চবি ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন: আটক ৪ জনের দুইজন ছাত্রলীগ কর্মী

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২২, ১৭:০৯

ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় আটককৃতরা। ছবি: বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীকে হেনস্তা ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগে চারজনকে আটক করেছে র্যাব-৭। গতকাল শুক্রবার (২২ জুলাই) চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।
আজ শনিবার (২৩ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে র্যাব-৭ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ।
র্যাব-৭-এর অধিনায়ক জানান, ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের ঘটনায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসেটও উদ্ধার করেছে র্যাব। তবে ভিডিও ডিলেট করে দিয়েছে অভিযুক্ত আসামি। আটককৃতদের মধ্যে দুইজন ছাত্রলীগের কর্মী। তারা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রেজাউল হক রুবেলের অনুসারী। রুবেলের সাথে তারা ক্যাম্পাসে দাপিয়ে বেড়াত। রুবেলের সাথে একাধিক ছবিতে আসামিদের দেখাও গেছে।
আটককৃতরা হলো- নোয়াখালী জেলার চরভারত সেন এলাকার আমির হোসেনের ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. আজিম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও ফেনীর পরশুরাম থানার বেড়াবাড়ি গ্রামের বেলায়েত হোসেনের ছেলে মো. নুরুল আবছার বাবু (২২), হাটহাজারী কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ও হাটহাজারী থানার ফতেপুর ইউনিয়নের জাবেদ হোসেনের ছেলে মো. নুর হোসেন শাওন (২২), হাটহাজারী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ঝালকাঠি সদর থানার আব্দুল মান্নানের ছেলে মো. মাসুদ রানা (২২)।
লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ আরো জানান, আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা র্যাবের কাছে ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। তারা মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণের তথ্যও স্বীকার করেছেন। আটক চারজনকে হাটহাজারী থানায় সোপর্দ করা হবে।
র্যাব-৭-এর অধিনায়ক আরো বলেন, ছাত্রী হেনস্তার ঘটনায় মামলার পর থেকেই ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও র্যাবের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তদন্ত পর্যায়ে একজন আসামিকে আটকের পর বাকিদের তথ্য পাওয়া যায়। পরে চারজনকে আকট করা সম্ভব হয়। অন্য দুজন পলাতক। তাদের আটকের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আসামিদের মোবাইল ফোন থেকে ভিডিও উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা ভিডিও ধারণের তথ্য স্বীকার করেছে। তবে এ ঘটনায় মামলার পরপরই ভিডিও ডিলেট করে দিয়েছে। এখন মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে ভিডিও উদ্ধারের চেষ্টা চালাতে হবে।
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আটককৃতদের মধ্যে দুইজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অন্য দুইজন হাটহাজারী কলেজের শিক্ষার্থী। কিন্তু তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকে এবং স্থানীয় হওয়ার সুবাদে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে। আজিম নিজেই ভিডিও ধারণের তথ্য স্বীকার করেছে। তবে তারা ছাত্রসংগঠনের সাথে জড়িত থাকার তথ্য স্বীকার করলেও পদ-পদবি নেই বলে দাবি করেছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই রাত সোয়া ১০টায় একদল তরুণের হাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী যৌন নিপীড়ন ও হেনস্তার শিকার হয়। তাকে মারধর করে বিবস্ত্র করার পর ভিডিও ধারণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় মামলা দায়ের করলে আন্দোলন শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এসময় ছাত্রলীগ নামধারী তরুণরাই ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন করার অভিযোগও রটে যায়। পরবর্তী সময়ে চারজন আটকের ঘটনার পর জানা গেল, তাদের দুইজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি রুবেলের অনুসারী। তাদের সাথে রুবেলের ছবিও পাওয়া গেছে। তবে এর আগে রুবেল সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে দাবি করেছিলেন, ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় যাদের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি দাবি করেছিলেন, ওই ছাত্রীকে প্রক্টরের কাছে অভিযোগ দিতে তিনি বাধা দেননি, বরং সহযোগিতা করেছিলেন।