শেরপুরে আলুর দাম বেশি হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই

রফিক মজিদ, শেরপুর
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৪, ১৫:০০

আলু তোলার কাজে ব্যস্ত কৃষক। ছবি: শেরপুর প্রতিনিধি
শেরপুর জেলায় প্রতিবছর ব্যাপক আলু চাষ হয়। বিশেষ করে শেরপুরের চরাঞ্চলে আলুর বাম্পার ফলন হয়। গত বছর শেরপুরের আলু চাষিরা ১২ থেকে ১৫ টাকায় পাইকারি ধরে আলু বিক্রি করলেও এবার বিক্রি করছে ২৫ থেকে ২৮ টাকায়। তারপরও তাদের মুখে হাসি নেই। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে এবার বৈরী আবহাওয়ার কারণে আলু চাষে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এবং গত বছরের চেয়ে আলুর ফলন অনেক কম হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলায় আলু তোলার কাজ প্রায় শেষের দিকে। এখন কেউ কেউ আগামীতে অধিক লাভের আশায় কোল্ড স্টোরিজে আলু রাখছে। আবার কেউ কেউ টাকার প্রয়োজনে ক্ষেত থেকেই পাইকারদের কাছে আলু বিক্রি করে দিচ্ছে।
জানা গেছে, প্রতিবছর শেরপুর জেলার চরাঞ্চলে ডিসেম্বর মাস থেকে আলুর আবাদ শুরু করা হয়। ওই আলু কৃষকরা মার্চ মাসের মধ্যে উত্তোলন করে কিছু বাজারে বিক্রি করে এবং কোল্ড স্টোরিজে রেখে দেয়। জেলার মধ্যে শেরপুর সদর উপজেলায় চলাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি আলুর আবাদ করা হয়। এই আলুর আবাদ উপলক্ষে চরাঞ্চলের শত শত হতদরিদ্র নারী-পুরুষ আলু ক্ষেতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
আলু চাষিরা জানায়, এবার এক একর জমিতে আলু চাষ করে সার, বিষ, নিড়ানি ও শ্রমিক খরচ দিয়ে তাদের প্রায় ১ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয় এবং আলু ফলন হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ বস্তা। কিন্তু গত বছর খরচ হয়েছিল এখন প্রতি একরে ১ লাখ টাকা এবং উৎপাদন হয়েছিল ৮০ থেকে ৯০ বস্তা। গতবছর পাইকারি বাজার ছিল ১২ থেকে ১৫ টাকা আর এবার পাইকারি বাজার ২২ থেকে ২৬ টাকা। কিন্তু তারপরেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। কারণ হিসেবে তারা বলছে আলুর আবাদের শুরুতে প্রচণ্ড শীতের কারণে কিছু রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হয়। এতে ফলন অনেক কম হয়েছে। তবে আলুর দাম এবার বেশি থাকায় লসের মুখ দেখতে হয়নি।
এ বিষয়ে লছমনপুর ইউনিয়নের মোকছেদপুর গ্রামের আলু চাষি মাওলানা মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান জানায়, তিনি ৯ একর জমিতে এবার আলুর আবাদ করলেও ফলন গত বছরের চেয়ে অনেক কম হয়েছে। এছাড়া উৎপাদন খরচও অনেক বেশি হওয়া লাভ কমে গেছে।
কৃঞ্চপর গ্রামের নূরন্নবী হোসেন জানায়, এবার বিএডিসির প্রজেক্ট এর মাধ্যমে যারা আলু চাষ করেছে তারাও এবার দাম বেশি পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করলেও কোল্ড স্টোরিজে রাখা আলু বিক্রির সময় বাজারের দাম না বাড়লে ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে চলতি বছর আলুর ফলন কম হওয়ার বিষয়টি কৃষি বিভাগ স্বীকার করে উপ-পরিচালক ড. সুকল্প দাস জানান, এবার ফলন কম হলেও দাম বেশি থাকায় কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়বে না। এছাড়া শীত জনিত কারণে আলুর যে ব্লাস্ট রোগ হয়েছিল তখন কৃষি বিভাগ কৃষকদের সহায়তা করার কারণে ক্ষতির পরিমাণ অনেক কম হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকদের দাবি সরকার যদি আগামীতে কৃষকদের স্বার্থে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে সে ক্ষেত্রে তারা লোকসানে মুখে পড়বে। এতে করে পরবর্তীতে তারা আলু চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তাই জেলার হাজার হাজার আলু চাষিদের স্বার্থে সরকার কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে এটাই প্রত্যাশা তাদের।