নৌকায় ভোট না দিলে কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করলেন আ.লীগ প্রার্থী

পুঠিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২২, ২০:৫৬
আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ
রাজশাহীর বানেশ্বর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ ঘোষণা দিয়েছেন, নৌকায় সিল না মারলে কাউকেই ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে দেবেন না। কেউ নির্দেশ না মানলে তালিকা করে ব্যবস্থা। এমন হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনী প্রচারণায় এমনই বক্তব্য দেন তিনি। পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিএনপি ভোট বর্জন করেছে। উনারা ভোট বর্জন করার পরে আওয়ামী লীগের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বসে আছে। আসলেই তারা বিএনপির ঢাল। আপনারা খোঁজ রাখবেন, কার বাড়িতে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঢুকছে। তার তালিকা করবেন। নির্বাচনের পরে তার ব্যবস্থা নেব। যদি তারা ভোট কেন্দ্রে যায়, তাহলে সোজা কথা নৌকা দেখিয়ে সিল মেরে দিবেন। যদি তাও না পারেন ওই ব্যক্তির তালিকা করবেন। আমি বানেশ্বরে তার ব্যবস্থা করবো।’
ভোটের আগে সরকারি দলের প্রার্থীর এমন বক্তব্যে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে বানেশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে কিছু লোক মিথ্যা প্রচারণা করছে। আমরা তাদের নজরদারিতে রেখেছি। নির্বাচনের পরে মিথ্যা প্রচারণার বিষয়গুলো দেখা হবে।
পঞ্চম ধাপের তফসিল অনুসারে রাজশাহীর পুঠিয়ার বানেশ্বর ও বেলপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৫ জানুয়ারি।
দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কালাম বিএনপিতে থাকাকালে ২০০১ সালে জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীর প্রচারণার জন্য বানেশ্বর বাজারে তৈরি নৌকা তার নেতৃত্বে পোড়ানো হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়া একাধিক প্রার্থী ও স্থানীয় নেতারা জানান, কালাম বিশেষ কৌশলে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এসেছেন। এতে দলের মধ্যে বিভেদ দেখা দিয়েছে। অথচ তার ও পরিবারের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসাসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নানা অভিযোগ রয়েছে। তার এক ছেলে অস্ত্রব্যবসা করতে গিয়ে র্যাবের হাতে পিস্তলসহ আটক হয়েছেন। এবার এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে কালামসহ ১২ জন দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন।
দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, ২০০৮ সালে সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারার হাতে ফুল দিয়ে কালাম আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০১৩ সালে সম্মেলনে বানেশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে তার নাম ঘোষণা করা হয়। সে সময় সাবেক নেতা মৃত আব্দুস সাত্তার মেম্বার প্রতিবাদ জানালে তাদের মধ্যে কয়েক দফা হামলা-মামলার ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে সাত্তার মেম্বারকে ফাঁসাতে কালাম আত্মগোপনে চলে যান এবং তার পরিবারের লোকজন মামলা করেন। তাকে উদ্ধারের পর র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এ নাটক সাজানোর কথা স্বীকার করেন। এ অপকর্মের অভিযোগে তাকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হলেও তা কার্যকর হয়নি।
সব অভিযোগ অস্বীকার করে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভোট এলেই কিছু লোক মিথ্যা প্রচারণা শুরু করেন। আমি বিএনপির নই, আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। দল আমাকে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দিয়েছে।