মাংসের বিকল্প হিসেবে ঝিনুক সংগ্রহ করছেন নিম্ন আয়ের মানুষ

মো. রাসেল ইসলাম, দিনাজপুর
প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২২, ১৬:০০

ছবি: দিনাজপুর প্রতিনিধি
দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের পাশ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া ঢেপা নদীর পানিতে কিছু মানুষ ডুবছে আর উঠছে। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে পানিতে ডুবে ডুবে মানুষ কিছু একটা তুলছেন। কাছে গিয়ে চোখে পড়ল তারা সবাই নদীর পানির নিচ থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করছেন।
যার মধ্যে রয়েছেন- ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, নমশূদ্র ও জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন। এখানে যারা ঝিনুক সংগ্রহ করছেন, তারা সবাই নদীর পার্শ্ববর্তী ঈশানপুর, পরমেশ্বরপুর, নয়াবাদ গ্রামের মানুষ। প্রতিদিনকার মতোই এই নদীতে ঝিনুক কুড়াতে আসেন তারা। নদীর পানিতে ডুব দিয়ে ঝিনুক সংগ্রহ করছেন তারা। এসব ঝিনুক বাড়িতে নিয়ে কেউবা রান্না করে খান আবার কেউ কেউ বিক্রিও করেন। এই ঝিনুক দিয়ে প্রোটিনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অনেকেই বাড়তি আয়ও করছেন।
স্থানীয়দের মতে, এই ঝিনুক রান্না করে খেলে মাংসের মতো স্বাদ পাওয়া যায়। আর উপকার হিসেবে চোখের জ্যোতি ঠিক থাকে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ঝিনুক শুধু চোখের জ্যোতিই ঠিক রাখে না, এটি প্রোটিনের একটি ভালো উৎস। তাছাড়া অ্যাজমা ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে ঝিনুক। ঝিনুক থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও সম্ভব বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। ঝিনুকে রয়েছে ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক ও আয়রনের মতো মিনারেলস।
এই নদীতে যারা ঝিনুক সংগ্রহ করছেন, তাদের মধ্যে একজন কাহারোল উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ঈশানপুর এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লদীকি টুডু। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চার কেজির মতো ঝিনুক সংগ্রহ করতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, এই নদীতে প্রতি বছরই ঝিনুক সংগ্রহ করি। ঝিনুক সিদ্ধ করে খোলস খুলি। ভেতরে মাংসর মতো পাই, সেইটা রান্না করি খাই। এসব খাইলে চোখের জ্যোতি ঠিক থাকে।
এ বিষয়ে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড প্রসেসিং এবং প্রিজারভেশন অনুষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মারুফ আহম্মেদ বলেন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী শামুক-ঝিনুক খাচ্ছে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণের উদ্দেশ্যে। সত্যিকার অর্থে তাদের প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ হচ্ছে। শামুক-ঝিনুকের মধ্যে বিশেষ করে ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক ও আয়রণ প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। শামুক-ঝিনুকে কোলেস্টেরল পরিমাণ খুবই কম। এটি হাই ব্লাড প্রেসার, অ্যাজমাকেও কমাতে পারে।