ঘরে মায়ের লাশ রেখে পরীক্ষা দিলেন দুই বোন

ঘরে মায়ের মৃতদেহ রেখে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে হয়েছে দুই বোনকে। মায়ের মৃত্যুশোক বুকে চেপে আজ মঙ্গলবার (২ মে) বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা দিয়েছেন সাদিয়া ফেরদৌস ও শারমিন ইয়াসমিন।

গত কিছুদিন আগে ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হন তাদের মা আনোয়ারা বেগম। এরপর থেকে নানান ধরনের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। গতকাল সোমবার (১ মে) রাতে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে টেকনাফ থেকে কক্সবাজার হাসপাতালে নেওয়া হয়।

অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম নেওয়ার প্রস্তুতি নিতেই মা আনোয়ারা বেগম মারা যান। শোকে কাতর স্বজনেরা যখন মরদেহ দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন লাশ বাড়িতে রেখেই সাদিয়া ফেরদৌস ও শারমিন ইয়াসমিন গেলেন পরীক্ষা দিতে। 

সাদিয়া ও শারমিনের পরীক্ষার কেন্দ্র পড়েছে টেকনাফ উপজেলা সদরের এজাহার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। সকাল ১০টার আগে চোখ মুছতে মুছতে ওই কেন্দ্রে যান দুই বোন। 

সহপাঠী ও কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সহযোগিতায় দ্বিতীয় দিনের বাংলা দ্বিতীয় পত্র বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নেন তারা।

সাদিয়া ও শারমিনের পরিবার এবং স্থানীয় লোকজন জানান, টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পানছড়ি পাড়া গ্রামের জহির আহমদের স্ত্রী ৫০ বছর বয়সী আনোয়ারা বেগম। তাদের পরিবারের তিন মেয়ে ও চার ছেলে সন্তান রয়েছে। 

হঠাৎ ভোরের দিকে মা আনোয়ারা বেগমের মৃত্যু হয়। বাড়িজুড়ে শোকের আবহ, চলছে লাশ দাফনের প্রস্তুতি। মায়ের মৃত্যুর পর সাদিয়া ও শারমিন ভেঙে পড়লেও স্বজনদের কথায় এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যান তারা। 

পরীক্ষা শেষে সাদিয়া ও শারমিন বাড়ি ফেরার পর বিকেল তিনটার দিকে সাবরাং পানছড়ি পাড়া স্কুল মাঠে মা আনোয়ারা বেগমের জানাজা হয়। পরে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন কর হয়।

সাবরাং উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মফিজ উদদৌল্লাহ বলেন, মা হারানো দুজন শিক্ষার্থী খুবই মেধাবী। তারা  দুটি কক্ষে আলাদাভাবে পরীক্ষা দিচ্ছেন। তবে তারা মাঝেমধ্যে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা গেছে।

দুই কক্ষের দায়িত্বরত শিক্ষক জাকারিয়া আলফাজ ও রিফাত জাহান মিনা জানান, পরীক্ষার শুরু হওয়ার আগে সকল শিক্ষার্থীরা তাদেরকে উৎসাহিত করেছেন। তবে মাঝেমধ্যে তারা দুজন কাঁদতে কাঁদতে পরীক্ষার খাতায় লিখতে দেখা গেছে। আমরা তাদের সান্ত্বনা দিয়েছি।

ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, দুই পরীক্ষার্থীর মায়ের মৃত্যর খবর পাওয়া পর তাদের মনোবল বাড়ানোর জন্য তাদেরকে বিভিন্নভাবে উৎসাহিত করা হয়। 

কেন্দ্রসচিব ও সরকারি এজাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিউলি চৌধুরী বলেন, সাদিয়া ও শারমিন মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি আমরা সকালেই জানতে পেরেছিলাম। সবার সঙ্গে বসে পরীক্ষা দিলে তার জন্য ভালো হবে ভেবে তার জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা চেয়েছিলাম সে সবার সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই পরীক্ষা দিক। তারা দুই বোন এক হাতে রুমাল দিয়ে বারবার চোখ মুছছিল। আর অন্য হাতে পরীক্ষার খাতায় লিখেছে। 

সাদিয়া ও শারমিন বলেন, মা আমাদের অনেক ভালোবাসতেন। চাইতেন আমরা যেন পড়ালেখা করে অনেক বড় হই। তাই এমন অবস্থায়ও আমরা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। মায়ের আত্মাকে আমরা কষ্ট দিতে চাই না। 

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো কামরুজ্জামান বলেন, মাকে হারানো যে কারও জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তারপরও এসএসসি পরীক্ষার্থী সাদিয়া ও শারমিন মা হারানোর কষ্ট নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। আমরাও তাদের পরীক্ষার সময় যতটা সম্ভব পাশে থাকার চেষ্টা করেছি।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Ad

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //