সরকারি সাইক্লোন সেন্টার এখনো আ.লীগ নেতার টর্চার সেল

মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ বাচ্চু ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন ধরে একটি সরকারি সাইক্লোন সেন্টার দখলে রেখেছেন। ধলঘাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ মহুরিঘোনা এলাকায় অবস্থিত এই সাইক্লোন সেন্টার দখলে নিয়ে বাচ্চু সাজিয়েছেন তার সংসার। সেখানে গড়ে তুলেছে টর্চার সেল, মাদক, জুয়া ও অস্ত্রের সমাহার।

অভিযোগ রয়েছে- খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও দখলবাজি থেকে শুরু করে একাধিক মামলার আসামি আহসান উল্লাহ বাচ্চু এই সাইক্লোন সেন্টারে তৈরি করেছেন টর্চার সেল। বাহির থেকে নিরীহ লোকজন ধরে নিয়ে সেখানে অত্যাচার, নির্যাতন করে টাকা ও সম্পত্তি দখলে নিতেন বাচ্চু। তার রয়েছে একটি বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনীও। এরা দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও নানা অপকর্ম করে এই সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নিয়ে থাকেন৷ সেখানে রাতভর চলে জুয়া ও মাদকের আসর। এছাড়া অবৈধ অস্ত্র মজুদের নিরাপদ স্থান হিসেবে ব্যবহার করেন এই সাইক্লোন সেন্টার৷ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, সরকারি এই সাইক্লোন সেন্টারটি দীর্ঘদিন ধরে দখলে রেখেছে বাচ্চু বাহিনী। রাতের বেলা এখানে চলে অবৈধ সকল কর্মকাণ্ড৷ সন্ধ্যা নামলে এই আশ্রয়ণ কেন্দ্র পরিণত হয় সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে। মাদক, জুয়া ও অস্ত্রের প্রশিক্ষণও চলে সেখানে। এই সাইক্লোন সেন্টারের পাশ দিয়ে লোকজন চলাচল করতেও ভয় পান৷ আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সাইক্লোন সেন্টারের দখলমুক্ত করে সাধারণ মানুষের জন্যে উন্মুক্ত করা হোক।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় আহসান উল্লাহ বাচ্চু ও তার বাহিনীর সন্ত্রাসীরা। কিন্তু ১৬ আগস্ট থেকে আবারো এলাকায় প্রবেশ করে হানাহানি শুরু করেছে তারা৷ এই বাচ্চুর সেকেন্ড ইন কমান্ড কলিম উল্লাহ ও রাইফেল নাছির। তাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে হত্যা, ঘের দখল, ডাকাতি ও চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে একাধিক মামলা। কয়েকটি মামলায় দীর্ঘদিন ধরে পলাতক রয়েছেন এরা দুজন। ধলঘাটার নিরীহ লোকজনকে হত্যা করে কালো অধ্যায় রচিত করেছে এই বাচ্চু বাহিনী। নিহতের মধ্যে রয়েছে- নূর আহমেদের ছেলে আবুল কাশেম, আবুল কাশেমের ছেলে আব্দুল আজিজ, আমির সোলতানের ছেলে গিয়াসউদ্দিন ও বাদশা মিয়ার ছেলে রহমত উল্লাহ হত্যা।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি ফোরামের সভাপতি ফজলুর কাদের চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকা ধলঘাটা ইউনিয়ন। প্রতি বছর এই দ্বীপের বাসিন্দারা নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়ে থাকেন। দ্বীপের অতি গুরুত্বপূর্ণ এই সাইক্লোন সেন্টারটি সরকার নির্মাণ করেছেন ঘূর্ণিঝড়ের সময় মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্যে। কিন্তু একজন ইউপি চেয়ারম্যান গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাটি নিজে দখলে নিয়ে সংসার সাজিয়েছেন, করেছেন অপরাধের আস্তানা।  বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও লজ্জার।

ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুল হাসান জানান, একাধিক মামলার আসামি এই বাচ্চু ও তার ভাইয়েরা মিলে দীর্ঘদিন ধরে আশ্রয়ণ কেন্দ্রটি দখলে রেখেছে।সেখানে গড়েছে টর্চার সেল, জুয়ার আসর ও অস্ত্রের সমাহার।প্রায় সময় লোকজন ধরে নিয়ে গিয়ে সেখানে নির্যাতন করেন বাচ্চু বাহিনী। এই আশ্রয়ণ কেন্দ্রটি তাদের বাপ দাদার সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে। প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড়ের সময় লোকজন সেখানে আশ্রয় নিতে পারে না। আমি চেয়ারম্যান থাকাকালে এই আশ্রয়ণ কেন্দ্র ছাড়ার জন্যে বহুবার ইউএনও ও ডিসি বরাবর অভিযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু এতে কোন কাজ হয়নি। এই বাচ্চু বাহিনীর হাতে এলাকার সাধারণ মানুষ জিম্মি।

এ বিষয়ে জানতে মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ধলঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান আহসান উল্লাহ বাচ্চুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন ধরনের মন্তব্য না করে মোবাইল সংযোগ কেটে দেন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ জানিয়েছেন, এই ধরনের অভিযোগ আগেও একবার এসেছিল। সরকারি একটি সাইক্লোন সেন্টার দখল করে একজন ইউপি চেয়ারম্যান কোনভাবেই থাকতে পারে না। খুব দ্রুতই উক্ত সাইক্লোন সেন্টার দখলমুক্ত করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh