আলুর ঊর্ধ্বমুখী মূল্য নিয়ে হইচই পড়েছে গোটা দেশজুড়ে। ঠিক সেই মুহূর্তে আলু শূন্য হয়ে গেছে বরিশালের পাইকারি বাজার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আলু নেই নগরীর পাইকারি আড়তগুলোতে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রিতে বাধ্য করায় লোকসান এবং জরিমানার ভয়ে আলু গরবরাহ বন্ধ রেখেছেন তারা।
সেই খবরে আলুর দাম বেড়ে গেছে খুচরা বাজারে। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই পারা-মহল্লার মুদি দোকানে বাড়তি দামে আলু বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
যদিও পাইকারি বাজার আলু শূন্য হওয়ার খবর জানা নেই বলে জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম। আর আলু গরবরাহ না করার বিষয়টি দুদিন পর্যবেক্ষণের পর ব্যবস্থা নিবেন বলে জানিয়েছেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক অপূর্ব অধিকারী।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর হাটখোলা পেঁয়াজ ও আলু পট্টি ঘুরে দেখা যায়, ‘৪২টি আড়তে পেঁয়াজ-রশুন স্তূপ করা। শুধু আলুর দেখা মেলেনি আড়তগুলোতে। প্রতিদিন যেই আড়তে এক থেকে দেড় হাজার বস্তা আলু আসতো সেখানে বৃহস্পতিবার এক বস্তা আলুও গরবরাহ হয়নি। ফলে ৪২টি আড়তের একটিতেও আলুর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। যা ছিল তা বুধবার রাতের মধ্যেই শেষ হয়ে গেছে বলে জানান আড়ৎদাররা।
হাটখোলা পেঁয়াজ পট্টির ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী দুলাল মোল্লা জানান, বরিশালে আল মজুদের কোল্ড স্টোরেজ নেই। রাজশাহী এবং মুন্সিগঞ্জ থেকে আলু সরবরাহ করতে হয়। মুন্সিগঞ্জ থেকে পাইকারি ৩২ টাকা এবং রাজশাহী থেকে ৩৪-৩৬ টাকা দরে আলু কিনতে হয়। এরপর পরিবহন, শ্রমিক, দোকান ভাড়া এবং বিদ্যুৎবিলসহ আরও অন্তত ৩-৫ টাকা পর্যন্ত খরচ আছে। এরপর লাভের চিন্তা করতে হয়।
তিনি বলেন, সরকার ৩৫-৩৬ টাকা আলুর খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। অথচ কোল্ড স্টোরেই আলুর মূল্য সর্বনিম্ন ৩৪ টাকা থেকে শুরু হয়েছে। আমরা কোল্ড স্টোর থেকে বেশি দামে আলু কিনলেও আমাদের ভাউচার দেওয়া হয় সরকার নির্ধারিত মূল্যে। এরপর বরিশালে এনে বাড়তি দামে আলু বিক্রি করতে গেলে দফায় দফায় জরিমানা গুণতে হচ্ছে। গত বুধবার জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট এসে তালুকদার বাণিজ্যালয়কে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেছে। তার ওপর সরকার নির্ধারিত মূল্যের বাইরে এক টাকাও বাড়তি দামে আলু বিক্রি করা যাবে না বলে আমাদের কঠোরভাবে নির্দেশনা দিয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে আড়ৎদাররা বৃহস্পতিবার থেকে আলু গরবরাহ বন্ধ রেখেছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক অপূর্ব অধিকারী জানান, আলুর সরকারি মূল্য নির্ধারণে আমরা প্রতিদিন বাজার মনিটরিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। হাটখোলার আলু ব্যবসায়ীদের বলা হয়েছে তারা যে দামে আলু কিনবে সেই দামেই চালান বা ভাউচার রাখতে। তবে আলু গরবরাহ যেন বন্ধ না হয় সে বিষয়টিতে তাদের অনুরোধ করা হয়েছে।
কিন্তু জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট গিয়ে আড়তে জরিমানা করেছে। এমনকি সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে বেশি দামে আলু বিক্রি না করার জন্য বলেছেন। পরে জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্টের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় নিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ীরা মিটিং করে আলু গরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা দু-একদিন বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে দেখছি ব্যবসায়ীরা কী করে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অপরদিকে, বরিশাল জেলা প্রশাসক শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাজার মনিটরিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে আড়তে আলু না থাকার বিষয়টি আমার জানা নেই। ব্যবসায়ীরা আলু গরবরাহ বন্ধ করে থাকলে বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
বিষয় : বরিশাল আলু জেলা প্রশাসক
© 2023 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh