Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

পাঁপড় গ্রাম

Icon

আব্দুল্লাহ সুমন, যশোর

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ২১:৩৬

পাঁপড় গ্রাম

পাঁপড়। ছবি: লেখক

খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি গ্রামটি ‘পাঁপড় গ্রাম’ নামেই পরিচিত। কারণ গ্রামের প্রায় ৫শ পরিবার পাঁপড় তৈরি, শুকানো, পরিবহন এবং মহাজনের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে।

ছোট কিংবা বড়, সকলের কাছে মুখরোচক খাবার পাঁপড়। বিশেষ করে মেলার মাঠ, গ্রামের বাজারের সামনে, পূজা-পার্বণে, অস্থায়ী বাজার কিংবা ধর্মীয় উৎসব বা অনুষ্ঠানে পাঁপড় বিক্রির ধুম পড়ে। দামে সস্তা এ খাবারটি মুখরোচক হওয়ায় এর জনপ্রিয়তার কমতি নেই। সারা বছর জুড়েই পাঁপড় বিক্রি হতে দেখা যায় শহর, নগর, গ্রাম, গঞ্জে।

সরেজমিনে খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স মাঠে বেশ হাঁকডাক নজর কাড়ে। প্রায় ১ লাখ বর্গফুটের পুরো মাঠ জুড়ে পাঁপড় শুকানো হচ্ছে রোদে। সব বয়সের নারী-পুরুষ এ কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর যেগুলো শুকিয়ে গেছে, সেগুলো উঠানো, ঠোঙায় ভরা এবং মাঠ থেকে নিয়ে মহাজনের ঘরে দিতে ব্যস্ত সবাই। কথা বলার ফুরসত নেই কারও। এখান থেকে রোদে শুকানোর পর পাঁপড় চলে যায় মহাজনের ঘরে। ভোর থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত এ কাজে যারা যুক্ত থাকে তারা প্রত্যেকে পায় ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা। তবে রোদে শুকানোর আগে আরও একটি ধাপ কাজ হয়ে থাকে পাঁপড় তৈরির ক্ষেত্রে। আজ যে পাঁপড় রোদে শুকানো হচ্ছে তা আগের দিন এ এলাকার ৪০-৫০টি পরিবারের নারী এবং কিশোরী বেলে থাকে। এ কাজে তারা পিঁড়ি আর বেলন ব্যবহার করে থাকে। বিকাল থেকে মহাজনের লোকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই কাঁচা পাঁপড় সংগ্রহ করে ভোর থেকে মাঠে নিয়ে যায় রোদে শুকানোর জন্য। মহাজনের মালামাল নিয়ে ১ হাজারটি কাঁচা পাঁপড় বেলে দিলে তারা পায় ৬০-৭০ টাকা। পাঁপড় তৈরির প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় খেসারির ডাল, মাষকলাই, আতপ চালের গুঁড়া, লবণ এবং পানি। এক কেজি খেসারির ডালের গুঁড়ার সঙ্গে ৫০০ গ্রাম মাষকলাই গুঁড়া, আতপ চালের গুঁড়া ৩৫০ গ্রাম এবং পরিমাণমতো পানি এবং লবণ। তবে কেউ অগ্রিম অর্ডার দিলে এই উপকরণের সঙ্গে কালো জিরার গুঁড়াও যুক্ত করে তৈরি করে পাঁপড়।

স্থানীয় নাউদাড়ি গ্রামের সাহিদা বেগম। তিনি এই মাঠে মহাজনের কাছ থেকে মাল নেওয়ার চুক্তি করতে এসেছেন। এখন মাল নিয়ে সন্ধ্যের মধ্যে পাঁপড় বেলে আবার মহাজনকে দেবেন তিনি। এই কাজ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে করছেন তিনি।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ এলাকায় পাঁপড় তৈরি এবং বিক্রির কাজ শুরু স্বাধীনতা যুদ্ধের কিছু আগে বা পর পরই। আর এ কাজ এই এলাকায় শুরু করেন সতীশ চন্দ্র দত্ত। তার হাত ধরে এ পেশায় আসেন তার ছেলে সুশীল দত্ত। আর বর্তমানে সুশীল দত্তের ছেলে আনন্দ দত্ত এ পেশার সঙ্গে জড়িত।

কথা হয় আনন্দ দত্তের সঙ্গে। তিনি জানান, আমি সরাসরি পাঁপড় তৈরি করি না। গ্রামের মহিলাদের দিয়ে কাঁচা পাঁপড় বানিয়ে আনি। তারপর লোক দিয়ে মাঠে শুকাই। এরপর ঠোঙায় ভরে বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি বিক্রি করি। খুলনা, পাইকগাছা, ঝিনাইদহ, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় আমাদের মাল যায়। একটি ঠোঙায় ১০ কেজি করে থাকে। কেজিতে ৯০ থেকে ১৫০ পিস পাঁপড় হয়ে থাকে। পাইকারি ১২০-১৪০ টাকা কেজি দরে আমরা পাঁপড় বিক্রি করি। বর্ষাকালে আমাদের মাল উৎপাদন কম হয়। আমরা মেঘ দেখলে বুঝি, কোন মেঘে বৃষ্টি হবে। আর যদি কাঁচা পাঁপড় একবার বৃষ্টিতে ভেজে, তাহলে তা আর মানুষের খাবার উপযোগী থাকে না। তখন কম দামে মাছের ঘেরে বিক্রি করতে হয়। বর্তমানে ঋণের জালে পড়ে অনেক ব্যবসায়ী হারিয়ে গেছে। আমি মনে করি এটি একটি শিল্প। এই শিল্পকে বাঁচাতে হলে কম সুদে বা বিনা সুদে এই পেশার লোকদেরকে ঋণ দিতে হবে। তা না হলে, এটি আস্তে আস্তে হারিয়ে যাবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫