Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

পাহাড়ে কমে যাচ্ছে ঔষধি উদ্ভিদ

Icon

প্রান্ত রনি, রাঙামাটি

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ১৮:৪৬

পাহাড়ে কমে যাচ্ছে ঔষধি উদ্ভিদ

রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার ‘পাবলাখালী গেইম সেঞ্চুয়ারি রেঞ্জ’। ছবি : লেখক

বাংলাদেশে যতটুকু প্রাকৃতিক বন, তার বিশাল অংশ রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে। তবে এক সময়কার ঘন সবুজে ঘেরা পাহাড়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চলগুলোতে নির্বিচারে বৃক্ষ নিধনের ফলে এখন বনজ বৃক্ষ কমে এসেছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে পূর্বের দিনে বনজ বাগান গড়ে উঠলেও এখন পাহাড়ের মানুষের আগ্রহ ফলদ বাগানে। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার কারণে বনজ ছেড়ে ফলদ বাগানে ঝুঁকছেন পাহাড়ের মানুষ। 

প্রকৃতি গবেষকরা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে লতা, গুল্ম, বিরুৎ প্রজাতিসহ বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ এখনো টিকে আছে। তবে ক্রমশই কমছে গাছের সংখ্যা। ঘন বনকে বাগান হিসেবে গড়ে তোলার ফলে বনজ গাছের মধ্যে ঔষধি বৃক্ষও কমে যাচ্ছে। বাড়ির পাশে পাহাড়িরা আদিকাল থেকে বাগান করলেও এখন সেখানে বিভিন্ন মৌসুমি ফলদ বৃক্ষের আবাদ বেড়েছে। এতে করে সাময়িকভাবে আর্থিক সচ্ছলতা দেখা দিলেও দীর্ঘস্থায়ীভাবে ক্ষতি হচ্ছে পাহাড়ে। বনজ গাছ কমে যাওয়ার ফলে পাহাড়ের মাটির পানিধারণ সক্ষমতা কমে গেছে এবং সবুজ কমে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানায়, আদিকাল থেকে পাহাড়ের চিকিৎসা পদ্ধতির অন্যতম উপায় ছিল কবিরাজি। পাহাড়ের প্রান্তিক মানুষরা অসুস্থ হলে স্থানীয় বৈদ্য-কবিরাজের কাছ থেকে চিকিৎসা নিতেন। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসার প্রচার-প্রসার বাড়ায় কবিরাজি চিকিৎসা অনেকটা কমে এসেছে। যে কারণে স্থানীয়দের ঔষধি ও ভেষজ উদ্ভিদ সংরক্ষণের প্রতি আগ্রহ কম। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পার্বত্য চট্টগ্রামে কয়েকশ প্রজাতির ঔষধি বৃক্ষ ও লতাগুল্মের উপস্থিতি ছিল। যেগুলোর অনেকগুলো স্থানীয়রা ভালোভাবে চিনতেনও না। প্রায় বাড়ির আঙিনায়ই দেখা যেত হরীতকী, বহেড়া, আমলকী, অর্জুন, ঔষধিসহ বিভিন্ন গাছ। বর্তমানে এর বিপরীতে বাড়ির পাশে আম, লিচু, ড্রাগনসহ বিভিন্ন ফলের বাগান বাড়ছে। পার্বত্য এলাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে মিশ্র ফল চাষ প্রকল্প ও কৃষি বিভাগের মৌসুমি ফল বাগান তৈরিতে উদ্বুদ্ধকরণের ফলে পাহাড়ে আশঙ্কাজনক হারে ফলদ বাগান গড়ে উঠেছে।

পাহাড়ে এখনো যেসব ঔষধি গাছ পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে তুলসী, ঢোল কলমি, জারুল, চন্দ্রমল্লিকা, দেশি গাব, গন্ধভাদাল লতা, এলাচ, থানকুনি, ইসপগুল, ঘৃতকুমারী, অর্জুন, নিসিন্দা, নিম, বাসক, পুদিনা, হরীতকী, আমলকী ও বহেড়া অন্যতম। এর বেশিরভাগ পাওয়া যাচ্ছে পাবলাখালী গেইম সেঞ্চুয়ারি, কাচালং সংরক্ষিত বন, রাইংক্ষ্যং সংরক্ষিত বন, সাঙ্গু সংরক্ষিত বনসহ স্থানীয়দের উদ্যোগে ভিলেজ কমন ফরেস্টে (ভিসিএফ)।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের কনসালট্যান্ট (গভর্ন্যান্স) ও রাঙামাটির প্রবীণ বাসিন্দা অরুনেন্দু ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ের কবিরাজি চিকিৎসার ব্যবহার কমায় ঔষধি বৃক্ষ সংরক্ষণও কমে গেছে এটা সত্য। কিন্তু ঔষধি বৃক্ষ ও বৃক্ষের লতাপাতা, নির্যাস থেকে ওষুধ তৈরির উপাদান যদি তৈরি করা যায়; সে ক্ষেত্রে পাহাড়ের ঔষধি বৃক্ষ বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। ঔষধি বৃক্ষ উপযোগিতা হারায়নি। এ ধরনের বৃক্ষ সাধারণত স্যাঁতসেঁতে ও শীতল পরিবেশে ঔষধিগুণ নিয়ে বেড়ে ওঠে। দেখা গেছে উপযোগী পরিবেশ না পেলে এ ধরনের বৃক্ষ মাটি ও পরিবেশের সঙ্গে টিকে থাকতে পারে না। তাই এটির যথাযথ ব্যবহারে গবেষণারও প্রয়োজন রয়েছে।

প্রকৃতি বিষয়ক লেখক সৌরভ মাহমুদ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে একচ্ছত্র ফল বাগান গড়ে ওঠার কারণে প্রাকৃতিক বন কমে এসেছে। এ ছাড়া কাঠ উৎপাদন ও বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে সেগুনসহ পরিবেশ অনুপযোগী গাছ লাগানোর ফলে পাহাড়ের প্রাকৃতিক বনগুলো বাগান হয়ে উঠেছে। রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. নিখিল চাকমা বলেন, পাহাড়ে দিন দিন ঔষধি বৃক্ষ কমছে। প্রাকৃতিক বন কমে গেলে এ ধরনের বৃক্ষ কমে যাওয়াটা স্বাভাবিক। পাহাড়ের বনগুলোকে সমৃদ্ধ রাখা জরুরি। সেখানে উল্টো মানুষ বন ছেড়ে মৌসুমি ফল বাগানের দিকে ঝুঁকছেন। এটি দীর্ঘস্থায়ীভাবে ভালো লক্ষণ নয়। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫