পুরো সিস্টেম দুর্নীতিগ্রস্ত, বের হয়ে আসা কঠিন: উপদেষ্টা সাখাওয়াত

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯:৩২

বরিশালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। ছবি: প্রতিনিধি
গত ১৫ বছর যে সরকার ছিল তারা পুরো সিস্টেম করাপ্টটেড (দুর্নীতিগ্রস্ত) করে ফেলছে। এখান থেকে বের হয়ে আসা খুবই ডিফিকাল্ট (কঠিন) বলে মন্তব্য করে নৌপরিবহন এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, সরকারের এমন কোনো ডিপার্টমেন্ট নেই, এমন কোনো সিস্টেম নেই যে করাপ্টটেড হয়নি।
আজ রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বরিশাল মেরিন একাডেমি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
‘মব জাস্টিসের’ পক্ষ নয় জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ওপর গুরুত্ব দেন এম সাখাওয়াত।
বাংলাদেশের মেরিনারদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে দুবাই ও সিঙ্গাপুর অ্যাম্বাসিতে নতুন দুটি পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলেও ঘোষণা দেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ‘আমি যে দুইটি মন্ত্রণালয়ে আছি, সেখানে সাগরচুরি বলা যায় না, হয়েছে প্রশান্ত মহাসাগর চুরি। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় তো শেষ করে ফেলা হয়েছে, অলমোস্ট ফিনিশড (প্রায় নিঃশেষ)। আমরা চেষ্টা করছি এগুলো ঠিক করার। তবে এটা দুই অথবা তিন বছরে ঠিক করা সম্ভব না। সরকারি পাটকল একটিও চলছে না, আমরা চেষ্টা করছি সেগুলো লিজ দিয়ে চালু করার। সরকারের পক্ষে ব্যবসা করা সম্ভব না।’
সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে কিছু কিছু প্রজেক্ট আছে, অনেকে জানেই না কেন হয়েছে এই প্রজেক্ট। এ সব অনিয়ম দেশবাসীর সহায়তা ছাড়া ঠিক করা সম্ভব না। চুরি বন্ধ করতে হবে। একটা লোককে ধরলে এখন এক হাজার কোটি টাকা, একটা লোকের ৩৬০টি বাড়ির খবর পাওয়া যায়। আমরাও তো অনেক আগে জন্মগ্রহণ করেছি, আমরা তো কখনো দেখেনি দেশে এত বড় বড় জমিদার। দু-দিন আগে কী ছিল, আর এখন হয়ে গেছে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। এটিই জাতির জন্য বড় সমস্যা। করাপশন রিডিউস (দুর্নীতি নির্মূল) করতে হবে, এটিই আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
এ সময় পাটের আবাদ বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পাটপণ্যের চাহিদা বাড়ানোর জন্য কাজ করবেন বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পাহাড়ে কেউ যেন ইন্ধন যোগাতে না পারে সেজন্য পাহাড়িদের দুঃখ-বেদনা বুঝে, শান্তি বজায়ে সৌহার্দ্য স্থাপনে সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। পাহাড় শান্ত না থাকলে কেউই শান্তিতে থাকতে পারবে না। পার্বত্য অঞ্চলে যা-ই হচ্ছে না কেন সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, এটি আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনকে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আইনের মধ্যে সবাইকে চলতে হবে। শক্ত অ্যাকশন নেওয়া উচিত আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে। পাহাড়ে সব সময় সমস্যা ছিল। সেখানে বাঙালি বাদে ১৩-১৪টি কমিউনিটি আছে, কেউ ছোট বা কেউ বড়। তাদের মধ্যে সৌহার্দ্যের ব্যাপার আছে। সৌহার্দ্য বজায় রাখতে হলে অপাহাড়ি যারা আছে তাদের বুঝতে হবে পাহাড়িদের দুঃখ ও বেদনা। স্থানীয়ভাবে এই সৌহার্দ্য বাড়াতে হবে। কেউ যেন ইন্ধন জোগাতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রক্তপাত বন্ধ করাটা দরকার। সম্প্রীতি বজায় না রাখলে সবারই ক্ষতি।’
বরিশাল মেরিন একাডেমি পরিদর্শনে এসে উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন প্রথমে একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে অভিবাদন গ্রহণ করেন। এরপর বৃক্ষরোপণ করেন তিনি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন শেখ হাসিনা সেনানিবাসের জিওসি মেজর জেনারেল আবদুল কাইয়ুম মোল্লা, বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মো. মঞ্জুর মোর্শেদ আলম, বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনসহ স্থানীয় সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।