Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

শরণার্থী শিবিরের দুর্বিষহ সময়ের কথা আজও ভুলেনি শেরপুরের মানুষ

Icon

রফিক মজিদ, শেরপুর

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২২, ১২:৩৮

শরণার্থী শিবিরের দুর্বিষহ সময়ের কথা আজও ভুলেনি শেরপুরের মানুষ

১৯৭১ সালের ভারতের একটি শরণার্থী শিবিরে খাদ্য বিতরণের ছবি। ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানিদের নিপীড়ন ও বাঙালি জাতিকে মুছে দেওয়ার প্রচেষ্টার প্রতিবাদে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার দামাল ছেলেরা। সেই সময় পাকিস্তানি নরপশুদের বর্বর হামলার হাত থেকে বাঁচতে পাশ্ববর্তী ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে আশ্রয়ের জন্য দলে দলে ছুটে যায় মানুষ।

সেসময় ভারতের সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলায় আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে ছুটে আসে মানুষ। পাহাড় ও বন ঘেরা ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ডালু, বারাঙ্গাপাড়া, তুরাসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয় স্বাধীনতাকামী বাঙালিরা। এদের মধ্যে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনই ছিল সিংহভাগ। ভারতের মেঘালয়ে তৎকালে জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১০ লাখ। আর শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয় প্রায় ৭ লাখ।

শেরপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে যারা মেঘালয়ের ডালু, বারাঙ্গাপাড়া, তুরাসহ বিভিন্ন স্থানের শরণার্থী শিবির বা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয় তাদের অনেকেই আজ বেঁচে নেই। যারা বেঁচে আছেন তারা সেই সময়কার দুর্বিষহ জীবন ও অনিশ্চত ভবিষ্যতের কষ্টের কথা মনে করলে এখনো চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরে। স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠে প্রিয়জন ও প্রতিবেশীদের নির্মম মৃত্যুর দৃশ্য। 

একাত্তরের শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার মুক্ত অঞ্চল হিসেবে ভারতের মেঘালয়ের ডালু সীমান্ত খুলে দেয়া হলে বানের জলের মতো মানুষ ডালুতে প্রবেশ করে তন্তর গ্রাম হয়ে ভোগাই নদী দিয়ে। এমনি একদিনের ঘটনা, ১৯৭১ সালের ২৫ মে নালিতাবাড়ি এবং ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ও গাজীপুর এলাকার অসংখ্য মানুষ ওই নদী দিয়ে মুক্তাঞ্চলে প্রবেশ করছিল। এমন সময় নদী চরের কাশবনে লুকিয়ে থাকা পাকবাহিনী নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে অসংখ্য নিরস্ত্র মানুষকে। এরপরও থেমে থাকেনি পাকবাহিনী। আস্তে আস্তে তারা ভারতের অভ্যন্তরে ডালু ক্যাম্পে প্রবেশ করে তৎকালীন ভারতের বিএসএফয়ের ৯ সেনাকে হত্যা করে এবং আরো পাঁচ সেনাকে ধরে নিয়ে ময়মনসিংহ জেলে কারাবন্দি করে। বিএসএফ সদস্যরা সেদিন তাদের হাইকমান্ডের থেকে শত্রুকে প্রতিহত করার নির্দেশনা পেতে দেরি হওয়ায় তারা নিজেরাই হতাহত হন।

এসময় পাকবাহিনী শুধু ওই বিএসএফ ক্যাম্পেই নয়, আশপাশের শরণার্থী শিবিরেও হামলা চালিয়ে অসংখ্য শরণার্থীকে হত্যা করে। ভারতের অংশে বর্তমানে ওই ৯ জোয়ানের স্মরণে ডালু বিএসএফ ক্যাম্পে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। কিন্তু বাংলাদেশ অংশে আজও তা মলিন স্মৃতি হিসেবেই পড়ে রয়েছে।

সেই সময়ের দুর্বিষহ ও অনিশ্চিত জীবনের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছে বেশ কিছু মানুষ। এদের মধ্যে একজন অরুণ চন্দ্র দে। বয়স পঁচাত্তর। থাকেন নালিতাবাড়ি পৌর এলাকায়। একাত্তরে তিনি টগবগে যুবক। সবেমাত্র বিয়ে করেছেন। শহরের নিলাম পট্টিতে মিষ্টির ব্যবসা করতেন। পাকিস্তানিদের নিপীড়ন বেড়ে যাওয়ায় জীবন বাঁচাতে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে সাথে নিয়ে ডালুতে চলে যান অরুণ। সাথে ছিলেন তার ভাই ও ভাতিজারা। যেদিন তারা সীমান্ত পারি দেন সেদিন প্রচুর বৃষ্টি হয়। ওই বৃষ্টির মধ্যেই কাঁধে ভাতিজা ও মালসামানার বস্তা নিয়ে ছুটে চলেন জীবন বাঁচাতে। নালিতাবাড়ি শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে সীমান্তে পৌঁছান। কিন্তু পথের মধ্যে ঘটে বিপত্তি। রাজাকার বাহিনীরা ওৎ পেতে থেকে অনেক শরণার্থীর পথ রোধ করে ছিনতাই ও হামলা চালায়। তারপরও সবকিছু ছেড়ে দিয়ে তারা শেষ পর্যন্ত জীবন বাঁচাতে ভারতের ডালুতে প্রবেশ করে। 

বিভা রাণী দে ও অরুণ কুমার দে

অরুণ দে জানান, তারা প্রথমে ডালু বিএসএফ ক্যাম্পের পাশেই হরি মন্দিরে অবস্থান করেন। সেখানে ভারতের স্বেচ্ছাসেবক দলের তরুণরা তাদের জল-খাবার ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করেন। এরপর শরণার্থীর তালিকা করে পাঠিয়ে দেয়া হয় পাহাড়ের দিকে শরণার্থী শিবিরের তাবু ও ঘরে। অরুণের বেশ কিছু আত্মীয় আগে থেকেই মেঘালয়ের তুরা শহরে বসবাস করায় ওই শরণার্থী শিবিরে বেশিদিন অবস্থান করতে হয়নি। কিছুদিন পর তারা পরিবার নিয়ে তুরায় চলে যান। কিন্তু যে কয়দিন তারা শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করেন সে কয়দিন দুর্বিসহ কষ্ট ও অজানা আতংকে প্রতি রাতেই ডুকরে ডুকরে কাঁদতেন। অরুণ দের স্ত্রী তাদের অনাগত শিশুর জন্ম ও ভবিষ্যত নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় থাকতেন। 

অরুণ দে জানান, শরণার্থী শিবিরে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিদিন দুই বেলা করে চাল-ডালের খিচুড়ি আর কিছু রেশন দিতো। রেশনের মধ্যে ছিল চাল, ডাল ও গুড়ো দুধ। বিদ্যুৎ নেই, বিশুদ্ধ খাবার পানি নেই, ঘর নেই, ছন ও বাঁশের তৈরি বেড়া আর কিছু তাবু ছিল রাত্রী যাপনের জন্য। আশপাশের কিছু পুকুর আর কুয়ার পানিই ছিল খাবার পানির ভরসা। মশারি না থাকায় শুধু রাতে নয় দিনের বেলাতেও মশার কামড়ে অসংখ্য মানুষের ম্যালেরিয়া এবং বিশুদ্ধ পানির অভাবে কলেরা (ডায়রিয়া) রোগে মারা যায়। হাজার হাজার শরণার্থীর মধ্যে ডাক্তার ও ওষুধ ছিল খুবই অপ্রতুল। ফলে অনেক শরণার্থী বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে। সৎকারের জন্য কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অনেক হিন্দু-মুসলিমকে মাটি চাপা দেয়া হতো। 

তিনি আরো জানায়, তৎকালীন ভারত সরকার বিশেষ করে ইন্দিরা গান্ধী খুবই আন্তরিক ছিলেন স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশ বা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানি মানুষের প্রতি। তাই তিনি একবার মেঘালয়ের বারাঙ্গাপাড়া যোশিপাড়া এলাকায় আসেন স্বচক্ষে শরণার্থীদের দেখতে। সেসময় তিনি শরণার্থী শিবিরের প্রায় প্রতিটি শিবিরে ঘুরে ঘুরে শরণার্থীদের খোঁজ নেন এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থান থেকে আগত বাঙালিদের উদ্দেশে ভাষণের এক পর্যায়ে বলেন, ‘আপ লোক চিন্তা মাত করিয়ে। জরুর জয় বাংলা হোজায়ে।’ 

তার এ ভাষণে তখন অনেকের মনে সাহস ও শক্তি জুগিয়েছে। কেউ কেউ তখন তুরা থেকে বিস্কুট-চানাচুর, পান-বিড়ি কিনে এনে ফুটপাত ও বারাঙ্গাপাড়া বাজারে দোকান দিয়ে ব্যবসা করেছেন। 

অরুণ দে জানান, তিনি নিজেও বাঁচার তাগিদে একটু ভালো কিছু খেতে পান-বিড়ির দোকান দিয়েছিলেন। 

শরণার্থী শিবিরের আরেক বাসিন্দা শান্তি রঞ্জন পোদ্দার। থাকতেন নালিতাবাড়ি শহরে। এখন বেঁচে নেই। একাত্তরে তিনি তার পরিবারের ৯ সদস্য নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন ভারতের মেঘালয়ের ডালু শরণার্থী শিবিরে। প্রথমে অন্যদের মতো স্থানীয় গোপাল বা হরি বাশর মন্দিরে আশ্রয় নেন তারা। এদেশে তারা চানাচুর ও বাদাম ভেঁজে বাজারে বিক্রি করে দিনানিপাত করতেন। শরণার্থী শিবিরে প্রথমে গিয়ে লঙরখানায় খাওয়ার নাম জোটে। এর পাশাপাশি তারা সেখানেই কেউ বাদাম ভেজে কেউ চানাচুর ভেজে বাড়তি আয় করতেন।

শান্তি রঞ্জনেরর ছেলে বর্তমানে সরকারি গার্লস স্কুলের শিক্ষক ও লেখক জ্যোতি পোদ্দার তার বাবার বরাত দিয়ে জানিয়েছেন, সেসময় যারা একুট ভালো থাকতে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ রেশনের চাল-ডাল দিয়ে চানাচুর বানিয়ে দুই আনা-চার আনা পয়সায় ছোট ছোট পলি ব্যাগে ভরে শরণার্থী শিবিরে ঘুরে ঘরে বিক্রি করতেন। প্রথম প্রথম ওই চানাচুর বিক্রি বাড়াতে ভারতের তৎকালের নায়িকা ‘মধুবালা’র নাম ব্যবহার করে বিক্রি করলে তা খুব একটা বিক্রি হয়নি। তবে যখন ‘জয়বাংলা’ নাম দিয়ে ওই চানাচুর বিক্রি করতে যায় তখন তা মুহুর্তেই শেষ হয়ে যেতো।   

নালিতাবাড়ি পৌর শহরের জেলা খানা মোড়ে দুই ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন বিভা রাণী দে। বর্তমান বয়স তার ৭৫। তিনি বর্তমানে বিধবা জীবনের সংসারের ঘানি টানতে টানতে কুজো হয়ে পড়েছেন। বিভা রাণী দে ৫০ বছর আগে শরণার্থী শিবিরে পাকিদের হামলায় তার স্বামী বিমল দে নিহত হওয়ার পর নানা কষ্টের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন। একাত্তরের ২৫ মে যেদিন পাক বাহিনীর হামলায় শরণার্থী শিবিরে তার স্বামীসহ বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়, ঠিক তার আগের দিন তিনি আর ছোট ছোট দুই ছেলে ও এক মেয়েকে হারিয়ে ফেলেন। তাই তার স্বামীকে হরি মন্দিরে রেখে হারিয়ে যাওয়া ছেলেমেয়ের খোঁজে ছুটে যান অন্যত্র। শত শত মানুষের মাঝে অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাদের পেলেও সেই রাত পেরিয়ে যখন সকাল হয় তখন খবর পান হরি মন্দিরে পাকিদের হামলার খবর। খবর পেয়ে বিভা রাণী নির্বাক হয়ে পড়েন। স্বামীর লাশের জন্য হরি মন্দিরে গেলেও তাকে লাশের কাছে যেতে দেয়া হয়নি, সেই লাশ নিয়ে যাওয়া হয় তুরা শহরে। তাই তার স্বামীর সৎকারও নিজ হাতে করতে পারেনি।

শেরপুর জেলা শাহরের তিনআনী বাজারের বাসিন্দা কল্যাণী কর্মকার ১৯৭১ সালে শেরপুর সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। সারাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের দামামা শুরু হয়েছে। কল্যাণী সেসময় সক্রিয়ভাবে কোনো ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত না থাকলেও ছাত্র ইউনিয়নের বিভিন্ন সভা ও অনুষ্ঠানে তাকে ডাকা হতো। কারণ ব্যক্তিগত জীবনে তিনি লেখালেখির সাথে জড়িত ছিলেন। এমনই এক সময় বৈশাখ মাসে রাতে রেডিওতে খবর পেলেন ঢাকায় গন্ডগোল চরম আকার ধারণ করেছে, পাকিরা সারাদেশে নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে চালাতে পাশ্ববর্তী জামালপুরে চলে এসেছে। তাই তিনি তার বড় ভাই তৎকালীন স্থানীয় জিকে পাইলট হাই স্কুলের শিক্ষক বিমল কর্মকার ও পরিবারের অন্যান্য আত্মিয়স্বজনের সিদ্ধান্তে পরদিন ভোরেই ভারতে আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরদিন তাদের পরিবারের প্রায় ২০ জন সদস্য বাসে করে ভারত সীমান্ত পাড়ি দেন।

তৎকালীন ভারত সরকার সীমান্তের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে তাদের নিজের দেশের নাগরিকের পাশাপাশি শিবিরে আশ্রিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানি নাগরিকদেরও নানা কাজে সম্পৃক্ত করেন। কল্যাণীকে প্রথমে নার্সের দায়িত্ব দিতে চাইলে তিনি রাজি হননি। পরে তাকে শিবিরের রেশন বিতরণের কাজে নিয়োগ করা হয়। মাসে ৩০ টাকা বেতনও ধার্য করা হয়।

শিবিরগুলোতে থাকা-খাওয়ার পাশপাশি বিনোদনমূলক নানা অনুষ্ঠানাদিও হতো। স্থানীয় বিশ্বকর্ম পূজা উপলক্ষে তার বড় ভাই বিমল কর্মকারের লেখা ‘কেরানীর জীবন’ নামে একটি নাটক মঞ্চস্থের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাকে অভিনয় করার আহ্বান জানানো হয়। সে নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল বিভিন্ন স্থানে। এক পর্যায়ের সেই নাটক ভারতের বিভিন্ন স্থানে মঞ্চস্থের মাধ্যমে শরণার্থী শিবিরের জন্য অর্থ সংগ্রহও করা হয়েছিল।

কল্যাণী কর্মকার জানান, ভারতের বিভিন্ন স্থানে তাদের আত্মীয়রা তাদের বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তাব করলেও তারা না গিয়ে পুরো নয় মাসই শিবিরেই থাকেন। শিবিরে আশ্রয় নেওয়াদের রেশন বিতরণের কাজ করেছেন নিরলসভাবে। সেই সাথে তিনি তার লেখালেখি চালিয়ে গেছেন। দেশ নিয়ে, দেশ স্বাধীনতা নিয়ে লিখেছেন অনেক কবিতা। যুদ্ধ শেষ হলে দেশের নিজ জন্মভূমি ও তাদের পৈত্রিক ভিটেতে ফিরতে উদগ্রীব হয়ে উঠেন কল্যাণী। তার বড় ভাই বিমল কর্মকার প্রথমে দেশের ঘর-বাড়ির খোঁজ নিতে আসেন। তখন তিনি এপ্রিল মাসের কোনো একদিন তাদের বাসায় এসে দেখেন বাড়ি-ঘর ভাঙ্গাচোড়া ও উঠোন জুড়ে জঙ্গলে ভরে গেছে। এখানে আপাতত বসবাস করা সম্ভব নয়। তাই তারা সিদ্ধান্ত নেন শহরের অন্য কোথায় আশ্রয় নিয়ে বাড়ি-ঘর ঠিক করে পরে বাড়িতে উঠবে।  

বর্তমান শেরপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সামছুন্নাহার কামাল একাত্তরে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবার বাড়ি পার্শ্ববর্তী বক্সিগঞ্জ উপজেলায়। সেসময় তার বাবা আব্দুল বারি ছিলেন থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তাই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাদের পরিবারের উপর নেমে আসে নানা নির্যাতন। ফলে তার মা-বাবাসহ সব আত্মীয়স্বজন পাড়ি জমান ভারতের মেঘালয় প্রদেশের মহেন্দ্রগঞ্জে। সেখানে কিছুদিন সীমান্ত লাগোয়া একটি মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি সংলগ্ন স্থানে বসবাসের পর যুদ্ধের দামামা যখন ব্যাপকভাবে শুরু হয় তখন সেখানে তাদের নিরাপদ মনে না হলে চলে যান মেঘালয়ের ভিতরের দিকে পাহাড়ি গারো পল্লীতে। সেখানে তারা এক গারো পারিবারের সাথে আলাদা ঘর তুলে থাকেন। তবে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বাংকারে থাকতে হতো। কারণ তাদের ওই স্থান থেকে ১১নং সেক্টরের দূরত্ব খুব বেশি দূরে ছিল না। তাদের মাথার উপর দিয়ে অনবরত গোলা-বারুদ ছুটে যেতো। 

সামছুন্নাহার কামাল জানায়, তার শৈশবের সেই সময়টির কথা স্পষ্ট মনে না থাকলেও শুধু মনে পড়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাওয়ার সময় সীমান্ত পাড়ি দিতে দুই দফা ফেরত আসতে হয়েছে রাজাকার বাহিনীর লুটতরাজ আর বাধার কারণে। দ্বিতীয় দফায় ফেরত আসার পর তৃতীয় দফায় রাতের বেলা অনেকটা পালিয়ে যেতে হয়েছিল ভারতে। তবে দ্বিতীয় দফায় যখন রাজাকার বাহিনী তাদের পরিবারের গরুর গাড়ির উপর হামলা চালায়। তখন রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা তাদের গালিগালাজ করে বলেন, তোর বাবা তো জয় বাংলার লোক, তবে তোরা কেন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছিস, স্বাধীন বাংলার আশা ছেড়ে দে, এদেশ পাকিস্থানই থাকবে।’ 

বর্তমানে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আখতারুজ্জামান জানান, তিনি একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর ডাকে ভারতে মেঘালয়ে গিয়েছিলেন যুদ্ধের ট্রেনিং নেওয়ার জন্য। মেঘালয়ের রংনাবার্গ ক্যাম্পে ৪০ দিনের গেরিলা ট্রেনিং শেষে চলে আসেন বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি পুরাকাশিয়া বন্ধকুঁচি গ্রামে একটি ক্যাম্পে। সেখান থেকে তারা পাক সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দেন।

এ সময়ের নানা ঘটনা আর কষ্টের স্মৃতি এখনো শেরপুরের শত শত মানুষের মনকে তাড়া করে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫