পাহাড়ে পার্বত্য উপদেষ্টাকে নিয়ে অসন্তোষ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমাকে নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সম অধিকার আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন তার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। 

বিক্ষোভ সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মজিদ বলেন, ‘সুপ্রদীপ চাকমা একজন বিতর্কিত ব্যক্তি। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের একজন সুবিধাপুষ্ট আমলা। তিনি উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। অথচ তাকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরই উপদেষ্টা বানানো হল। তিনি বিতর্কিত বক্তব্য হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি ও বৈষম্য সৃষ্টির চেষ্টার করছেন। তার বিরুদ্ধে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীও আন্দোলন করছে।  তার বিরুদ্ধে তিন পার্বত্য জেলায় বিক্ষোভ চলছে।’

বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না সুপ্রদীপের। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম সুবিধাভোগী ও সহযোগী হিসেবে পরিচিত সুপ্রদীপ চাকমাকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ নিয়ে শুরুতে বিতর্ক উঠেছিল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা তালিকায় নাম আসার পর থেকে সুপ্রদীপ চাকমার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠে।  ১১ আগস্ট পাহাড়িদের একটি অংশের বিরোধিতার মধ্যে উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয় সুপ্রদীপ চাকমা। সেসময়  চাকমা সার্কেল চিফ (রাজা) ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের সহধর্মিণী রানি য়েন য়েন রায়ের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে।   তারা সুপ্রদীপকে ‘আওয়ামী লীগের দালাল’ আখ্যায়িত করে তাকে সরানোর দাবি  রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে প্ল্যাকার্ড,ফেস্টুন নিয়ে মানববন্ধন করে।

রাঙ্গামাটির চাকমা সার্কেলের উপদেষ্টা রানি য়েন য়েন গণমাধ্যমেকে বলেন, ‘যেই ব্যক্তিকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতিনিধি করা হয়েছে, তিনি সব সময় ‘জি স্যার’ করার লোক। তিনি কখনোই আমাদের হয়ে কিছুই করতে পারবেন না। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা করতে পারবেন না। তাই আমরা চাই আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেই আমাদের প্রতিনিধি ঠিক করা হোক।’

গত শুক্রবার (২৩ আগস্ট) খাগড়াছড়িতে বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে আসেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা। ঐদিন দুপরে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে সুশীল সমাবেশে সাথে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। কিন্তু বাস্তবে ঐ মতবিনিময় সভাটি ছিল আওয়ামী লীগ ঘরানার নেতাদের নিয়ে। সভায় তিনি বক্তব্যে এক পর্যায়ে বাঙালিদের অ-পাহাড়ি হিসেবে উল্লেখ করেন।

অপর দিকে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানেও  সুশীল সমাজের সঙ্গে মতবিনিময়ের নামে ‘আওয়ামী লীগ নেতাদের’ সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

শনিবার (২৪ আগস্ট) রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় আন্দোলনে আহত হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কাউকে ডাকা হয়নি। ডাকা হয়নি বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টির কোনো প্রতিনিধিকেও। জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার বলেন, ‘তিনি একটা পক্ষের এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। তিনি পাহাড়ি, অ-পাহাড়ি বলে পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টার করছেন। আমরা এটার জন্য নিন্দা জানাই। ছাত্র-জনতার রক্তের ফসল হিসেবে সুপ্রদীপ চাকমা উপদেষ্টা হয়েছেন। অথচ তিনি খাগড়াছড়ি সফরে আসবেন ও মতবিনিময় সভা করবেন আমাদের জানানো হয়নি।’ 

শেখ হাসিনার শাসন আমলে ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই রাষ্ট্রপতির আদশক্রমে সুপ্রদীপ চাকমাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে তিনি মেক্সিকো ও ভিয়েতনামে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এই বিষয়ে জানতে সুপ্রদীপ চাকমাকে ফোন ও এসএমএস করলেও কোন সাড়ার পাওয়া যায়নি। 

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //