প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ৭ নিরপরাধ ব্যক্তির নামে হত্যা মামলা

হত্যা মামলায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে কৌশলে বাদীর টিপসই নিয়ে থানায় এজাহার দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক দালাল চক্রের বিরুদ্ধে। এখন নিরপরাধ অভিযুক্তদের নাম বাদ নিতে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরছেন বাদী বৃদ্ধা নুরজাহান বেগম।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, পলিথিনের ছাউনি দেওয়া নড়বড়ে একটি ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করেন বৃদ্ধা নুরজাহান বেগম। নড়বড়ে সেই ঘরের উপর প্রতিবেশী মৃত মজিবর রহমানের ছেলে মজনু মিয়ার একটি বাঁশ হেলে পড়ে। বাঁশ মালিককে একাধিকবার কেটে অপসরণ করতে বললেও তিনি তা করেননি। পরে গত ২৩ এপ্রিল বৃদ্ধার ছেলে আব্দুর রাজ্জাক হেলে পড়া বাঁশটির অংশ কেটে ফেলে।

খবর পেয়ে ওই দিন বিকেলে বাঁশ মালিক মজনু মিয়া ও তার পুরো পরিবার অতর্কিত হামলা চালিয়ে বৃদ্ধা নুরজাহানের ছেলে রাজ্জাক, ইব্রাহীম, নাতনী ও ছেলের বউকে রক্তাক্ত জখম করেন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে কালীগঞ্জ হাসপাতাল ও পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারদিন পর মারা যান আব্দুর রাজ্জাক।

এদিকে সবাই যখন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত তখন রবি, মোখলেছুর ও শাহিন নামে এক পুলিশের সোর্সসহ তিন সদস্যের দালাল চক্র কৌশলে মাইক্রোবাস যোগে নিরক্ষর বৃদ্ধা নুরজাহানকে থানায় নিয়ে হত্যা মামলার এজাহারে টিপসই নেন। পরে ওই এজাহারে ২০ জনের নাম উল্লেখ করে কালীগঞ্জ থানায় জমা দেয় ওই দালাল চক্র।

মামলার দায়েরের কয়েকদিন পর বৃদ্ধা নুরজাহান জানতে পারেন, মামলায় ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। যার ৭ জনকে বৃদ্ধা চেনেন না এবং তাদের বাড়ি নুরজাহানের বাড়ি থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে ইশোরকোল নামক গ্রামে।

এখন নিরাপদ ৭ জনের নাম মামলা থেকে বাদ দিতে পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে ছুটছেন বাদী নুরজাহান। কিন্তু কোনো প্রতিকার মিলছে না।

এদিকে নিরাপদ ওই সাত ব্যক্তি হত্যা মামলার আসামি হয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এদের একজন মেছের আলীর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মৃত রাজ্জাকের মামাত ভাই রবিউল ইসলামদের সঙ্গে মসজিদের কমিটি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। সেই জেরে আমাদের গ্রামের সাতজনকে হত্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। হয়রানি করতেই তারা এমনটা করেছে।

মামলার বাদী বৃদ্ধা নুরজাহান বলেন, সবাই রংপুরে চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় বাড়িতে আমি একা ছিলাম। এসময় রবি, মোখলেছুর ও পুলিশের সোর্স শাহিন এসে আমাকে গাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে যান। কাগজে টিপসই নিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। পরে জানতে পারি ইশোরকোল গ্রামের নির্দোষ সাতজনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। তাই এই সাতজনকে মামলার হয়রানি থেকে বাঁচাতে আমি নিজেও এখন বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে হয়রান হচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, তারা তাদের নিজেদের প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে পুলিশের সোর্স শাহীন নামে এক দালালকে দিয়ে এ মামলাটি করিয়েছেন।

এদিকে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গত ৮ মে কালীগঞ্জ থানার ওসি এটিএম গোলাম রসুল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নির্দোষ আসামিদের নাম তদন্ত করে বাতিল করার আশ্বাস দেন। কিন্তু ওসি বদলি হয়ে যাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন বাদী নুরজাহান।

কালীগঞ্জ থানার ওসি তদন্ত হাবিবুর রহমান বলেন, প্রথম দিকে বিষয়টি জানা ছিল না। পরে জানতে পেয়ে ঘটনাস্থল তদন্ত করেছি। বাদী নিজেও এই সাতজনকে বাদ দিতে বলেছেন। কেউ হয়রানির স্বীকার না হয় সে দিকে খেয়াল রেখেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ, গত ২৩ এপ্রিল লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের হরবানিনগর গ্রামে বাঁশ কাটাকে কেন্দ্র করে বৃদ্ধা নুরজাহানের ছেলে আব্দুর রাজ্জাকের উপর হামলা হয়। পরে টানা চারদিন রংপুর মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তিনি মারা যান।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

Ad

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //