
বক্তব্য রাখছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান। ছবি: সাভার প্রতিনিধি
আগে বাইরের দেশ থেকে আমদানি করা হলেও এখন সরকার মাংস রপ্তানির চিন্তা করছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান।
তিনি বলেন, দেশে আগে মাংসের চাহিদা মেটাতে বাইরের দেশ থেকে আমদানি করা হতো। বিশেষ করে কোরবানির পশু আমদানি করতে হতো। আজ সেই জায়গায় আমরা মাংস রপ্তানির চিন্তায় আছি।
আজ রবিবার (২৮ এপ্রিল) সাভারের সিআ্যান্ডবি এলাকায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিসিএস লাইভস্টক অ্যাকাডেমির হল রুমে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
৪১তম বিসিএস (লাইভস্টক ও মৎস্য) ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের যোগদান ও ওরিয়েন্টেশন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাণিসম্পদ আব্দুর রহমান বলেন, আমি যে দায়িত্বে, সেখানে মন্ত্রণালয়ের দুই অধিদপ্তর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ। এটি দেশের প্রতিটি মানুষের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। নতুন যেসব কর্মকর্তা দায়িত্ব গ্রহণ করছেন, তারা নিত্য দিন মানুষের এবং দেশের উন্নয়নের জন্য প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য সম্পদের কাজগুলোতে সরাসরি ভূমিকা রাখবেন। যে লক্ষ্য নিয়ে আজকের এ অনুষ্ঠান, সেই লক্ষ্যটি বাস্তবায়নে নিজের প্রচেষ্টার জায়গায় আন্তরিক থাকবেন। দায়িত্ববান কর্মকর্তা হিসেবে মানুষের পাশে থাকবেন। আপনারা মানবধর্মী ও মানুষের সেবার জায়গায় দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক জনসভায় বলেছিলেন, আমার মাটি আছে, সোনার বাংলা আছে, পাট আছে, আমার লাইভস্টক আছে, এগুলো যদি উন্নয়ন করতে পারি, তাহলে দিন এভাবে থাকবে না। সেই ১৯৭৩ সালে যে সাহসী উচ্চারণ তিনি করেছিলেন, সেই পথ ধরেই আজকে জাতি, এগিয়ে যাচ্ছে। আজকে আমরা আমিষ ও প্রোটিন খাদ্যে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। এসময় রপ্তানিতে মৎস্য খাতের সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশ করে মন্ত্রী আরো বলেন, আপনারা এ দেশের মানুষের সম্পদ। ফলে দেশ গঠনে এ দেশের মানুষকে তাদের নিত্য দিনের চাহিদা অনুযায়ী আমিষ জাতীয় খাদ্য ও প্রোটিন দেওয়া সেই দায়িত্বটি আপনাদের মানবিক দায়িত্বের অংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।
এর আগে সকালে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে ৪১তম বিসিএসের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ভেটেরিনারি সার্জন মো. গোলাম মুরশেদ মুরাদ ও নিলুফার ইয়াসমিন রজনি বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক। অনুষ্ঠানে দুই অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
দেশে প্রাণিসম্পদের বর্তমান চিত্র
অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বিভিন্ন কার্যক্রম, পরিকল্পনা তুলে ধরে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
এতে বলা হয়, দেশের আটটি বিভাগে ৬৪টি জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস, উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল ৪৯২টি, কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতাল একটি, জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র ৬৪টি ও প্রজনন উপকেন্দ্র ৪৪৬৪টিসহ বিভিন্ন গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, বর্তমানে দেশে ২৪৮.৫৬ লাখ গরু, ১৫.১৬ লাখ মহিষ, ২৬৯.৪৫ লাখ ছাগল, ৩৮.২৭ লাখ ভেড়া, ৬৬০.১৬ লাখ হাঁস, ৩১৯৬.৮৯ লাখ মুরগী রয়েছে।
দুই খাতের বর্তমানে জাতীয় অর্থনীতিতে জিডিপিতে অবদান ১.৮৫% যার আকার ৭৩,৫৭১ কোটি টাকা সামগ্রিক কৃষিতে প্রাণিসম্পদের অবদান ১৬.৫২% এ খাতে প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান ২০% পরোক্ষ কর্মসন্ধান ৫০% রয়েছে বলেও জানানো হয়।
এতে বলা হয়, গত ১৫ বছরে দুধ উৎপাদন বেড়েছে ৬.১৪ গুণ, মাংস ৮.০৬ গুণ ও ডিম ৪.৯৮গুণ।
এতে আরো বলা হয়, বর্তমানে ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ আর ছাগলের মাংস উৎপাদনে পঞ্চম।
এছাড়া ভবিষ্যতে ডেইরি খাতের ভ্যালুআ্যাডেড পণ্য ফার্টিফাইড ডাইফর্সিফাইড, মিল্ক চিলিং সেন্টার মিল্ক প্রসেসিং প্লান্ট মডার্ন হাউজিং সিস্টেম আধুনিক ডেইরি খামার ড্রেস্ট ব্রয়লার মার্কেট দেশে ও বিদেশে রপ্তানি বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে।