যাল কাঁচি। মনিরাকে নিয়ে গতকাল শুক্রবার আবার ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসে ভুক্তভোগী পরিবার।
মেয়েটির ভাই কাইয়ুম মিয়া বলেন, বিষয়টি ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় অভিযোগ করে পুলিশের সহায়তায় আমার বোনকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করি। আজ শনিবার তাকে আবার অস্ত্রোপচার করে পেটের ভিতরের যন্ত্রটি বের করবে ও একটি পাইপ সেট করবে বলে ডাক্তার আমাদের জানান। তিনমাস পর আবার আরেকটি অস্ত্রোপচার করতে হবেও বলে তাকে বলেন ডাক্তার। ডাক্তারের ভুলের কারণে আমার আজ ভুগছি, হাজার হাজার টাকা গেলো। পুরাপুরি সুস্থ হবে কিনা তাও ঠিক নাই। আমরা ওই ডাক্তারের বিচার চাই।
ফরিদপুর নুর সুপার ডায়াগনস্টিক ল্যাবের এক্সরে টেকনিশিয়ান আবু তাহের জানান, গতকাল রাতে রোগী আমাদের কাছে এক্সরে করাতে আসে। মনিটরে এক্সরের ছবিতে পেটের ভিতর সার্জিক্যাল আটারি দেখা যায়, বলে রোগীদের জানান ও রিপোর্ট প্রিন্ট করে দেয়।
ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. সাইফুর রহমান বলেন, আমরা আজই জানতে পারলাম এই ঘটনা। মেয়েটিকে আবার অস্ত্রোপচার করা হচ্ছে। তাছাড়া এই ঘটনায় আমার বিষয়টি তদন্ত করে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।