Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

উদ্বোধনের আগেই দেবে গেলো চার কোটি টাকায় নির্মাণাধীন ব্রিজ

Icon

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২২, ২১:৩৫

উদ্বোধনের আগেই দেবে গেলো চার কোটি টাকায় নির্মাণাধীন ব্রিজ

দেবে যাওয়া ব্রিজ। ছবি- সংগৃহীত

উদ্বোধনের আগেই দেবে গেল প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন ব্রিজ। এমনটাই ঘটেছে টাঙ্গাইল পৌর শহরের বেড়াডোমার লৌহজং নদীর উপর ওমরপুর রোডের নির্মাণাধীন ব্রিজে। নিম্নমানের কাজের ফলে উদ্বোধনের আগেই ব্রিজটি দেবে পড়ার ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তবে এতে কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।

জানা যায়, টাঙ্গাইল পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ৪ ও ৬ নং ওয়ার্ডের বেড়াডোমার লৌহজং নদীর উপর ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিকস এন্ড ব্রিজ লি: এন্ড দ্যা নির্মিতি (জিভি)। নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে ১২ নভেম্বর আর সমাপ্তি সময়সীমা ছিল ২০২২ সালে ১১ মে। ৪০ মিটার দৈর্ঘ্য আর ৮মিটার প্রস্থের ব্রিজটি নির্মাণে ব্যয় ধার্য হয় ৩ কোটি ৬০ লাখ ১৮ হাজার ৮৪১ টাকা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, লৌহজং নদীর মাঝখান থেকে গাছ ও বাঁশের পাইল সরে গিয়েছে। ব্রিজটির মা খানে দেবে গেছে। কয়েক জন শ্রমিক ব্রিজ নির্মাণে কাজ করে যাচ্ছে। দেবে যাওয়া স্থান পৌরসভা ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারের গাফিলতিতে ব্রিজটি নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই দেবে গেছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০ টায় টাঙ্গাইল-বেড়াডোমা-ওমরপুর সড়কের বেড়ডোমা এলাকার লৌহজং নদীর উপর নির্মিত ব্রিজটি দেবে যায়। নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই ব্রিজটি দেবে যাওয়ায় ওই সড়ক ব্যবহারকারীদের আরও দুর্ভোগ বাড়লো বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্রিজটি নির্মাণ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। 

বেড়াডোমা এলাকার বাসিন্দা মাসুদ পারভেজ বলেন, ইতিপূর্বে এখানে যে বেইলি ব্রিজ ছিলো। ওই ব্রিজটি পরপর দুইবার ভেঙে কয়েক বছর আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এবার স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণ হচ্ছে জেনে আনন্দিত হয়েছিলাম। এখন দেখছি নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই হেলে পরেছে ব্রিজ। 

স্থানীয় নুরু মিয়া বলেন, প্রায় ৫বছর যাবত আমরা ব্রিজের কষ্টে আছি। পরপর দুইবার বেইলি ব্রিজ ভেঙে দুর্ভোগে ছিলাম। এরপর স্থায়ী নির্মাণের সময় শেষেও কাজ শেষ না হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছি। এবার সেই নির্মাণাধীন ব্রিজটিই হেলে পরেছে। ব্রিজ না থাকার কারণে এলাকায় কেউ বাসা ভাড়া নিতে চায় না। এছাড়াও যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে কমেছে জমির দামও।

জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সোলাইমান হাসানের অভিযোগ, ব্রিজটির নির্মাণ কাজ পেয়েছিলেন এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। স্থানীয় এমপি তার কাজ থেকে প্রভাব খাটিয়ে কাজটি হাতিয়ে নেয়। পরে তার কর্মী আমিরুলসহ তার অনুসারীদের কাজটি দিয়েছে। যারা কখনও ব্রিজ নির্মাণ করা দেখেই নাই তারা ব্রিজ নির্মাণ করতে এসেছে। এটা দুঃখজনক। নদীতে তেমন পানি ও স্রোত না থাকলেও সেতুটি দেবে গেছে। দফায় দফায় সঠিক পদ্ধতিতে আর মান সম্মত ভাবে ব্রিজটি নির্মাণ করার দাবি জানালেও তারা এমপি দোহাই ও ক্ষমতা দেখিয়েছেন। নদীতে পানি বা স্রোত না থাকা সত্ত্বেও ব্রিজটি কেন হেলে পড়লো এমন প্রশ্ন রেখেছেন তিনি। সরকারের অর্থের অপচয় করার জন্য ব্রিজ নির্মাণে জড়িত সকলের বিচার দাবি করেছেন তিনি।

৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ বলেন, দুর্ভোগ লাঘবে কাজটি শেষ করার জন্য বার বার তাগিদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কোন কথাই শুনেন না। এই মুহূর্তে ব্রিজটি দেবে যাওয়ায় স্থানীয়সহ আশপাশের এলাকার প্রায় কয়েক লাখ মানুষের দুর্ভোগ আবার বেড়ে গেলো।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আমিরুল ইসলাম খান বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠাটির ঢাকার। তবে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন জামিল ভাইসহ কয়েক জন। আমার নেতৃত্বে কোন কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

টাঙ্গাইল পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শিব্বির আহমেদ আজমী জানান, শুরু থেকে ব্রিজ নির্মাণের কাজ ঠিক ছিল। ব্রিজটি নির্মাণের নিয়ম অনুসারেই কাজটি চলছিল। প্রাকৃতিক কারণে নাকি নির্মাণ ত্রুটির ফলে ব্রিজটি হেলে পরেছে এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের সাবেক প্রকল্প পরিচালক মো. মহিরুল ইসলাম খান জানান, গত বছর আমি অবসরে এসেছি। কাজটির প্রকল্প পরিচালক ছিলাম আমি। প্রকল্পের মেয়াদ অনুসারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় এক বছর পর কাজটি শুরু করেছেন। ঠিকাদারের কাজের অজ্ঞতা থাকাসহ অফিসিয়াল নিয়ম মানার প্রবণতা কম ছিল। এ কারণে আমি কাজটি বাতিল করতে চেয়েছিলাম। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফলতির কারণে ব্রিজটি হেলে পড়ার ঘটনাটি ঘটতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫