সুনামগঞ্জের সীমান্তে হানা দিচ্ছে ভারতীয় বন্য হাতির দল

সম্প্রতি ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে বন্য হাতির দল সুনামগঞ্জের লোকালয়ে এসে হানা দিচ্ছে। এতে স্থানীয় কৃষকদের কষ্টে ফলানো ফসল, ঘরবাড়ি ও জান-মালের ক্ষতি হচ্ছে। ভারত থেকে রাতে এসে ভোরের আলো ফোটার আগেই চলে যায় এই হাতির দল। কখনো দিনের বেলায়ও আসে। বন বিভাগের লোকজনকে জানানোর পরও কোনো সমাধান হয় না জানিয়েছেন সীমান্ত এলাকার গ্রামবাসী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় এক সময় ঘন বনজঙ্গল ছিল। যেখানে শুধু হাতিই নয়, নানান ধরনের বন্যপ্রাণী নিরাপদে আশ্রয় নিলেও সেই আবাসস্থল দিন দিন উজাড় হচ্ছে। নতুন করে দখল ও স্থাপনার দেখা মিলছে, হাটবাজারও হচ্ছে জঙ্গল কেটে। বাস্তুসংস্থান হারানোয় তাই বন্য হাতির উপদ্রব বেড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহমান জানান, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি ও নভেম্বরে মেঘালয় রাজ্যের গুমাঘাট থেকে সীমান্ত নদী যাদুকাটা হয়ে ৭টি বন্য হাতি বাংলাদেশ সীমান্তে নেমে এসেছিল। হাতিগুলো উত্তর বড়দল ইউনিয়নের বড়গোপ, মাহরাম, আনন্দপুর, কড়ইগড়া গ্রামের 

কৃষকদের বোরো জমিসহ জঙ্গলের গাছগাছালি নষ্ট করেছিল। তখন হাতির আক্রমণ থেকে বাঁচতে গ্রামবাসী ঘরের সামনে আগুন জ্বালিয়ে রাতে অবস্থান করতেন। অনেকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিছুদিন আগে তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের লাউড়েরগড় ও  মুকশেদপুরের শাহিদাবাদ এলাকায় ১০-১২টি বন্য হাতি এসে আখ ক্ষেত, কাঁঠাল বাগান, বীজতলাসহ ফসলের ক্ষেত নষ্ট করেছে।

কৃষক নজরুল ইসলাম জানান তার ৫ একর জমি নষ্ট করেছে বন্য হাতির দল। এই ফসলে তার সংসার চালে। কিন্তু কোনোভাবেই কষ্টে ফলানো ফসল রক্ষা করতে পারছেন না।

সীমান্ত এলাকায় সচেতন মহল বলছেন, ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশে হাতিদের বিচরণস্থল বনজঙ্গল বিলীন করে দেওয়ায় হাতির উপদ্রব বেড়েছে। সুনামগঞ্জ বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে@জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর ছাতক, দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ সদর ও ধর্মপাশায় বন বিভাগের প্রায় ১৮ হাজার একর জঙ্গল রয়েছে। সুনামগঞ্জ বন বিভাগ তাদের মালিকানাধীন জায়গা ধরে রাখতে পারছে না, আবার নতুন বনায়নও করছে না। তাদের উদাসীনতায় বনজঙ্গল উজাড় হচ্ছে দিন দিন। এর বাইরে কিছু প্রাকৃতিক জঙ্গল আছে বিভিন্ন এলাকায়।  তাই বন্যপ্রাণী বাস্তুচ্যুত হওয়ায় এখন মাঝে মধ্যে লোকালয়ে চলে আসছে। বাংলাদেশ সীমান্তের পাশাপাশি ভারত সীমান্তেও পাহাড় ও বন জঙ্গল কেটে রাস্তাঘাট ও স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। 

সীমান্ত এলাকায় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাদুকাটা নদীর পশ্চিমে বড়গোপ টিলা (বারেকটিলা) একসময় বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য ছিল। সেটিও দখল করে তৈরি করা হয়েছে ঘর-বাড়ি, কাটা হচ্ছে বাগান। সরকারি জমিতে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন দখলকারীরা। সরকার বনায়নের জন্য বন বিভাগকে নির্দেশনা দিলেও বন সৃজন করা তো দূরের কথা, স্থানীয় মানুষজন বন জঙ্গল কেটে নিলেও বন বিভাগ ব্যবস্থা নিচ্ছে না। 

লাউড়েরগড় সীমান্ত এলাকায় বাসিন্দা জামিল মিয়া জানান, শুধু বাংলাদেশ সীমান্তেই নয়, ভারত সীমান্তেও উজাড় হচ্ছে 

বন-জঙ্গল। তাই সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করে আসা বন্য হাতির আগমন বন্ধ করার বিষয়ে দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা পারভিন জানান, এই বিষয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। 

সুনামগঞ্জ রেঞ্জ কর্মকর্তা সাদ উদ্দিন বলেন, তাহিরপুরের লাউড়েরগড়, দশঘর এলাকায় যে স্থানে পাহাড়ি হাতির উপদ্রব সে স্থান বন বিভাগেরই জায়গা। আমাদের লোকজন হাতি আসার খবর পেয়ে সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের হাতির দলকে আক্রমণ করতে নিষেধ করে দিয়েছে। তাদের মধ্যে সতর্কতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ ছাড়াও বন বিভাগ বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল সুরক্ষার পাশাপাশি বনায়নের কাজ করছে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //