সিলেট নগরী আবারো পানির নিচে

সিলেট নগরী আবারো পানির নিচে, পদে পদে নগরবাসীর ভোগান্তি দেখা দিয়েছে। টানা তিনদিনের বৃষ্টিতে তৃতীয় দফায় বন্যার কবলে পড়তে হয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সিলেটে রবিবার (৩০ জুন) সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় ১৫৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আর আগের ১২ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ৩৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার। একই সাথে ভারতের  চেরাপুঞ্জিতে ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে রেকর্ড ৩১৩ মিলিমিটার। আর ২৮ জুন থেকে ১ জুলাই সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ৩দিনে চেরাপুঞ্জিতে ৬৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বুধবার (৩ জুলাই) পর্যন্ত আরো ৯৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট সূত্রে জানা গেছে, এক মাস ধরে শুধু ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার উপরে ছিল। কিন্তু সোমবার থেকে সিলেট ও চেরাপুঞ্জিতে টানা বৃষ্টির ফলে সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীর একাধিক পয়েন্ট বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এছাড়া সিলেটের লুভা, সারি, ডাউকি নদী এবং ধলাই নদের পানি বাড়ছে।

সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় কুশিয়ারা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে ১৩ দশমিক ৭৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫। কুশিয়ারার আমলশীদ পয়েন্টে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় ১৫ দশমিক ৬৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৫ দশমিক ৪০। কুশিয়ারার ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় ১০ দশমিক ৩৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৯ দশমিক ৪৫। সারি নদীর পানি সোমবার থেকে সন্ধ্যা ৬টায় ১২ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৩৫।

এছাড়া সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্টেও বাড়ছে পানি। এই পয়েন্ট বিপৎসীমার নিচে থাকলেও সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় ১০ দশমিক ৩৮ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮০। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, সিলেটে ভারী বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি চেরাপুঞ্জিতে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। এটি অব্যাহত থাকলে সিলেট জুড়ে তৃতীয় দফা বন্যার মুখোমুখি হতে হবে আমাদের।

ফের নগরে জলাবদ্ধতা, নগরবাসীর ভোগান্তি

ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিপাত হওয়ায় সোমবার সকাল হতে নগরের কোনো এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়নি। কিন্তু সময় যত গড়ায় বৃষ্টিও তত বাড়ে। শেষ বিকেলে শুরু হয় অঝোর ধারায় বৃষ্টি। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত এতেই নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অনেকে অলি-গলি ডুবে যায়। বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে উঠে যায় পানি। এক মাসের মধ্যে ফের ভোগান্তির মুখোমুখি হন নগরের মানুষ। গোধূলি বেলায় মানুষজন মালামাল উপরে উঠাতে ছুটোছুটি করেন। রাত যত বাড়তে থাকে মানুষের দুশ্চিন্তাও তত বাড়তে থাকে। কখন যে ঘরে উঠে যায় পানি। ডুবে যাওয়ার শঙ্কায় নির্ঘুম রাত পার করেন বাসিন্দারা।

এদিকে সুরমা নদীর পানি বাড়ায় গভীর শঙ্কায় আছেন নগরবাসী। নগরীর অনেক বাসিন্দা বলেন, মে মাসের ২০ তারিখে ঘরে পানি উঠে যাওয়ায় ঘর ছেড়ে স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। আবার এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে শুরু করেছে। এবারো হয়তো নতুন দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে। এভাবে আর কতদিন-এমন প্রশ্ন অগণিত বাসিন্দার।

নগরীর উপশহর, ভাতালিয়া, সুবহানীঘাট, শেখঘাট, কাজীরবাজার, তেররতন, জামতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সকাল ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৃষ্টি হচ্ছিল এবং আরো এলাকায় জলাবদ্ধতার আশঙ্কার কথা জানান সিটি সংশ্লিষ্টরা। ইতোমধ্যে নগরীর উপশহরের বেশ কয়েকটি গলি পানি নিচে চলে গেছে, অনেকে বাসা দ্বিতীয় তলায় অবস্থান নিচ্ছেন। এ ভাবে নিচু এলাকায় সুরমা নদীর পানি ঢুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //